ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আমেরিকার মাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট

উদয় হাকিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৪ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমেরিকার মাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট

লাউডারডেল ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বাউন্ডারি রোপে ওয়ালটনের লোগো। আমেরিকার মাটিতে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের অন্যতম স্পন্সর বাংলাদেশের এই ব্র্যান্ড

উদয় হাকিম, ফ্লোরিডা (আমেরিকা) থেকে : আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র। অনেকের কাছেই স্বপ্নের দেশ। সেই আমেরিকার মাটিতেই প্রথমবারের মতো মাঠে নামছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। বোঝা যাচ্ছে- ফ্লোরিডার লাইডারডেল ক্রিকেট গ্রাউন্ড হয়ে উঠতে যাচ্ছে এক টুকরো বাংলাদেশ।

নিজের দেশের ক্রিকেটারদের কাছে পেয়ে শিহরিত এখানকার বাংলাদেশিরা। প্রিয় দলকে সমর্থন যোগাতে লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে আজ তারা মাঠে যাচ্ছেন পরিবার-পরিজনসহ। ম্যাচ জিতে উৎসবের সবটুকু আলো নিজেদের করে নেওয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। যদিও তাদের প্রতিপক্ষ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের শক্তিশালী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

খেলা হচ্ছে ব্রাওয়ার্ড সেন্ট্রাল রিজিওনাল পার্কে। সংক্ষেপে একে লাউডারডেল ক্রিকেট গ্রাউন্ড বলে। কিন্তু স্থানীয় উচ্চারণে শোনা যায় লাউডেল। বিশাল এলাকা নিয়ে গ্রিন গ্রাউন্ড। স্টেডিয়ামের সঙ্গেই সুইমিং জোন। পাশেই বিশাল পুকুর। তাতে যন্ত্রচালিত সুউচ্চ ঝরনার পানি ঝরছে। মাঠ পুরো প্রস্তুত। সবুজে ছাওয়া মাঠ দেখতে ভীষণ সুন্দর।

 


‘একতারা ফ্লোরিডা’র আয়োজনে বাংলাদেশ দলের জন্য শুভকামনায় শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান

 

বিকেলে প্র্যাকটিস করছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। খুবই সিরিয়াস প্র্যাকটিস। তারা জোরে মারার চেষ্টা করছিল। বল আছড়ে ফেলছিল বাউন্ডারি রোপের বাইরে। ওরা যখন অনুশীলনে ব্যস্ত, বাংলাদেশ দল তখন মিয়ামি সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সে যাই হোক। দল জিতলেই সব ভালো। যদিও সিরিজ জিততে পরের দুটো ম্যাচেই জয় দরকার টাইগারদের।

নিউ ইয়র্ক থেকে আসা সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকি জানালেন, ফ্লোরিডার আয়তন ৬৬ হাজার বর্গমাইল। বাংলাদেশের চেয়েও বড়। জনসংখ্যা ২ কোটি ১২ লাখ। বাংলাদেশি আছেন ৬০ হাজারের বেশি। ওদিকে নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট থেকে আসছেন বাংলাদেশিরা। অনেকেই পৌঁছে গেছেন। আসছেন আজও। অনেকেই টিকিট চেয়েছেন আমার কাছেও। কেউ কেউ এসে টিকিট নিয়ে গেছেন। অনেকেই খোঁজ নিচ্ছেন কীভাবে টিকিট পাওয়া যাবে। অনলাইনে নাকি স্টেডিয়ামের কাউন্টারে।

বাংলাদেশ দলের জন্য শুভকামনায় গত সন্ধ্যায় ছিল শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান। লাউডারডেল এলাকার কেন্দ্রে সিভিক সেন্টারে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘একতারা ফ্লোরিডা’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। এতে উপস্থিত ছিলেন সকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ এবং মিরাজ। প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আসা যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ দলের জন্য শুভকামনা জানান। মাঠে গিয়ে দলকে উৎসাহ দেওয়ার কথা বলেন।

 


লাউডারডেল ক্রিকেট গ্রাউন্ডে লেখক। পেছনের চোখ জুড়ানো সবুজ মাঠে প্র্যাকটিস করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

 

‘একতারা ফ্লোরিডা’র সেক্রেটারি ইমরান জনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ দল খেলতে এসেছে ফ্লোরিডার মাটিতে। এটা আমাদের জন্য বিশাল পাওয়া। আমরা বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে মাঠে থাকব। দলকে উৎসাহ দেবো।’

১৯৭৯ সাল থেকে ফ্লোরিডায় আছেন মইন ভূঁইয়া। তিনি জানান, এখানে বাংলাদেশ খেলছে। এটাই তাদের কাছে বিশাল পাওয়া।

নুরুল হক। ১৮ বছর ধরে আছেন এখানে। তিনি বেশ শিহরিত। বিকেলে বাংলাদেশ দলের জার্সি পরে এসেছিলেন মাঠে। ছবি তুললেন। তার মতে, ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। তারা যেখানেই যান দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের কারণে বিশ্বে এখন বাংলাদেশের নাম আরো বেশি উজ্জ্বল। তিনি অপেক্ষায় আছেন কখন মাঠে গড়াবে বল।

 


লাউডারডেল ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পাশের পুকুর। পুকুরে যন্ত্রচালিত সুউচ্চ ঝরনার পানি ঝরছে

 

বাংলাদেশের ঠিক উল্টো পিঠে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে যখন দিন, এখানে তখন রাত। শক্তিশালী এই দেশের কাছে সারা বিশ্ব কাত। বৈপরীত্য আছে আরো। এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা রাগবি, ফুটবল (সকার বা আমাদের দেশের ফুটবলের মতো নয়, অনেকটা বেসবলের মতোই), বেসবল এবং বাসকেট বল। ক্রিকেটে এক সময় আমেরিকা এবং বাংলাদেশ প্রায় সমান শক্তিশালী ছিল। আইসিসি কাপ জিতে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে বহুদূর। আমেরিকা পড়ে আছে সেই তিমিরেই। তবু আমেরিকার মাটিতে এই যে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট ম্যাচ হতে যাচ্ছে সেজন্য ধন্যবাদ পাওনা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের। তাদের চেষ্টাতেই হচ্ছে এই ম্যাচ। ফ্লোরিডা কর্তৃপক্ষ চাইছে এখানে ক্রিকেট জনপ্রিয় হোক। সেজন্যই আমেরিকার মাটিতে খেলতে পারছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ দল মাঠে নামলেই সেটা যেমন হবে ইতিহাস, তেমনই জিততে পারলে সেটি হবে সাফল্যের ইতিহাস। ইতিহাস কেবল সফলতাকেই মনে রাখে।

ইতিহাসের আরেকটি খোরাক যোগাচ্ছে একটি তথ্য। প্রথমবারের মতো আমেরিকার মাটিতে হওয়া বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সব স্পন্সর বাংলাদেশের। ওয়ালটন, আইপে, মার্সেল, মিনিস্টার- সবগুলোই বাংলাদেশি ব্র্যান্ড। ব্র্যান্ড বাংলাদেশের এগিয়ে চলা আরো বেগবান হোক।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ আগস্ট ২০১৮/অগাস্টিন সুজন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়