ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সুন্দরী জেলেকন্যা, রহস্যময় গুহা

উদয় হাকিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৩ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুন্দরী জেলেকন্যা, রহস্যময় গুহা

উদয় হাকিম, ভিয়েতনাম থেকে ফিরে : সুন্দরী এক জেলেকন্যা। তার রূপের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। গরীব ঘরে এমন মেয়ে! যেন ভাঙা ঘরে চাঁদের হাট।

 

কিন্তু ওই মেয়ের ওপর দৃষ্টি পড়ে সর্দারের। সে জোর করে মেয়েটিকে তার উপপত্নী বানাতে চায়। চাপ আসে মেয়ের বাবার ওপর। রূপবতী কন্যা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। সে তার বাবাকে জানায়, তার একজন পছন্দের মানুষ আছে। যে যুবক গভীর সমুদ্রে মাছ ধরে। তারা অপেক্ষা করছে একে অপরের। শিগগিরই তারা বিয়ে করবে।

 

উপকথাগুলোতে সাধারণত যা হয়। রেগে গিয়ে সর্দার ঘোষণা করে, এই সুন্দরীকে নির্বাসনে দাও। এমন জায়গায় তাকে রেখে আসো; যেন সে পৃথিবীর আলো বাতাস দেখতে না পায়। যেমন কথা তেমন কাজ। সমুদ্র ঘেরা পাহাড়ের এক গুহায় তাকে দেয়া হয় নির্বাসন।

 

আলো-বাতাসহীন গুহায় জেলেকন্যার সময় কাটে না। সেখানে নেই কোনো খাবার-পানীয়। তবু সব না পাওয়ার মধ্যেও তার অপেক্ষা কেবল সেই যুবকের। যে তাকে ভালোবেসে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। ভালোবাসার সেই রাজপুত্র আর আসে না। কেবলই অপেক্ষা। কোনো এক ঝড়ো হাওয়া এবং ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাতে মেয়েটি পাথরে পরিণত হয়ে যায়।  কিন্তু পাথর হয়েও তার অপেক্ষার যেন শেষ হয় না। পাথুরে কন্যা গুহার ভেতরে আজো শুয়ে আছে। চুল তার এলোমেলো। পথ চাওয়া উদাস দৃষ্টি সাগরের দিকে। চোখে তার আশা নিরাশার দোলাচল। ঠিক তার বিপরীতে আরেকটি মূর্তি। এটি সেই প্রেমিক জেলে। যে সময়মতো পৌঁছতে পারেনি তার মনের মানুষের কাছে। যুবকটিকে দেখে মনে হয় প্রেমিকার আকুতি শোনার জন্য সে-ও উদগ্রীব।

 

তাদের পরিণতি সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানে না কেউই। হতে পারে রোমিও-জুলিয়েটের মতো হয়তো যুবকও স্বেচ্ছায় পাথরে পরিণত হয়েছে। এজন্য প্রেমিক- প্রেমিকার কাছে এটি একটি পবিত্র গুহা। ভালোবাসার পুণ্যভূমি।

 

হা লং বে

এই পাহাড়ের ভেতরেই বিশাল গুহা। পাহাড়ের নিচে পর্যটকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেভ-এ প্রবেশের

 

এতক্ষণ যে উপকথাটি বলেছি, সেটি একটি গুহার গল্প। গুহাটির নাম ‘ত্রিন নো কেভ’। ভিয়েতনামের হা লং বে’তে যারা বেড়াতে আসেন, তাদের সিংহভাগই এখানে আসেন। ট্যুর প্যাকেজের মধ্যেই এটা থাকে। পয়সা আগেই নেয়া হয় বলে কোনো পর্যটকই এটা মিস করতে চান না।

 

