ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ফেলানী হত্যার ৮ বছর

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৭ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফেলানী হত্যার ৮ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর: ফেলানী হত্যার ৮ বছর পূর্ণ হলো। কুড়িগ্রাম সীমান্তে  ঘটে যাওয়া এই হত্যা দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হলেও এখনো ন্যায় বিচার পায়নি নিহতের পরিবার।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুচবিহারের চৌধুরীহাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর গুলিতে নিহত হয় কিশোরি ফেলানী খাতুন। ন্যায় বিচারের আশায় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে দুটি রিট পিটিশন দাখিল করে, যা এখনো বিচারাধীন।

এর আগে অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে দু’দফায় বেকসুর খালাস দেয় বিএসএফ’র বিশেষ আদালত। দীর্ঘদিনেও এই হন্তারকের সাজা না হওয়ায় ফেলানীর পরিবারের সাথে দেশবাসীও হতাশ।

এই নির্মম কান্ডের বিচার শুরু হয়েছিল ফেলানী হত্যার আড়াই বছর পর। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট (জিএসএফসি) ফেলানী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দেন। রায়ের খবরে হতাশা প্রকাশ করে ফেলানীর বাবা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, বিএসএফের আদালতে তিনি ন্যায় বিচার পাননি। অমিয় ঘোষের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল।

অন্যদিকে রায়ের পর পরই মুক্তি দেওয়া হয় বিএসএফের অভিযুক্ত কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে। সেই রায় যথার্থ মনে না হওয়ায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিয়েছিলেন বাহিনীর মহাপরিচালক। পুনর্বিবেচনার কাজ শুরু করতে প্রায় এক বছর লেগেছিল। তিনবার পুনর্বিবেচনার কাজ স্থগিতও করা হয়।

জানা যায়, ফেলানী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের মেয়ে। তার বাবা নুরুল ইসলাম প্রায় ১০ বছর ধরে দিল্লিতে ছিলেন। সেখানে বাবার সঙ্গেই থাকতো ফেলানী। দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন ফেলানী। এসময় সীমান্ত অতিক্রমকালে কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে যায় ফেলানীর। এতে ভয়ে চিৎকার দিলে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে লাশ নিয়ে যায়। কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

পরে বাংলাদেশ সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কড়া প্রতিবাদে বিচারের ব্যবস্থা হলেও বেকসুর খালাস পেয়ে যায় গুলিবর্ষণকারী অমিয় ঘোষ। ফেলানীর পরিবারের আপত্তিতে বিএসএফ মহাপরিচালক রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নতুন করে শুনানি শুরু হয়। কিন্তু পুনর্বিচারে একই আদালত তাদের পুরোনো রায় বহাল রাখে। এ মামলায় দুই দফা কোচবিহারে গিয়ে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। ন্যায় বিচারের জন্য আবারও ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেন তিনি।

বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যা মামলার পুনর্বিচারের রায়ে অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করায় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মামলার আইন সহায়তাকারী কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন।

তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরুর দুটি রিট গ্রহণ করে একাধিকবার শুনানীর দিন পিছালেও চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী শুনানীর দিন ধার্য্য করেছে। তার আশা, ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ফেলানী হত্যা মামলায় একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিবে।

অ্যাডভোকেট লিংকন বলেন, ‘আগের দুটি রায় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর ফলে সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে বিএসএফ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। যা সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম সঙ্কট তৈরি করবে। ওই রায়ের মধ্য দিয়ে বিএসএফের মতো একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর একজন সদস্যের অপকর্মের দায় গোটা বাহিনীই নিয়ে নিয়েছে। আর এর দায়ভার রাষ্ট্র হিসাবে ভারতের কাঁধেই বর্তালো।’




রাইজিংবিডি/রংপুর/৭ জানুয়ারি ২০১৯/নজরুল মৃধা/শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়