ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এক জেলায় পাঁচ সাগর

প্রকাশিত: ১১:৫২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক জেলায় পাঁচ সাগর

মোস্তাফিজুর রহমান: উত্তর বঙ্গের অন্যতম জেলা দিনাজপুর। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিক্ষায় অনেকটা এগিয়ে। বাংলাদেশের পর্যটনের বিশেষ কিছু আকর্ষণ আছে এই জেলায়। আছে রাজার আমল থেকে চলে আসা পাঁচটি ঐতিহ্যবাহী দিঘি। যেগুলো মূলত ‘সাগর’ নামে পরিচিত। শহরের অল্প দূরে অবস্থিত এই সাগর দেখতে অনেকে আসেন। দিঘিগুলো যথাক্রমে রামসাগর, সুখসাগর, মাতাসাগর, আনন্দ সাগর ও জুলুম সাগর।

রামসাগর: বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম দিঘি রামসাগর। সাগর নয় তবুও গভীরতা আর বিশালতার কারণে ‘সাগর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। রাজা রামনাথ এলাকার কৃষকদের চাষাবাদের লক্ষে এই দিঘি খনন করেছিল। প্রচলিত আছে এই দিঘি খননের পরেও পানি ছিল না। পরে রাজা স্বপ্নে দেখেন নিজ পুত্রকে বলি দিলে পানি উঠবে। কৃষকদের জন্য রাজা পুত্র রামকে বলি দেন। তারপর থেকেই দিঘির নাম রামসাগর। অনেকে বলেন এটা একটা দিঘি নয়, অনেকগুলো দিঘির ফলে এমন বড় দিঘি তৈরি হয়েছে।



সাগরের পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল ও কাঠের গাছ ও মনোরম পরিবেশের জন্য বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে একটি চিড়িয়াখানা রয়েছে। সেখানে অজগর, হরিণ, বানর, পাখিসহ বেশ কিছু প্রাণির সংগ্রহ নিয়ে চিড়িয়াখানাটি বেশ সুন্দর। দিনাজপুর জেলার সদর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে রামসাগরের অবস্থান। এর দৈর্ঘ্য ১০৩১ মিটার, প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা ১৩.৫০ মিটার। ইতিহাসবিদদের মতে, দিঘিটি খনন করতে তৎকালীন প্রায় ৩০ হাজার টাকা এবং ১৫ লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল। রাজা রামনাথের আমলে পলাশী যুদ্ধের আগে (১৭৫০-১৭৫৫) এই দিঘি খনন করা হয়।



সুখসাগর: দিনাজপুর শহরে রাজবাড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে এটি অবস্থিত।   চারদিকে শাল ও আকাশমণি বাগান আর দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ,  যেন শহরের ব্যস্তময় জীবনে একটু শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেয়। স্বচ্ছ জলরাশি, দিঘিতে মাছের সাঁতার কাটা ও লাফালাফি এই সাগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। নৌকা ও স্পিড বোটে চড়ে সাগরে ভ্রমণের কিছুটা স্বাদও নেয়ার সুযোগ আছে এখানে। সাগরের পাড় যেন ছোট একটা পাহাড়ের মত। শীতকালের মূল আকর্ষণ অতিথি পাখি। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও অতিথি পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত ছিল পরিবেশ। সুখসাগর দিনাজপুরের মানুষসহ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ হচ্ছে। 

মাতাসাগর: একই রাজা রামনাথের সময়ে খনন করা হয়েছে মাতাসাগর। সুখসাগর থেকে উত্তরে এই দিঘির অবস্থান। দিনাজপুরের সদর উপজেলায় ৪৫.৬০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সাগর পাড়ের উচ্চতা কম কিন্তু বিস্তৃতি অনেক বেশি। মাতাসাগরের নৈসর্গিক পরিবেশ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। সূর্যদয় এবং সূর্যাস্তের সময় মাতাসাগরের পানিতে সূর্যের লাল আলো দর্শকের মন কাড়ে।



আনন্দ সাগর: কথিত আছে, রাজা রামনাথ রানিকে নিয়ে সোনার নৌকায় রাজবাড়ি থেকে পানিপথে নৌবিহারে এই দিঘিতে আসতেন। এ জন্যই এর নাম হয়েছে আনন্দ সাগর। আনন্দ সাগরের সাথে সুখ সাগরের সংযোগ ছিল একটা নালার মাধ্যমে। সরেজমিনে দেখা যায়, নালা আগের মতই আছে। তবে নালার পাশে বাড়িঘর করাতে নালা অনেকটা বন্ধের পথে। আগে নালাটি আনন্দ সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এখন সাগরের নালার সাথে সংযোগ বিছিন্ন। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের উত্তরে এর অবস্থান। ৭ একর আয়তনের এই দিঘির গভীরতা তুলনামূলক কম। আনন্দ সাগরের মৎসচাষী মো. বাবলু মিয়া বলেন, এখানে কোনো সংস্কার করা হচ্ছে না, পাড়গুলো ধসে যাচ্ছে। অনেক গাছ ছিল এখন নেই। দলিলে মূল রাস্তা থাকলেও আনন্দ সাগরে যাওয়ার রাস্তা বেদখল হয়ে আছে। ড্রেনের সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হলে এই আনন্দ সাগর অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে বলে এলাকাবাসীর অভিমত।

জুলুম সাগর: ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী সাধারণ মানুষকে এই দিঘিতে অত্যাচার করত বলে নাম হয়েছে জুলুম সাগর। দিনাজপুর সার্কিট হাউসসংলগ্ন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের বিনোদন কেন্দ্র কৃষ্ণকলির নিচে এই সাগরের অবস্থান। প্রায় ৮৪৩ শতক আয়তনের সাগরটি দিনাজপুরের মানুষের প্রিয়।



হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিস অনুষদের ছাত্রী জয়তুন নেশা বলেন, অনেক দিন দেখেছি তবুও এর নাম যে ‘জুলুম সাগর’ জানতাম না। সন্ধ্যা বেলা এখানকার পরিবেশ সুন্দর দেখায়। কৃষ্ণকলিতে বসে এই সাগরের ধারে প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাতে ছুটে আসেন অনেকে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়