সকাল বেলা। ব্রেকফাস্ট সেরেই আবার ট্রলারে। দূর থেকে দেখছি মাঝারি সাইজের একটা পাহাড়। তার উপরের দিকে পেটের মধ্যে একটা মুখ। পেটকাটা পাহাড়। কাটা জায়গায় চিলেকোঠার মতো বারান্দা। তিন দিকে পাহাড়ে ঘেরা ওই জায়গায় গিয়ে নৌকো থামে। পাহাড়ের নিচে পানির ওপরে জেটি। আমাদের পেছন পেছন আরো তিন চারটে নৌকো এসে থামে। দেখতে দেখতে পুরো নির্জন এলাকা মানুষে সরগরম হয়ে ওঠে। নৌকো থেকে নেমে যাই টিকিট ঘরের সামনে। সাইনবোর্ড দেখার চেষ্টা করি। জায়গাটার নাম কি? গুহাটার নাম কী? এখানে কি আছে? কিছুই জানি না। সাইনবোর্ড ভিয়েতনামের ভাষায়। বোঝার উপায় নেই। একটা জায়গায় ইংরেজিতে লেখা ‘সাং সট কেভ’।

 

হা লং বে

গুহার প্রবেশ পথ

 

এর আগে পাহাড়ের উপর উঠতে গিয়ে ভালোই বেগ পেতে হয়েছে। তাই হাইকিং শুনে ভয় পাচ্ছি। গাইড জানায়, তিনশ সিঁড়ি ভাঙতে হবে। আগেরবার ছিলো চারশ। এই শুনে জাহিদ হাসান বললেন, আমি যাব না। অন্যরা? সবাই যাওয়ার পক্ষে। আমি উনাকে সাহস দেয়ার চেষ্টা করি। উপরের পেটকাটা জায়গাটা দেখিয়ে বলি, ওই পর্যন্ত উঠতে হবে। তার বেশি না। যতই বোঝানোর চেষ্টা করি, উনি যাবেন না। বুড়োরাও উঠে যাচ্ছে, উনি যাবেন না। অবশ্য উনার শরীর খুব একটা ভালো নেই। কেবল জ্বর থেকে উঠেছেন। কি আর করা! উনাকে রেখেই ওঠা শুরু করি।

 

কিছুদূর উঠেই পথ হারিয়ে যায় জঙ্গলে। সিঁড়িগুলো একেবারে খাড়া এবং বিপজ্জনক। তার মাঝে দাঁড়িয়ে নিচের মানুষগুলোর ছবি নিই মোবাইল ফোনে। তারপর হাঁটি। হাঁপাতে হাঁপাতে উঠছি। একটা জায়গায় গিয়ে বিশ্রাম নিই। আবার উঠি। মিল্টন আর ফিরোজ আলম সুজানাদের সঙ্গে। এখানে অবশ্য সুজানাদের অভাব নেই!

 

পাহাড়ের গুহা বলে কিছুটা ভয় পাচ্ছি। এর আগে একবার ভয়ংকর এক গুহায় ঢুকেছি। বছর দশেক আগের কথা। আলুটিলা, বাংলাদেশের অনেকেই জায়গাটি চেনেন। খাগড়াছড়ির এই পাহাড়টি বিখ্যাত এর কেভ বা গুহার জন্য। প্রথম দিকে প্রবল উৎসাহে গিয়েছি। কিন্তু গুহার মুখে গিয়ে আমার পা আর নড়ে না। অসম্ভব! এমন ভয়ংকর গুহার ভেতরে আমি ঢুকতে পারব না! জীবিত ফিরতে পারব না! দম বন্ধ হয়েই মারা যাব! কিন্তু তিন চারজন সঙ্গে যারা ছিলেন তার কেউই আমাকে ছাড়া যাবে না। পড়ে যাই লজ্জ্বায়। ভয়ে দম অনেকটা বন্ধ হয়ে আসছে। কি করব? যা থাকে কপালে। প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাতে মশাল নিয়ে সরু, অন্ধকার সুড়ঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে কাদা, পানি, পিচ্ছিল পাথর। অক্সিজেনও কম। ঘন অন্ধকার। পাহাড় যদি কোনো কারণে নিচে নেমে আসে তাহলেই সব শেষ। পথ আর ফুরোয় না। ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটার পর অপর প্রান্তে আলো দেখে জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দ পেয়েছি। উপরে এসে বোঝার চেষ্টা করেছি কীভাবে সুড়ঙ্গটা হলো। তিন দিকে পাহাড়ের তিনটি মাথা। মাঝখানে নিচু খাদ। জমা হওয়া বৃষ্টির পানি নিচে নামতে গিয়ে সরু কোনো পথ খুঁজে পেয়েছে। সেই পথ ধরে বছরের পর বছর পানি নিচে গড়িয়ে বড় সুড়ঙ্গে পরিণত হয়েছে।

