ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

স্বপ্নের বাগানে এক সন্ধ্যা

শান্তা মারিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ১৭ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বপ্নের বাগানে এক সন্ধ্যা

(লক্ষ্মণরেখার বাইরে-২১)
শান্তা মারিয়া : শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় কিভাবে তা নিয়ে চলছে ওয়ার্কশপ। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার তালিম পাচ্ছি নেটজ বাংলাদেশের কর্মশালা থেকে। সারাদিন মাথা ঘামানোর পর একটু রিল্যাক্স দরকার। তখন হাবীব মুনীরভাই আমাদের দল নিয়ে গেলেন স্বপ্নের বাগানে। জায়গাটা থামেল থেকে খুবই কাছে। রীতিমতো হেঁটেই যাওয়া যায়। দরবার স্কোয়ারের খুব কাছে। দ্য গার্ডেন অব ড্রিমস বা গার্ডেন অব সিক্স সিজনস নামে পরিচিত এই বাগান সত্যিই স্বপ্নের মতো সুন্দর।

বাগানটি নির্মিত হয়েছে ১৯২০ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন ফিল্ড মার্শাল কায়সার শমসের রানা। থামেলে টুরিস্ট এলাকায় ঢোকার মুখেই রয়েল প্যালেসের কাছে কায়সার মহলে এই বাগান। রাজপরিবারের সদস্য কায়সার শমসের রানা পুরোপুরি ইউরোপীয় ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে এই বাগান বানিয়েছিলেন। আগে এটা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মধ্যে থাকলেও এখন নেপাল সরকার এর দেখভাল করে। দীর্ঘদিন এই বাগান অযত্নে অবহেলায় পড়ে ছিল। এখনও পুরো বাগানের মাত্র অর্ধেকটা দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এই অংশটার নিয়ম করে যত্ন-আত্তি করা হয়। ৬৮৯৫ বর্গমিটার জুড়ে এই বাগান। এখানে রয়েছে ছয়টি প্যাভিলিয়ন, একটি মিউজিয়াম, পুকুর, ছোট ছোট জলাশয়, অ্যাম্ফিথিয়েটার। ফুলের বাগান রয়েছে, তাতে নানা প্রজাতির ফুল আর লতাগুল্ম। আরও আছে একটি বড় রেস্টুরেন্ট আর বার। এগুলো বাগানের মধ্যে ভিলার ভিতর স্থাপিত।



টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতে হয়। আমরা যখন গেলাম তখন পড়ন্ত বিকেল। রোদ হালকা হয়ে গেছে, ছায়া দীর্ঘতর হচ্ছে। মাঝে মাঝেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। তাই রোদবৃষ্টির খেলা চলছে ভালোই। বাগানের মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকে ভীষণ ভালো লাগলো এর নান্দনিকতা ও স্নিগ্ধতা দেখে। ফুলের কেয়ারি। বড় বড় গাছ। পাথরের বসার জায়গা আর ভাস্কর্য মিলিয়ে খুবই নিরিবিলি আর দৃষ্টিনন্দন জায়গা। ছাদ বাগানও আছে। আছে ফুলে ভরা ছোট ছোট জলাশয়। বিকেল পড়ে আসার সাথে সাথে বাগানের স্নিগ্ধতা বাড়ছিল। তবে সত্যিকারভাবে মুগ্ধ হলাম সন্ধ্যা নামার পর। সত্যিই এটা ড্রিম গার্ডেন। রাতে এর সৌন্দর্য যেন আরও ভালোভাবে ফুটে ওঠে। বিশেষ করে সেদিনটি ছিল চাঁদনিরাত। পূর্ণিমা কি না জানি না তবে চাঁদ বেশ গোলাকার। চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়ার পর অদ্ভুত আলোআঁধারি সৃষ্টি হলো বাগানের সর্বত্র। সেইসঙ্গে নাম না জানা ফুলের সৌরভ ভেসে আসছিল।

বাগানের এখানে ওখানে ফুলের বেদীর পাশে পাথরের তেরি বসার বেঞ্চ। শ্বেত পাথর আর কাঠের কারুকার্যময় প্যাভিলিয়নে বসার ব্যবস্থা। সত্যিই স্বপ্নময় পরিবেশ। জলাশয়গুলোর উপর ছোট ছোট সাঁকো। বড় একটি প্রাসাদের সানে দুটি সিংহের ভাস্কর্য।



মিউজিয়ামটির ভিতরে রয়েছে রাজপরিবারের মানুষজনের ছবি, বাগানটির ইতিহাস আর একদিকে লাইব্রেরি। সেখানে বাগান বিষয়ক বইপত্র রয়েছে। এই বাগানে বেশ কিছু দুর্লভ প্রজাতির গাছ আছে বলেও জানতে পারলাম। ড্রিম গার্ডেন নাম কেন- ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। বাগানজুড়ে বিভিন্ন ভাস্কর্য, শ্বেত পাথরের প্যাভিলিয়ন, বসার আসন, কারুকার্য সবকিছুর মধ্যেই কেমন যেন একটা স্বপ্ন স্বপ্ন ভাব রয়েছে। এই বাগানের নকশা করেছিলেন স্থপতি কিশোর নরসিংহ। এই স্থপতিই শমসেরের বাবা মহারাজার সিংহ দরবারের নকশা করেছিলেন।

বাগানের মাঝখানে একটি সাদা প্রাসাদ। বর্তমানে এই প্রাসাদে রয়েছে রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টটির অঙ্গসজ্জাও প্রাসাদের অনুরূপ। পুরোটাই ঊনবিংশ শতকের ইউরোপীয় অভিজাত পরিবারের বাসভবনের অনুরূপ। বাগানটিও ইউরোপীয় বিলাসী ঘরানায় তৈরি। মনে হচ্ছিল যেন নেপালে নেই, ঊনবিংশ শতকের ইউরোপে চলে এসেছি। এই বাগান অনেকদিন পতিত থাকার পর ২০০০ সালে আবার নতুন করে সাজানো হয়। অস্ট্রেলিয়ার সরকার এ বিষয়ে নেপাল সরকারকে সহযোগিতা করেছে। রেস্টুরেন্টটিতে খাবার ইচ্ছা ছিল। অন্তত এক কাপ কফি খাওয়া চলতে পারে একথা ভেবে ভিতরে ঢুকে মেনুকার্ড হাতে নিলাম। ওরে বাবা! এক কাপ কফি ৪০০-৫০০ রুপি। দরকার নেই বলে বেরিয়ে এলাম।  



আমরা যখন বাগান থেকে চলে আসছিলাম তখন হাস্নাহেনা ফুলের সৌরভ বাগানে ছড়িয়ে পড়েছে। আকাশে বৃষ্টিভেজা চাঁদ। স্বপ্নের বাগান থেকে বেরিয়ে কাঠমান্ডুর ব্যস্ত সড়কে পা রাখলাম সদলবলে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুলাই ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়