ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

শুল্ক সুবিধায় আনা ১১১ গাড়ির নিলাম জটিলতায় নয়া উদ্যোগ

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শুল্ক সুবিধায় আনা ১১১ গাড়ির নিলাম জটিলতায় নয়া উদ্যোগ

এম এ রহমান মাসুম : কারনেট ডি পেসেজ সুবিধার অপব্যবহার করে বিদেশ থেকে আনা ১১১টি গাড়ির নিলাম জটিলতার কারণে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারে পড়ে থাকা ১১১টি গাড়ির নিলামের নতুন উদ্যোগে এরইমধ্যে ৪৫টি গাড়ির কাঙ্ক্ষিত দাম মিলেছে। বাকি গাড়িগুলোর কাঙ্ক্ষিত দাম পেতে ইনভেন্ট্রি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রাইজিংবিডিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গত ১১ নভেম্বর সকালে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বোর্ড সভায় ওই জটিলতা নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়। নিলামে তোলা গাড়ির মধ্যে বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, মিতসুবিশি, লেক্সাস, ফোর্ড কার, জাগুয়ার, ল্যান্ড ক্রুজার জিপ ও ল্যান্ড রোভার গাড়ি রয়েছে।

সভা সূত্রে জানা যায়, এনবিআরের সদস্য (শুল্ক রপ্তানি বন্ড ও আইটি) সুলতান মো. ইকবাল সভায় জানান, কারনেট ডি পেসেজ সুবিধায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃক আমদানিকৃত ও অখালাসকৃত গাড়িসমূহ নিলামের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি ১১১টি গাড়ি ইনভেন্ট্রিপূর্বক বিশেষ টেন্ডার (সেল নং-০১/২০১৮) ক্যাটালগভুক্ত করে গত ৩০ মে নিলামের আয়োজন করা হয়। নিলামে মিলেছে কাঙ্ক্ষিত মূল্য।

সভা সূত্রে আরো জানা যায়, উক্ত নিলামে ৪৫টি গাড়ির বিপরীতে সর্বোচ্চ বিডমূল্য পাওয়া যায়। তবে ১টি গাড়ির একক মূল্য ও এইচএস কোড শুল্কায়ন সেকশন-৯(বি) কর্তৃক না পাওয়ায় টেকনিক্যাল কমিটির সভায় তা উপস্থাপন করা হয়নি। অবশিষ্ট ৪৪টি গাড়ির বিষয়টি গত ৫ জুলাই টেকনিক্যাল কমিটি কর্তৃক অনুমোদন হয়নি। পরবর্তীতে উক্ত গাড়িগুলোর মূল্য পুনরায় নির্ধারণের জন্য চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষকের নেতৃত্বে ইনভেন্ট্রি কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে ২৫টি গাড়ির উনভেন্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়। অবিশষ্ট গাড়ির ইনভেন্ট্রি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে এসব গাড়ি কনটেইনারে করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা হয়। পর্যটকদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা নিয়ে এসব গাড়ি এনেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরা। বিএমডব্লিউ, পোরশে, ল্যান্ড ক্রুজার, লেক্সাস, মার্সিডিজের মতো বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১১১টি গাড়ি ভালো দামে বিক্রি করতে এ পর্যন্ত তিনবার নিলামে তুলেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যতই নিলামে তোলা হয়, ততই কমছে এসব গাড়ির দাম। সর্বশেষ গত মাসে ১১১টি গাড়ি তৃতীয়বারের মতো নিলামে তোলা হলেও ৫৬টি গাড়ি কিনতে আগ্রহী কোনো প্রতিষ্ঠানই পায়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর আগের দুই নিলামেও ছিল অভিন্ন চিত্র। দ্বিতীয় নিলামে ১১৩টি গাড়ির মধ্যে ৯৩টি ও প্রথম নিলামে ৮৫টি গাড়ির সর্বোচ্চ মূল্য উঠেছিল। দ্বিতীয় নিলামে যেসব গাড়ির দাম উঠেছিল ২৭ কোটি টাকা, তৃতীয় নিলামে তা নেমেছে ৭ কোটি টাকায়। গাড়িগুলো পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের মধ্যে পড়ে আছে। এসব গাড়ি জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এসব গাড়ির বয়স ১১ থেকে ২৩ বছর।