 

হা লং বে

ভেতরের পথ দিয়ে হাঁটছেন পর্যটকরা

 

এবার কোন গুহায় যাচ্ছি কে জানে? তবে এখানে যেহেতু অনেক লোক আছে, ভয়ও কম। দেখা যাক কি হয়। অর্ধেক পথ ওঠার পর ছবি তোলা এবং বিশ্রামের জায়গা আছে। বিশ্রাম কেউ নিচ্ছে না। সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত। তুলি আমিও। উঠতে শুরু করি আবারো। ওঠার সময় অনেক স্পটেই ভিড়। সরু সিঁড়ি। একজনের বেশি যাওয়া যায় না। কিন্তু পর্যটক এখানে প্রচুর। এই সময়টাতেই সাধারণত সবাই ওঠে। একসঙ্গে এতো লোক বলেই এ অবস্থা।

 

গুহায় প্রবেশের শুরুতেই চমকে যাই। চমকে যায় সবাই। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই- এই পাহাড়ের পেটে এতো বিশাল জায়গা! বিরাট গহ্বর। ভেতরে অন্ধকার খুব একটা নেই। আলো-আধারির খেলা। কৃত্রিম আলোয় মোহনীয় হয়ে উঠেছে পুরো গুহা। বড় এই কেভকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একেক ভাগের একেকটা নামও দেয়া হয়েছে। 

 

হা লং বে’তে কতগুলো গুহা আছে কেউ বলতে পারছে না। এখনো অনেক গুহা অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু আছে অল্প পরিচিত। কিছু আছে বিখ্যাত; যেখানে পর্যটকদের প্রায় সবাই যান। এই বে’তে ১৯৬৯ টি দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে সব দ্বীপে হয়তো মানুষের পা-ও পড়ে নি।

 

হা লং বে

সরু পাথুরে পথ বেয়ে একটা থেকে আরেকটা গুহায় যাচ্ছেন পর্যটকরা

 

হা লং বে এলাকার গুহাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সহজগম্য কেভগুলোকে কর্তৃপক্ষ সাজিয়েছে পর্যটকদের জন্য। এগুলো হা লং বে’র কেন্দ্রে অবস্থিত। ট্যুর অপারেটরগণ পর্যটকদের সাজেশন দেন সেখানে প্রাইভেট ক্রুজ নিয়ে একা যেতে। বুঝতেই পারছেন, প্রাইভেটলি যাওয়ার মজা অবশ্যই অনেক; কিন্তু পকেটটাও সেরকম মোটা থাকা চাই। প্রতি বছর ব্যাপক সংখ্যক ভিজিটর এখানে আসেন।

 

শুরুতে যে জেলে কন্যার লাভ স্টোরি বলেছি, সেটি মূলত ‘দি ত্রি নু কেভ’ নামে পরিচিত। ওই জেলেকন্যার সৌজন্যে একে ভার্জিন কেভও বলা হয়। এটি বেইচে বিচ থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। ওই যুগলের ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এখানে তাদের কিছু স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এর ভেতরে গেলে দেখা যাবে পাথরে তৈরি এক যুবতী শুয়ে আছে। তার লম্বা চুল। তাকিয়ে আছে সাগরের দিকে। ঠিক তার বিপরীতে যুবকটি তাকিয়ে আছে প্রেমিকার দিকে। প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে এটি একটি পবিত্র গুহা। কিছুদূর এগোলেই এখানে চোখে পড়ে একটি জলাধার। গাইড জানায়, বছরে ১০ মিলিমিটার পানি জমে এখানে। পানিটা আসে পাহাড়ের উপর থেকে। কিন্তু এর উৎস জানা যায় নি। অবাক বিষয় হচ্ছে, বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই, এরকম একটা পাহাড়ের ভেতরে এতো বিশাল গর্ত বা গুহা।

 

হা লং বে

ভেতরে আলো আধারির খেলা এবং প্রাকৃতিক কারুকার্য

 

এখান থেকে কিছুটা সামনে এগোলেই সাং সট কেভ। এটি হা লং বে’র সবচেয়ে বড় গুহা। সবচেয়ে সুন্দর এবং বিস্ময়করও বলা হয় এটিকে। বলা চলে হা লং বে’র সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এই গুহার ভেতরের অংশ যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি গুহার দেরাজে দাঁড়িয়ে দেখা বাইরের দৃশ্য আরো আকর্ষণীয়। 

