ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আনন্দ মনে নেপালে || শেষ পর্ব

ইমরান মাহফুজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ২৬ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আনন্দ মনে নেপালে || শেষ পর্ব

ইমরান মাহফুজ : কবি জামসেদ ওয়াজেদসহ চলে এলাম দরবার স্কয়ারে। নেপালের বিখ্যাত স্থান এটি। এখানকার তিনটি দরবার চত্বরের মধ্যে অন্যতম। এই জনপ্রিয় চত্বরে, এই অঞ্চলের শাসনকারী শাহ এবং মল্ল রাজাদের প্রাসাদ রয়েছে। কাঠমান্ডু দরবার চত্বরটি হনুমান ধোকা প্রাসাদ ভবনেরও একটি স্থল। এটি ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত নেপালের রাজাদের রাজকীয় বাসভবন ছিল। গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো এখানে অনুষ্ঠিত হতো এবং সেই ঐতিহ্য আজও চলে আসছে। বিরাজমান সংস্কৃতিতে কিছুটা ভারতের কালচার প্রবেশ করলেও মূল নেপালী কালচার প্রশ্নের জন্ম দেয়।

প্রাসাদটির সমগ্র কাঠামো বিস্তীর্ণভাবে কাঠের খোদাইকাযের্র সঙ্গে খুব সুন্দরভাবে সুসজ্জিত। সেইসঙ্গে এখানে সুশোভিত প্যানেল ও জানালা রয়েছে। প্রাসাদটি মহেন্দ্র মিউজিয়াম ও রাজা ত্রিভুবন মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের সমন্বয়ে গঠিত। ভ্রমণার্থীরা এই প্রাসাদের অভ্যন্তরে অবস্থিত রাষ্ট্র কক্ষগুলিও পরিদর্শন করার সুযোগ পাবেন।

কাঠমান্ডু দরবার চত্বরের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত কুমারী চৌক হল একটি জনপ্রিয় স্থান। এটি নেপালের এক অন্যতম রহস্যময় আকর্ষণ বলে মনে করা হয়। এখানে একটি পিছল পিঞ্জর রয়েছে যেটিতে প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন ঐতিহ্যগত চর্চার মনোনয়নের মাধ্যমে একজন যুবতী মেয়েকে রাখা হতো। মেয়েটিকে, জনপ্রিয় হিন্দু মাতৃ দেবী, দেবী দূর্গার মনুষ্য অবতার বলে মনে করা হতো। ধর্মীয় উৎসবের সময় পূজা করা হতো। এখানে অবস্থিত বিভিন্ন প্রাসাদ ও মন্দিরগুলো বেশ কয়েকবার পুনরায় সংস্কার করা হয়েছে, যেহেতু তাদের মধ্যে অনেকগুলি অবহেলার দরুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেগুলোর কাজ দ্রুত করছে এমনটাই দেখতে পেলাম।

ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ থামেল : ১৮ এপ্রিল  নেপালের কথাসাহিত্যিক কুমার শ্রেষ্ঠার থার্ড আই থিয়েটারের আমন্ত্রণে থামেলে আসি। কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্র বলা হয় থামেলকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক স্থাপনা ছাড়াও আধুনিকতার ছোঁয়া তো আছেই। ঘুরে ঘুরে আমি আর জামসেদ দেখলাম- রয়েছে স্বল্পমূল্যের হোটেল, রেস্টহাউস ও পানশালা। থামেল অনেকটা বাংলার চকবাজারের মতো। এখানে প্রয়োজনীয় সব জিনিসই কেনাকাটা করার সুযোগ রয়েছে।এই এলাকার অধিকাংশ হোটেল-রেস্টুরেন্ট চীনা পর্যটকদের পদচারণায় মুখর।

এই বাজারে পুরুষ বিক্রেতার চেয়ে নারী বিক্রেতার সংখ্যা বেশি। প্রায় দোকান মালিকের বাড়ি ভারতে আর কর্মচারী নেপালী। এই ভাবে ভারতের আশ্রয়ে নেপাল! এ বাজার থেকে হেঁটে আসি নারায়ণসিটি প্যালেস জাদুঘরে। থামেল থেকে দশ মিনিটের মতো হাঁটা পথ হবে। মূলত এ জাদুঘর একসময় নেপালের রাজপ্রাসাদ ছিল। ১৯৬১ সালে রাজা মহেন্দ্র বিশাল এ রাজপ্রাসাদ সংস্কার করেন। নেপালের রাজকীয় সব কাজ, রাজপরিবারের আবাসন, অতিথিদের আবাসন সবই ছিল এ প্রাসাদে। প্রাসাদের দেয়ালে রাজপরিবারের বিভিন্ন সদস্যের ছবি, বিভিন্ন কক্ষে তাদের ব্যবহার করা জিনিসপত্র, চেয়ার-টেবিল, খাট-আলমিরা সাজানো আছে এখানে। সাথে আছে রেশমি কাপড়, গরম কাপড়, পর্বতারোহণের সরঞ্জাম, অ্যান্টিক, চিত্রকর্ম, ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুরিস্ট-স্যুভেনির বা পর্যটন-স্মারক দোকান। কথা বলে জানলাম, সন্ধ্যার পর এখানকার নাইট ক্লাবগুলো পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। প্রায় সবাই নেপালের জনপ্রিয় মুমোমুমো খেতে ভুল করে না। সেই স্বাদ আমরাও নিলাম। সেই সাথে কিছু কেনাকাটা সেরে নিলাম।