২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ৮৫টি গাড়ি একসঙ্গে নিলামে তোলা হয়। সেবার ২৬টি গাড়ির আগ্রহী কোনো ক্রেতা ছিল না। অবশিষ্ট ৫৯টি গাড়ি কিনতে সেবার ব্যবসায়ীরা দর দিয়েছিলেন মাত্র ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সেই নিলামে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশিত দাম পেয়েছে মাত্র তিনটি গাড়িতে।

প্রথম নিলামে কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় ২০১৭ সালের আগস্টে আগের ৮৫টিসহ একসঙ্গে ১১৩টি গাড়ি নিলামে তোলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কিন্তু দ্বিতীয় নিলামেও ২০টি গাড়ির জন্য আগ্রহী ক্রেতা পাওয়া যায়নি। অবশিষ্ট ৯৩টি গাড়ির দাম উঠেছে মাত্র ২৭ কোটি টাকা। তাই ২০১৮ সালের মে মাসে একই গাড়ি তোলা হয় তৃতীয় নিলামে। তৃতীয় নিলামে ১১১টি গাড়ির মধ্যে ৫৬টিতে আগ্রহী কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। অবশিষ্ট ৪৫টি গাড়ির দর উঠেছে মাত্র ৭ কোটি ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে নিলামের আগে প্রতিটি গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য (শুল্ক-করসহ গাড়ির সম্ভাব্য দাম) নির্ধারণ করা হয়। যেসব গাড়ি প্রথমবার নিলামে ওঠে, সেগুলোর সর্বোচ্চ নিলাম দর এই সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ বা তদূর্ধ্ব হলে নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যথায়, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার নিলাম ডাকা হয়। নিয়ম মেনে একাধিকবার টেন্ডার ডাকা গেলেও যদি প্রথম টেন্ডারের চেয়ে দ্বিতীয়বার কোনো গাড়ির দাম এক টাকাও বেশি পড়ে, তবে নিলাম কমিটির অনুমোদন নিয়ে তা বিক্রি করে দিতে পারবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তা না করে যদি টেন্ডার ডাকা হয় তৃতীয় দফায়, তবে সেখানে যে দরই পড়ুক না কেন, গাড়ি দিয়ে দিতে হবে সর্বোচ্চ দরদাতাকে।

নিলাম বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই নিলামে অংশ নিতে পারবেন। এজন্য তিনি যে মূল্যে গাড়ি কেনার দর উল্লেখ করবেন, তার ১০ শতাংশ মূল্য কাস্টমস কমিশনার বরাবর পে-অর্ডার করতে হবে। ব্যক্তি হলে আয়কর সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দরপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। প্রতিষ্ঠান হলে ট্রেড লাইসেন্স ও আয়কর বা ভ্যাটের সনদ দিতে হবে।

এর আগে নিলামের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার তপন চন্দ্র দে বলেছিলেন, বাজার যাচাই করে আমরা গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করি। সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ বা তদূর্ধ্ব দর পেলে গাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বিলাসবহুল এসব গাড়ি নিলামে তুলে কাঙ্ক্ষিত দরের কাছাকাছিও পাচ্ছি না। কেন এমনটি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব গাড়ির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবে এনবিআর।

সাধারণত বিদেশি পর্যটকদের জন্য আন্তর্জাতিক পদ্ধতি 'কার নেট দ্য পেসেজ' এর আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় দেশে গাড়ি আনার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে শর্ত থাকে এসব গাড়ি হাতবদল করা যাবে না এবং দেশত্যাগের সাথে গাড়ি ফেরত দিয়ে যেতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ওই সুবিধার অপব্যবহার করে গাড়ি বিক্রি করে দেওয়া হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ডিসেম্বর ২০১৮/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়