 

কেন একে বিস্ময়কর গুহা বলা হচ্ছে? কারণ এর ভেতর দিয়ে হাঁটার রাস্তা মনে হবে ছায়াপথ। আলো আধারির খেলা। নানা রঙের আলো। পাথরগুলো বিচিত্র্ ভঙ্গিতে বসে আছে। একেকটা পাথর যেন একেকটা ইউনিক স্থাপনা। তাতে ফুটে উঠেছে বিচিত্র সব প্রাণী, উপকথা। পাথুরে গাছের ছায়া, সিঁড়িগুলো ছোট ছোট। পাথরের রঙ এবং গঠনে রয়েছে তারতম্য। কোনোটায় মানুষের ছবি। কোনোটাতে স্পষ্ট হয়েছে আকর্ষণীয় কোনো কল্পনা। আছে পশুদের প্রতিকৃতি। রঙ এবং ন্যাচারাল স্কাল্পচারগুলো বিস্ময়কর। যা কল্পনার জগতকেও হার মানায়। আর তাই এর আরেক নাম এ্যামেজিং কেভ।

 

আমাদের গাইড কোথায় দেখতে পাচ্ছি না। পুরো জায়গাটা লোকে গিজ গিজ করছে। এরমধ্যে ছবি তোলার লোকই বেশি। আমার মতো বোকা বোকা দৃষ্টি নিয়েও দেখছে কেউ কেউ। অন্যান্য টিমের সঙ্গেও গাইড আছে। আমাদের গাইডের চেয়ে তাদেরকেই বেশি তৎপর দেখা যায়। তাদের হাতে লেজার লাইট। সেটি দিয়ে আলো ফেলে মূর্তিমান প্রাণী, উপকথা কিংবা মিথ শোনাচ্ছে। দূরের দুটো পাথরের ওপর আলো ফেলে বলছে, কিসিং কক - চুম্বনরত মোরগ।

 
 

হা লং বে

অসংখ্য পর্যটক ঘুরছেন গুহার ভেতরে

 

থিয়েন কাং কেভ এর পরের অংশ। একে বলা হচ্ছে ম্যাজিক্যাল কেভ। একটা অংশ থেকে আরেক অংশে যেতে হয় সরু পাথরের খাঁজ বেয়ে। এখানেও আসতে হয় সরু পথ ধরে। ওই পথ ধরে একজন মাত্র মানুষ যেতে পারে। তবে ওই পাথুরে দেয়াল পার হয়ে এই অংশে আসলেই মনে হবে স্বর্গে উঠে যাচ্ছেন। বাইরে ঘন বন। নিঝুম অরণ্য। স্বাভাবিক পাহাড়। ভেতরে পাথরের তৈরি রাজ প্রাসাদের মতো নিরাপদ স্থান। এই অংশ ১৩০ মিটার লম্বা।

 

এখানে এসে মনে হবে আরেক জগত। কোন দুনিয়ায় এসে পড়েছি! ভুলেই গিয়েছি যে আমি গুহার ভেতরে। বাইরের জগত থেকে দূরে। এ যেন আরেক পৃথিবী। গুলবাগিচার সৌন্দর্য। হ্যাভেনলি ফিলিংস। গ্রেনেড পাথরের কিছু কারুকার্য আছে। কিন্তু এগুলো কোনো কারিগরের তৈরি নয়। কিছু ছবির মতো হয়েছে। সবই ন্যাচারাল, হাত পড়েনি কোনো শিল্পীর। প্রকৃতির চেয়ে বড় শিল্পী আর কে? মনে হচ্ছে রূপকথার কোনো রাজ্যে এসে গেছি। সে রাজ্যের রাজা আমি নিজেই। গুহার দেয়ালে গ্রানাইট পাথরের কারুকার্য। যেন কোনো আর্ট  মিউজিয়াম। মানুষের পারিপার্শ্বিক জীবনের সঙ্গে সেগুলো মিলে গেছে। হাটলে এমন অনুভূতি হচ্ছে, যা আগে কখনো হয় নি। যেন এটা পৃথিবী নয়। অন্য কোনো গ্রহ। এখানে এমন সব প্রাকৃতিক কারুকার্য আছে, যা মানুষের কল্পনাকেও হার মানায়।

