ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

১০ বছরের সার্জেন্টের হাত থেকে ছুটে গিয়েছিল গ্রেনেড

শাহেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১০ বছরের সার্জেন্টের হাত থেকে ছুটে গিয়েছিল গ্রেনেড

শাহেদ হোসেন : স্বাধীনতা যুদ্ধে তরুণ-যুবকদের চেয়ে কোনো অংশ পিছিয়ে ছিল না এদেশের সাহসী কিশোররা। অক্টোবরে ঢাকায় ১৪ বছর বয়সি কিশোর মোজাম্মেল হক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানকে হত্যা করেছিল সমস্ত নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙে।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আবু সালেকের সাহসিকতায় বেঁচে গিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল।  নবম শ্রেণির ছাত্র বাহাউদ্দিন রেজা গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল কমার্স ব্যাংকে।

 

এদের মতো শতাধিক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা অসীম সাহসিকতায় লড়াই করেছিল পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিন্তু কজনকেই বা আমরা মনে রেখেছি?

 

৯ নম্বর সেক্টর প্রধান মেজর জলিলের সহযোদ্ধা ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম প্যারাট্রুপার ও ফ্রগম্যান ক্যাপ্টেন এম এ বেগ। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের টানে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে চলে এসেছিলেন তিনি। এই ক্যাপ্টেন বেগের একটি কিশোর বাহিনী ছিল। তার এই বাহিনীটির নাম ছিল ‘হার্ড কোর অব সার্জেন্টস’। স্বাধীনতাযুদ্ধের ১৫ খণ্ডের দলিলপত্রে মেজর এম এ জলিলের লেখা ‘সীমাহীন সমর’ বইয়ের কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে তিনি এই ‘হার্ড কোর অব সার্জেন্টস’ এর গল্পটি খুব সুন্দরভাবে তুলে এনেছেন। এই দলটির অন্যতম এক যোদ্ধা ছিল ভট্টাচার্য নামের এক কিশোর। তার গল্পটি আমরা মেজর জলিলের জবানিতেই শুনি।

 

আমার মনে পড়ে, ‘ভট্টাচার্য’ নামের ১০ বছরের একটি ছেলে বেগের বিশেষ ‘বাহিনীতে’ যোগ দেয়। এই বিশেষ বাহিনীটির নাম ‘হার্ড কোর অব সার্জেন্টস’। এর বিশেষত্ব ছিল বারো বছরের ঊর্ধ্বে কোনো বালককে এই বাহিনীতে নেওয়া হতো না। নতুন এসেও ভট্টাচার্য কঠিন পরিশ্রমের বলে সার্জেন্ট মেজরের পদে উন্নীত হলো। সে নিজের অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। উপরন্তু, চারদিকে শত্রু থাকা সত্ত্বেও তাদের অবস্থান, শক্তি, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ রাস্তায় পারুলিয়া ব্রিজের খুঁটিনাটি-সব মূল্যবান সংবাদ সংগ্রহের জন্য তার খুদে বাহিনীকে যোগ্যতার সঙ্গে পরিচালনা করেছে।

 

পারুলিয়া ব্রিজটা লম্বায় প্রায় ১৫০ ফুট। এই ব্রিজের ওপর দিয়েই হানাদাররা তাদের রসদসম্ভার, অস্ত্রশস্ত্র কালীগঞ্জ ও বসন্তপুরে নিয়ে যেত। ব্রিজটার ওপর হামলা চালানোর দিন ভট্টাচার্য রাতের অন্ধকারের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে ব্রিজের এক প্রান্তে পাহারারত সান্ত্রীদের কয়েক গজের মধ্যে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। আর এদিকে বেগ ব্রিজের নিচে বিস্ফোরক দ্রব্য রেখে দিল। সংকেত দিতেই এই ১০ বছরের সার্জেন্ট মেজরটি ঝোপের আডাল থেকে শত্রুর দিকে গ্রেনেড ছুড়ে মারলে কোন দিক থেকে গ্রেনেড ছুঁড়েছে টের পাবার আগেই সান্ত্রীরা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তারপর সার্জেন্ট মেজরটি তার ছোট্ট কনুইয়ের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে পূর্বনির্ধারিত স্থানে বেগের সঙ্গে এসে মিলিত হলো এবং নীরব অপেক্ষা করতে লাগলো কখন বিস্ফোরণের ভয়ানক গর্জনটা কানে ভেসে আসবে। দীর্ঘমেয়াদি বিস্ফোরকদ্রব্য বুকে নিয়ে ব্রিজটা অসম্ভব রকমের নীরব ও শান্ত। মগজহীন হানাদার সান্ত্রীরা ভারী বুট পায়ে ব্রিজের অপর প্রান্তে পায়াচারি করছিল।

 

বেগ হাতঘড়িটার দিকে তাকাল। সময় আসন্ন। উহ কী ভয়ানক উত্তেজনা! প্রচণ্ড শব্দ করে ব্রিজের বেশির ভাগ অংশ উড়ে গেল। আর পোশাক পর পাকিস্তানি পশুগুলো চিরদিনের জন্য ভেসে গেল স্রোতের জলে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ডিসেম্বর ২০১৬/শাহেদ/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়