ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

আকাশ ছুঁয়ে দ্রৌপদী কা ডান্ডা: সূচনা পর্ব

ইকরামুল হাসান শাকিল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ১৬ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আকাশ ছুঁয়ে দ্রৌপদী কা ডান্ডা: সূচনা পর্ব

ইকরামুল হাসান শাকিল: পঞ্চস্বামীর গর্বিত স্ত্রী ছিলেন দ্রৌপদী। মহাভারতের কবি ব্যাসদেব তাঁকে তুলনা করেছেন নীলকান্ত মণির সাথে। তিনি ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় সখী। দ্রৌপদী হলেন মহাভারত মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র। তিনি পঞ্চপাণ্ডবের যুধিষ্ঠিরের সহধর্মিণী। বিভিন্ন নামে পরিচিতা। মহাভারতে দ্রৌপদীকে অনিন্দ্য সুন্দরী ও তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমি সেই শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় দ্রৌপদীর সৌন্দর্য্য হয়তো বর্ণনা করতে পারবো না। তবে দ্রৌপদী কা ডান্ডার শ্বেতশুভ্র পুতপবিত্র সৌন্দর্যের প্রেমে পরেছিলাম সেই ২০১৪ সালে। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিলো এই বরফ শীতল সৌন্দর্য ছুঁয়ে দেখার। তার চূড়ায় নিজেকে মেলে ধরার এবং লাল সবুজের পতাকা পত্পত্ শব্দে উড়াবার। সেই ২০১৪ সালে কাছ থেকে চোখে দেখে প্রেমে পরেছিলাম আর ২০১৮ সালে এসে তাকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ এলো।

সানভী ভাই যে এবছরের এপ্রিল-মে সেশনে নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং (নিম) -এ  পর্বতারোহণের মৌলিক প্রশিক্ষণে যাচ্ছে সেটা আগে থেকেই জানা ছিলো। বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রোকিং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট দু’বার এভারেস্ট আরোহণকারী একমাত্র বাংলাদেশি এমএ মুহিত ভাই জানতে চাইলেন আমিও পর্বতারোহণের উচ্চতর প্রশিক্ষণে যেতে চাই কিনা? আমি ভাবনাচিন্তা ছাড়াই যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। ২৪ শে এপ্রিল থেকে ২৮ দিনের প্রশিক্ষণ শুরু। পর্বতারোহণের মৌলিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ এপ্রিল-মে সেশন একইসঙ্গে। তাই আমি ও সানভী ভাই একসঙ্গে যাওয়া-আসা করতে পারবো ভেবে আনন্দ একটু বেশিই ছিলো। আমি আগেও একবার গিয়েছি। পর্বতারোহণের মৌলিক প্রশিক্ষণও নিয়েছি এখান থেকেই। সানভী ভাই এবারই প্রথম যাচ্ছে। তাই দুজনের অনুভূতি দুই রকম। আমি যতটা না কৌতূহলী তার থেকে অনেকগুণ বেশি কৌতূহলী সানভী ভাই। দুজনে দারুণ কৌতূহল নিয়েই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।
 


এপ্রিলের ১৮ তারিখ। রাত এগারোটায় ঢাকার আরামবাগ থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হলো। সময় মতো বাস ছাড়ার কথা থাকলেও দশ মিনিট আগেই বাস ছেড়েছে। ১৯ তারিখ দুপুরেই আমরা কলকাতা পৌঁছে গেলাম। কলকাতা শহরটা আমার ভীষণ পরিচিত। এর আগেও এসেছি বহুবার। প্রথম এসেছিলাম ২০১২ সালে মঞ্চনাটক করতে। কলকাতার ঐতিহাসিক মিনার্ভা থিয়েটারের মঞ্চে সেবার অভিনয় করেছিলাম। ১৮৯৩ সালে নির্মিত হয়েছিলো মিনার্ভা থিয়েটার। এটি কলকাতার একটি জনপ্রিয় নাট্যশালা। বেডন স্ট্রিটে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুর্গের মত একটি ভবন। এ বছরেই ২৮ জানুয়ারি নগেন্দ্রভূষণ মুখার্জীর প্রযোজনায় শেক্সপীয়রের ‘ম্যাকবেথ’ নাটকের অভিনয়ের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯২২ সালের ১৮ অক্টোবর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মিনার্ভা ভস্মীভূত হয়ে যায়। ১৯২৫ সালে উপেন্দ্রনাথ মিত্রের নেতৃত্বে মিনার্ভা থিয়েটার পুনর্নিমিত হয় এবং ৮ আগস্ট মহাতাপচন্দ্র ঘোষের ‘আত্মদর্শন’ নাটকের অভিনয়ের মাধ্যমে এর দ্বিতীয় পর্যায়ের যাত্রা শুরু হয়। উনিশ শতকের বঙ্গ রঙ্গমঞ্চের এক গৌরবময় অধ্যায়ের ঐতিহাসিক সাক্ষ্য বহন করে এখনো টিকে আছে এই মিনার্ভা থিয়েটার ।