 



কিছু দোকানে ঢুকে আমরা জিনিসপত্র দেখি। কাঁসা-পিতলের বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি, বুদ্ধমূর্তি, গান-বাজনার নানা সরঞ্জাম, চিত্রকর্ম, কাঠের মুখোশ, নেপালের ঐতিহ্যবাহী খুরপি (এক ধরনের ছুরি), পুঁতির মালাসহ বিভিন্ন গহনা, ট্যাপেস্ট্রি, নেপালের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থাপনা ও স্থানের ছবি সংবলিত বিভিন্ন স্মারক, ক্যালেন্ডার, শুভেচ্ছা কার্ডসহ পর্যটনের নানা স্মারক পণ্য দিয়ে সাজানো দোকানগুলো। এসব পণ্য কেনার জন্য দোকানগুলোয় পর্যটকের বেশ ভিড় লেগেই থাকে।

পর্যটকদের  পদচারণা দেখে ভালো লাগছে। আহারে আমাদের কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা, সুন্দরবন বা অন্য দর্শনীয়  স্থানগুলোয় ট্যুরিস্ট শপ বা পর্যটন-স্মারকের কোনো দোকান নেই। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের মতো জায়গাতেও পর্যটন-স্মারকের দোকান খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। কিন্তু ছোট্ট এ থামেল শহরে পর্যটন-স্মারকের অসংখ্য দোকান। অথবা বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ, সুন্দরবনসহ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার আমাদের দেশে কম নেই। এমন ভাবনার বাস্তবায়ন কী হবে?

কায়সার লাইব্রেরিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ : ২১ এপ্রিল আসার আগের দিন থামেল হয়ে কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কায়সার লাইব্রেরির আঙ্গিনায় গিয়েছিলাম। ভিতরে প্রবেশ করতে পারিনি। কারণ প্রবেশ নিষিদ্ধ! এই সময়ে কোনো লাইব্রেরিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ, ব্যাপারটা ভালো ঠেকায় না। জানা যায়, কায়সার লাইব্রেরিতে কদিন আগেও বিদ্যার্থী আর দর্শনার্থীতে গমগম করত। বিদ্যার্থীদের আনাগোনা ছিল সেখানকার অমূল্য সংগ্রহের কারণে। আর দর্শনার্থীদের আগমন ছিল পুরো স্থাপনা আর সেখানকার বিশাল সংগ্রহের পুরাতাত্ত্বিক মূল্য ও সৌন্দর্যের কারণে। কিন্তু এখন সবই ধুলায় লুটাচ্ছে। যে ধ্বংসাবশেষটুকু দাঁড়িয়ে আছে, সেটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ১২০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক কায়সার লাইব্রেরি ভবনটি এখন সত্যিই ইতিহাস।  এমন একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার পেছনে নেপালের রানা রাজবংশের এক উত্তরাধিকারী কায়সার শমশেরের অবদান রয়েছে। ১৯০৮ সালে ইংল্যান্ড ভ্রমণে গিয়ে তিনি সেখানকার রাজভবন আর এর গ্রন্থাগারগুলোর প্রেমে পড়ে যান। দেশে ফিরে তিনি নিজ বাসভবনে গড়ে তোলেন গ্রন্থাগার। সেটিই আজকের কায়সার লাইব্রেরি। ২৮ হাজার বইয়ের সংগ্রহ আছে এখানে। এসবের মধ্যে বৌদ্ধমত, তান্ত্রিকতা আর জ্যোতিষশাস্ত্রের দুর্লভ বই, প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, এমনকি তালপাতায় লেখা পাণ্ডুলিপিও আছে। আছে এক হাজার ১০০ বছরের পুরনো শুশ্রূতসংহিতা। প্রাচীন সংস্কৃত আয়ুর্বেদ-সংক্রান্ত এই সংগ্রহটি ইউনেসকোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারের তালিকাভুক্ত।