 

ঠিক এর পরেই লুঅন কেভ। বন্যগুহার সবচেয়ে নিচের অংশ। যাকে বলা হয় স্টোন ক্লিফ - ট্যুরিস্টদের মনে হবে তারা স্বর্গের মধ্য দিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে। অবাক করা সৌন্দর্য গুহার ভেতরে। এখানে পদ্ম, হাতির বাচ্চার প্রতিকৃতি আছে। আছে অনেক কিছুই। এতসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সময় কই। শুধু মনে হচ্ছে এ এক স্বপ্নীল জগৎ। কল্পলোকের প্রাসাদ। বিশ্ব ঐতিহ্যিক স্থানের মাঝখানে এই কেভ। বন্য এবং ঐন্দ্রজালিক সৌন্দর্য এখানে। এজন্যই ট্যুরিস্টদের এখানে নিয়ে আসা হয়। এই উপসাগরের ভূতাত্ত্বিক স্বাতন্ত্র্য বোঝা যায় এখানে এসে। রয়েছে আরামদায়ক জলন্ত মোমবাতির সামনে ডিনারের ব্যবস্থা। 

 হা লং বে

গুহার ভেতরে দীর্ঘ পথ ধরে হাঁটছেন পর্যটকরা

 

শেষ অংশেকে বলা হয় প্যারাডাইজ। এই অংশটি অনেক লম্বা। হাঁটতে হয় অনেক পথ। অনেকটা খাইবার গিরিপথের মতো। এই অংশের নাম ‘বো নাউ কেভ’। এই গুহাটি ২০০ বর্গ মিটার আয়তনের। এটাকে বলা হচ্ছে পেলিক্যান কেভ। এর ভেতরের শেপ অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। গ্রানাইট পাথরের সংখ্যা এখানে বেশি। অনেকটা আগ্নেয়গিরির লাভা শক্ত হয়ে যেরকম পাথর হয় সেরকমই; কিন্তু ওই পাথরের ক্যানভাসে নানা ধরনের প্রাণীর প্রতিকৃতি ফুটে উঠেছে। এর প্রবেশপথে তিনটি বড় পাথর। সেখানে তিনটি পরীর প্রতিকৃতি। তারা একে অপরের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করছে। দুজনকে দেখা যাচ্ছে দাবা খেলতে। সেখানে রেফারির মতো আরেকজনের উপস্থিতি আছে। এই জায়গাটা অপেক্ষাকৃত শীতল। উপরের ঠাণ্ডা বাতাস এখানে আসতে পারে। সমুদ্রের উপর দিয়ে ভেসে আসা বাতাস আর জলের কলকল ধ্বনি এখান থেকে শোনা যায়।

 

সবচেয়ে উঁচু অংশে এসে গেছি। বাইরের আলো দেখা যাচ্ছে। কয়েকটা সিঁড়ি ভাঙলেই শেষ। কিন্তু মিল্টন আহমেদ আর ফিরোজ আলম কই? এখানকার কিছু স্মৃতি নিয়ে যাব না? কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তাদের পাই। কিছু ছবি তুলি। সবাই একসাথে গিয়ে দাঁড়াই সবচেয়ে উঁচু করিডোরে। যেখান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায় হা লং বে’র সৌন্দর্য। নিচের নৌকা, নীল-সবুজের পানি, আর পাহাড়ের অপরূপ সহাবস্থান দেখে মুগ্ধ হই। নিচে নামার পথ মিশেছে পাহাড়ের অন্য পাশে। আমাদের নৌকো গিয়ে সেখানে বসে আছে আগেই।

 

এন্ট্রি পয়েন্টে পানির ওপর ভাসমান জেটিতে দাঁড়িয়ে জাহিদ হাসান। তাকে তুলে নিতে নৌকো আবার সেখানে যায়। এবার তাকে বলি, ভীষণ মিস করেছেন। যাওয়া উচিত ছিলো।

 

এই লেখকের আরো কয়েকটি জনপ্রিয় লেখা

 

*  
*  
*  
*

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ নভেম্বর ২০১৬/অগাস্টিন সুজন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়