বাস থেকে নেমেই প্রথমে হলুদ রঙের ট্যাক্সি নিয়ে সোজা চলে এলাম ফেয়ারলী প্লেস। এখান থেকে সারা ভারতের টিকেট কাটা যায়। ভারতীয় নাগরিকদের দূরে কোথাও যেতে হলে তিন চার মাস আগেই ট্রেনের টিকেট কাটতে হয়। আর বিদেশী কোটায় এখান থেকে তিন চার ঘণ্টা আগেও টিকেট পাওয়া যায়। ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে টিকেট কাউন্টারে এলাম। কাউন্টারের দিদি জানালেন আগামী দুই দিনের টিকেট নাই। তারপরেও তাকে অনুরোধ করে জানালাম, যদি টিকেট না পাই আর না যেতে পারি তাহলে আমরা আমাদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারবো না। তিনি বললেন, আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি, কপাল ভালো থাকলে পাবেন। অবশেষে আমাদের কপালটা এতোই ভালো যে, আজ রাত আটটার দুন এক্সপ্রেসেই টিকেট পেয়ে গেলাম।
 


চিন্তা দূর হলো। মনে পরে গেলো আমরা এখনো সকালের খাবার খাইনি। যদিও এখন প্রায় বিকেল চারটের কাছাকাছি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তেমন খাবার হোটেল পেলাম না। তাই আমরা খাবার খেতে নিউ মার্কেট চলে এলাম। নিউ মার্কেট এলাকা বাংলাদেশীদের এলাকা বললেও ভুল হবে না বোধহয়। কলকাতায় যারা আসেন তাদের অধিকাংশ মানুষ এই এলাকায় থাকেন। এখানকার রাস্তায় বের হলে মনে হয় পুরান ঢাকার কোন এক রাস্তায় আছি। ছোট একটি হোটেল। নিচে ও উপরে বসার ব্যবস্থা আছে। হোটেলটির নাম ইসলাম হোটেল। বেশি মানুষ বসা যায় না। লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় খাবারের জন্য। এখানে খাবার শেষ করে আমরা চলে এলাম কলেজ স্ট্রীট বইয়ের জগতে। ট্রামের টুংটাং শব্দ, টানা রিকশার ছুটে চলা, ফুটপাতের পুরনো বইয়ে সাজানো দোকান, ছোট-বড় প্রকাশনী দেখতে দেখতে বিকেলটা কাটিয়ে দিলাম। ক্লান্ত হয়ে কলকাতা কফি হাউজে ঢুকে কফির কাপে ঠোট ছোঁয়ালাম। নিমিশেই ক্লান্তি মিশে গেলো গরম কফির ধোয়ায়।
 


কলেজ স্ট্রীট থেকে হাওড়া রেল স্টেশনে চলে এলাম। হাতে অনেক সময় আছে এখনো। তাই হাঁটতে হাঁটতে রেলওয়ে জাদুঘরে এসে দেখি জাদুঘরে প্রবেশের সময় শেষ হয়ে গেছে। গঙ্গার পাড়ে সন্ধ্যা কাটিয়ে কিছু শুকনো খাবার কিনে রেল স্টেশনে ঢুকে গেলাম। রাত সাড়ে আটটায় দূন এক্সপ্রেসে আমাদের টিকেট। নয় নাম্বার প্লাটফর্ম থেকে ছাড়বে ট্রেনটি। তাই প্লাটফর্মের মেঝেতেই বসে অপেক্ষা করছি। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু ট্রেনের কোন খবর নাই। বুঝতে দেরী হলো না। তবে কখন ট্রেন ছাড়বে তা কেউ বলতে পারছে না কারণ দূন এক্সপ্রেস এখনো প্লাটফর্মে আসেনি। সবার মতো আমরাও মেঝেতে শুয়ে বাসে সময় পার করছি। কিন্তু অপেক্ষার সময় যেনো যেতেই চাচ্ছে না। যাত্রীদের মধ্যে কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ কেউ গল্প করছে। আমরা শুয়ে শুয়ে বই পড়ছি। ভ্রমণে আমার সাথে সহযাত্রী হিসেবে সবসময় বই থাকে। আর সাথে বই থাকলে সময় পার করতে আমার কষ্ট হয় না। তাই এখনও ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে আমার তেমন কষ্ট হচ্ছে না।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ অক্টোবর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়