ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যেভাবে নীরাকে খুঁজে পেলাম

মাসুদ হাসান উজ্জ্বল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ৪ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেভাবে নীরাকে খুঁজে পেলাম

‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমার দৃশ্যে শার্লিন ফারজানা

||মাসুদ হাসান উজ্জ্বল|| 
এই নীরা হলো পাখির পালকের মতো, বাতাসে উড়বে কিন্তু যেখানে বসবে লেপ্টে থাকবে। এমন মেয়ে কোথায় পাই! ছুটলাম কলকাতায়। সেখানকার একজন তারকার সঙ্গে কথাবার্তা প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করে দেশে ফেরার পর দেখি রাতের ঘুম হারাম! পাখির পালকের মতো মেয়ে খুঁজতে গিয়ে যাকে আমি চূড়ান্ত করে এসেছি-তিনি আর যাই হোক পাখির পালকের মতো নন। তারপরও একথা অনস্বীকার্য যে কলকাতার অভিনয়শিল্পীদের অভিনয় ক্ষমতা অতুলনীয়। তাই বিষয়টা দ্বিতীয়বার বিবেচনায় নিলাম। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল মহড়া নিয়ে। তিনি শুটিংয়ের ৪-৫ দিন আগে এসে রিহার্সেল করবেন! একজন পরিপূর্ণ নীরা হবার জন্য ৫ দিন বড়ই কম তা সে যতই দক্ষ অভিনেতা হোক!

ভাবলাম, আমার নিজের দেশই ভালো, সেখানেই নীরাকে খুঁজি! কয়েকজনের সাথে কথাবার্তা বলে একজন সুদক্ষ অভিনেত্রীর সঙ্গে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত কথা হলো। তিনি অত্যন্ত মনোযোগের সাথে মহড়াও শুরু করলেন। সত্যি বলতে কি তার মতো এই রকম কমিটেড অভিনয়শিল্পী আমাদের দেশে কমই আছে! আর আমি কিনা মধ্য পথে এসে একরকম অন্যায়ভাবে তার থেকে সরে এলাম! ওই যে পাখির পালকের মতো লাগছে না। আমি তখন সঠিক নীরার খুঁজ পেতে মরিয়া, স্বার্থপর।

যার কাছ থেকে ফিরে আসলাম তিনি এতটাই উঁচু জাতের শিল্পী যে, আমার বিশ্বাস-শেষমেষ যদি আমি ভালো একটা ছবি বানাতে পারি-তিনি আমার বিষয়টা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।  যাই হোক, দিনরাত্তির এক করে নীরাকে খুঁজতে শুরু করলাম। সেই সময়টাতে আমার সদ্য নির্মিত টিভি নাটক ‘দাস কেবিন’-এর ডাবিং চলছে। এই নাটকের মাধ্যমেই শার্লিন ফারজানার সাথে আমার আলাপ। ঈদের নাটক হওয়ায় শুটিংয়ের আগে তার সাথে মাত্র একদিন গল্প নিয়ে বসতে পেরেছিলাম। তখন অনেক চাপের মধ্যে থাকায় সেইভাবে তাকে লক্ষ্য করিনি। কেবল মনে হয়েছে-তিনি শিক্ষিত এবং সপ্রতিভ। শুটিংয়ের সময় দেখেছি পরিচালকের সঙ্গে দারুণভাবে কমিউনিকেট করার ক্ষমতা তার আছে। তবুও আর যাই হোক সিনেমায় শার্লিন ফারজানাকে নেব, এমন ভাবনা এক মুহূর্তের জন্যও আমার মাথায় আসেনি।