একসময় এখানে যাতায়াত করতো এমন একজন বইপ্রেমীর কাছ থেকে জানলাম, গ্রন্থাগার বলে সেখানে কেবল বইয়ের সমাহার তেমনটা কিন্তু নয়। সেখানে শিকার করা বিভিন্ন পশুর চামড়া আর মাথা, প্রাচীন মূর্তির সংগ্রহও দেখার মতো। ভবনের নির্মাণশৈলীও প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য ধারণ করে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ভূমিকম্প ধূলিসাৎ করে দিয়েছে সবটা। এখনো যে অবশিষ্টাংশ দাঁড়িয়ে আছে তাতে নিরাপত্তার কথা ভেবে গ্রন্থাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ব্যর্থ হয়ে আঙ্গিনা দেখেই কেটে পড়লাম আমি আর কবি।

 



সাহিত্য-সংস্কৃতি : সাহিত্য এমন একটি মাধ্যম যা সকলকে একত্রিত করতে পারে, করতে পারে ভাষা থেকে ভাষান্তর। আমরা যাওয়ার আগ থেকেই পরিকল্পনা ছিলো নেপালের বহুভাষিক সমাজব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। আমরা জানি নেপালের প্রচুর সংস্কৃতিবান মানুষ লেখালেখি করছেন। বিশেষ করে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর থেকে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির সামগ্রিক চালচিত্র বোঝা সম্ভব হবে। তাছাড়া সাহিত্যে সময়ের চিত্র আসে। আসে পৃথিবীর সমস্যা, সম্ভাবনা, সেই সাথে বাংলাদেশ, নেপাল বাদ কেন? আমরা জানতে চাই, জানাতে চাই, মনে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে নেপাল আমাদের বন্ধুপ্রতীম হয়ে সমর্থন জানিয়েছে, তাছাড়া নেপালের জনগণ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর জাতীয় পুনর্গঠন ও ত্রাণ কার্যক্রমে বাংলাদেশকে পাশে পেয়ে চিরকৃতজ্ঞ বলে জানিয়েছে নেপাল একাডেমির চ্যান্সেলর মি. গঙ্গাপ্রসাদ উপ্রেতি, বাংলা একাডেমি ও নেপাল একাডেমির মধ্যে স্মারক সই অনুষ্ঠানে ২০১৬ সালে। সাথে ছিলেন নেপাল একাডেমির সদস্য অধ্যাপক জগৎ প্রসাদ উপাধ্যায়, সীতারাম বধুথকি, যতদূর জানি, ১৯৫৭ সালে নেপাল সাহিত্য একাডেমির যাত্রা, তাদের কার্যক্রম আশার কথা মনে করিয়ে দেয়।

১৯৬০-এর দশকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বিপুল বৈচিত্র্য ও প্রাণসম্পদের মধ্যে নেপালী সাহিত্যের বিকাশ শুরু হয়। পাহাড়-পর্বত-উপত্যকা সমৃদ্ধ হিমালয় কন্যা, গৌতম বুদ্ধের দেশ নেপালের সাহিত্য দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব সাহিত্যের দরবারে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেনি। দেশীয় গল্প-গাঁথা এখনো মৌখিক কিংবদন্তি নির্ভর। তবে এর কিছু কিছু সাম্প্রতিককালে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। পাশাপাশি নেপালী লেখকদের অনেকেই এখন ইংরেজিতে লিখছেন। ফলে আগের চেয়ে অধিকসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে নেপালী সাহিত্য। বিশ্ব সাহিত্যের আঙ্গিনায় নিজেদের উপস্থিতি নেপালী লেখকদের এ প্রয়াস ক্রমেই বেগবান হচ্ছে। ইতোমধ্যে পড়েছি, লোকনাথ পাউদাল ও বালক কৃষ্ণের কবিতা। তাঁর কবিতার বাংলায় এমন: যে মানুষকে মানুষ ভাবে/ সে হলো শ্রেষ্ঠ মানুষ, আর মানুষই যে তার ভগবানকে দেখতে পায়, সে আসলে নিজেই ভগবান। কি মারত্মক কথা! ভাবনায় দোল খায়।