ডাবিং করতে গিয়ে শার্লিন নিজ থেকেই বললেন, ‘ভাইয়া আমি যেকোনোভাবে আপনার ফিল্মের সাথে থাকতে চাই। অভিনয়ের জন্য আমাকে পারফেক্ট মনে না হলে আমি আপনাকে অ্যাসিস্ট করতে চাই।’ বলাই বাহুল্য আমি বেশ চমকে গিয়েছিলাম। ততদিনে এই ছবির আরেকটি লিড ক্যারেক্টার  ‘অর্থি’ খুঁজতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছি। সবাই অডিশন দিতে এসে নায়িকা হবার বাসনা জানিয়ে চলে যায়। একটু ভেবে সেই কথাটিই শার্লিনের সাথে শেয়ার করলাম। তিনি বললেন, ‘অ্যানি ক্যারেক্টার ভাইয়া, একটা দৃশ্য হলেও আমার সমস্যা নাই।’ আবারো আমার বিস্মিত হবার পালা। বল্লাম ঠিক আছে, আগামীকাল সকাল ১১টায় আপনার অডিশন, আর মেকাপ ছাড়া আসবেন প্লিজ। সম্মতি জানিয়ে তিনি চলে গেলেন। পরদিন সকাল ১১টা নাগাদ বিনা মেকাপে শার্লিন হাজির। আমার সহকারীরা লাইট ক্যামেরা সেট করে যখন অডিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে-তখন আমি জানালাম, অডিশন আমি নিজে নিতে চাই। শার্লিনের অডিশনে কোন কোন দৃশ্য দেওয়া হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। শার্লিনকে বলা হয়েছে-নায়িকার বান্ধবী চরিত্রের জন্য তার অডিশন নেওয়া হচ্ছে। চিত্রনাট্য হাতে পাবার পর বিনা বাক্যব্যায়ে একটু সময় চেয়ে নিয়ে আমার স্টুডিওতে চলে গেলেন তিনি। কিছুক্ষণ পর এসে বললেন, ‘ভাইয়া আমি রেডি’। আমি তাকে একটু ক্যারেক্টার ব্রিফ দিয়ে নিজেই ক্যামেরায় চোখ রাখলাম কারণ আমি জানি শার্লিনকে কিছু না বলে নীরার চরিত্রটি হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শকুনের মতো দৃষ্টি মেলে বল্লাম, অ্যাকশন। দেখলাম-উজ্জ্বল পাখির পালক উড়ছে। মনে হচ্ছে, একটা স্বাধীন পাখির পালককে ঘিরে সিম্ফনি বাজছে। আর কোনো ভুল করতে চাই না বলে শার্লিনকে কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে পরের দিন উইথ মেকাপ আসতে বল্লাম। এমনভাবে পরপর সাতদিন অডিশন চলল শার্লিন ফারজানার। সাতদিন পর তাকে জানানো হলো তিনি উনপঞ্চাশ বাতাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র নীরার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এটা শোনার পর শার্লিনের সেই লাফিয়ে ওঠা,  সেই আনন্দাশ্রু কোনোদিনও ভুলবার নয়।

টানা সাতটি মাস রিহার্সেলের জন্য শার্লিন ফারজানা সকাল থেকে রাত বলতে গেলে ‘রেড অক্টোবর’-এ বসবাস করেছেন। ফলে শুটিংয়ে আমরা শার্লিনকে নিয়ে যাইনি, নীরাকে নিয়ে গিয়েছি। ইতোমধ্যে আবিষ্কার করে ফেলেছি মাইক্রো এক্সপ্রেশনে অভিনয় করার দুর্লভ ক্ষমতা শার্লিনের আছে। তিনি যখন মগ্ন হয়ে অভিনয় করেন চারপাশ আলোকিত হয়ে যায়। অথচ নাটক করবার সময় এমন একজন সহজাত, সপ্রতিভ অভিনয়শিল্পী আমার নজরেই পড়ল না!

যাই হোক, সিনেমার মাঝপথে এসে তুমুল গোলমাল বেঁধে গিয়েছিল শার্লিনের সাথে। সেই গল্প পরে বেশ আয়োজন করে বলব। খালি আপাতত এইটুকু বলতে পারি-পাখির পালক যখন চেয়েছি, সে তো একটু-আধটু হাওয়ায় ভাসবেই।

আরো পড়ুন : ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ ও পোস্টার সমাচার



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ অক্টোবর ২০১৮/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়