নেপালের জাতীয় কবি মাধব প্রসাদ গিমরী। সম্রাট উপাধ্যায়ের ‘অ্যারেস্টিং গড ইন কাঠমাণ্ডু’, ‘ইয়ুৎসু শর্মার অন্নপূর্ণা পোয়েমস, মঞ্জুশ্রী থাপার ‘দি লাইভস উই হ্যান্ড লস্ট’, লিল বাহাদুর ছেত্রীর ‘মাউন্টেইনস পেইন্টেড উইথ টারমারিক’, লক্ষ্মী প্রসাদ দেবকোটার ‘মুনা মদন’ (তার লেখা আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের মতো) ও কুমার শ্রেষ্ঠার ‘লোনলি হার্ট’। আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির আকুলতায় কথাসাহিত্যিক কুমার শ্রেষ্ঠা এক সময় প্রস্তাব দেয় নেপাল-বাংলাদেশ লিটারেরি সোসাইটি গঠনের। এতে দুই দেশেরই সংস্কৃতি বিনিময় ঘটবে। দৃঢ় হবে সাহিত্যবন্ধন। এমন ভাবনায় সায় দিয়ে মিটিংয়ে বসি আমি, বাংলাদেশের কবি ও সম্পাদক জামসেদ ওয়াজেদ ও কবি আশিক রেজা। প্রস্তুতিমূলক এই সভায়, নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. শ্রীধর গৌতম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওই দেশের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্য পত্রিকা ‘মধুপার্ক’-এর সম্পাদক শ্রীওম শ্রেষ্ঠা ওরফে রোদন, বিশিষ্ট কবি সুনিতা শর্মা, গল্পকার কুমার শ্রেষ্ঠা, কবি ছবি রমন শিলওয়াল। অনুষ্ঠানে অতিথিরা নেপাল-বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। বিশেষভাবে পারস্পরিক ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক নৈকট্য বিবেচনায় সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতম সহযোগিতার উপযোগিতা ও সম্ভাবনা রয়েছে।

বিদায় হিমালয় কন্যা : গত ৮দিন ভাই-ভাবীর আদরে একেবারে আটখানা। আসতে কষ্ট হচ্ছিল এক রকম। আহা মায়া!

আমার ফ্লাইট ছিল ২১ এপ্রিল বেলা ১১ টায়। আকাশের মন খারাপে ৩ টায় উড়াল দেই। বাকি সময় গুগল মামার সাথে কাটালাম। আর তিনি জানালেন- গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান ছাড়াও হিন্দুদের বেশ কয়েকটি পবিত্র স্থান পড়েছে নেপালের ভেতরে। হাজার বছর ধরে দুনিয়ার মানুষকে অভিভূত করে রেখেছে হিমালয়। হিমালয় হলো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বতমালা। হিমালয় পর্বত থেকে নেমে আসা নদীগুলো বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে নয়তো ভারত মহাসাগরে গিয়ে মিলিত হয়েছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ নদীর পানিই আসে হিমালয় পর্বতমালার বরফ গলে।

 



সমগ্র পৃথিবী থেকে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক এখানে ভিড় জমায়। ১৯৫৩ সালে এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে এভারেস্ট জয়ের পর এ যাবত প্রায় ৩ হাজার আরোহী এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেছেন। নেপাল এবং চীনে দাঁড়িয়ে থাকা হিমালয়ের মাউন্ট এভারেস্ট চূড়ার উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফুট। নেপাল সরকার আশা করছে, ৫ বছর পর তাদের পর্যটন রাজস্ব ৫০ কোটি ডলারে পৌঁছুবে। মৌসুমী জলবায়ুর এই ছবির মতো সুন্দর এই দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বরে প্রচুর বৃষ্টি হয়ে থাকে, বাকি সময়টা সাধারণত থাকে শুষ্ক। অক্টোবর-নভেম্বরে নেপালের শুষ্ক মৌসুম এবং বছরের সেরা সময়।

সবার জন্য বলা যায়, নেপাল এমন একটি দেশ যেখানে আপনি একসাথে পাবেন ছুটি উপভোগের সবকিছু। ইচ্ছে মতো চুটিয়ে উপভোগ করা যায় একান্তে নিভৃতে আপনার নিজস্ব স্বকীয়তায়। বিলাসী প্রাণ জুড়ানো সবুজের হাতছানি মুগ্ধ করবে প্রাচীন কোনো হ্রদ কিংবা জলপ্রপাতের কলকল ধ্বনির সাথে। ছুঁয়ে যাবে ঐতিহাসিক মন্দিরের পবিত্রতা। মন্দির, সারি সারি সবুজ ভ্যালি, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র পাহাড় কিংবা তাদের রাজপ্রসাদসমূহ সব কিছুতেই মুগ্ধতা এ যেন পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ। নিরাপত্তা, পানাহার আর আধুনিক পরিবেশ করতে পারলে নেপালকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে বাংলাদেশ। (শেষ)



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ আগস্ট ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়