ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন’

জাকির হুসাইন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ২১ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন’

সুমন হোসেনের (মালা পরিহিত) হাতে লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার তুলে দিচ্ছেন ওয়ালটন প্রতিনিধিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘জীবনে এই প্রথম এত বড় পুরস্কার পেয়েছি। এটা ভাবতেও আমার অবাক লাগে। এমনকি অতি আবেগে দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। পরে নিজেকে স্বাভাবিক করে বিষয়টি মাকে জানাই। খবর শুনে মা মহাখুশি। আমাকে বলেন, সুমন তোর কপালে আছে বলেই এমন পুরস্কার পেয়েছিস। তখন বাবার কথার খুব মনে পড়ছিল। বাবা বেঁচে থাকলে আজ অনেক খুশি হতেন।’

কথাগুলো মো. সুমন হোসেনের। গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানার মধ্য খোলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। গত শুক্রবার কালিগঞ্জের মেসার্স রোহান ট্রেডার্স থেকে কিস্তিতে ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পান সুমন। সেই অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন তিনি।

সুমন জানান, মা ছাড়া পরিবারে আর কেউ নেই তার। বড় দুইটি বোন থাকলেও তাদের বিয়ে গেছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় (২০১০ সালে) তার বাবা মারা যান। তারপর থেকে মা তাকে অনেক কষ্টে মানুষ করার চেষ্টা করছেন। এ বছর এইচএসসি পাস করেছেন সুমন। এখন অনার্সে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, ‘অভাব অনটনের সংসার। বাড়িতে টিভি-ফ্রিজ তো দূরের কথা, ইলেক্ট্রনিক্স কোনো পণ্যই নেই। মায়ের অনেক দিনের আশা একটি ফ্রিজের। টাকার অভাবে সে আশা পূরণ হচ্ছিল না। বাবা বেঁচে থাকলে এতদিন নিশ্চয়ই মায়ের সব ইচ্ছে পূরণ করতেন। মায়ের ইচ্ছা পূরণে চিন্তা করলাম পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করার। স্থানীয় বাজারে একটি ছোট ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিতে কাজ শুরু করি। সেখান থেকে যা বেতন পাই, তা দিয়ে বাজার-ঘাট করার পর কিছু টাকা জমাই। তবে একটা ফ্রিজ কেনার মতো তা যথেষ্ঠ ছিল না।’

সুমন বলেন, ‘মায়ের হাসিমুখ দেখার জন্য আমার অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করছিল না। ভাবলাম কিছু টাকা নগদ দিয়ে ফ্রিজ কিনি। বাকি টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করবো। কিন্তু আমাদের মতো গরিবদের কে কিস্তিতে ফ্রিজ দেবে! তারপরও গত শুক্রবার সাহস করে ফ্রিজ কেনার উদ্দেশ্যে বের হলাম। কোন কোম্পানির শোরুমে যাব বুঝতে পারছিলাম না। পথে আমার চাচাতো বোনের সঙ্গে দেখা। তিনি একটি টেলিভিশনে সাংবাদিকতা করেন। আমার কথা শুনে বললেন, চল তোকে কিস্তিতে ভালো কোম্পানির ফ্রিজ কিনে দেব। আর কোনো কথা না বলে আপার সঙ্গে চলে যাই। তিনি আমাকে ওয়ালটন কোম্পানির শোরুমে নিয়ে যান।’

সুমন জানান, তার আপার সুপারিশে কিস্তিতে ফ্রিজ দিতে সহজেই রাজি হন ওয়ালটনের বিক্রয়কর্মীরা। যাচাই-বাছাই করে সাড়ে ১১ সিএফটির একটি ফ্রিজ পছন্দ করেন তিনি। যার দাম ২৪ হাজার টাকা। ১৪ হাজার টাকা নগদ দিয়ে বাকি টাকা তিন মাসের কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ফ্রিজটি কেনেন সুমন।

তিনি বলেন, ‘মেমো করার সময় বিক্রয়কর্মীরা আমাকে জানান ওয়ালটন ডিজিটাল ক্যাম্পেইন চলছে। পণ্য কিনে রেজিস্ট্রেশন করে লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ আছে। তাদের কথায় প্রথমে আমি তেমন গুরুত্ব দেই না। কারণ আমার কপাল এত ভালো না। কপাল ভালো হলে কি আমি ছোটবেলাতেই পিতাকে হারাই? মায়ের আশা পূরণের জন্য অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়ে ফ্রিজ কিনতে এসেছি।’

সুমন বলেন, ‘আমার মোবাইল নম্বর নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে দেন শোরুমের বিক্রয়কর্মীরা। কিছুক্ষণ পরে আমার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। যেখানে বলা হয় আমি লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পেয়েছি। মোবাইলে লাখ টাকার এসএমএস দেখেও আমার বিশ্বাস হয়নি। কারণ ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে এমন ধরনের পুরস্কার পাওয়া যাবে কখনো ভাবতেও পারিনি। বিষয়টা আমার জানাও ছিল না।’

তিনি জানান, লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার প্রাপ্তিতে তার মতো শোরুমের বিক্রয়কর্মীরা খুব খুশি হয়েছেন। কারণ এর আগে তাদের শোরুম থেকে কেউ এত বড় পুরস্কার পায়নি। তারাই সুমনকে নিশ্চিত করেন যে, সত্যিই তিনি লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পেয়েছেন। যখন নিশ্চিত হয়েছেন, তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি সুমন।

এক লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার দিয়ে কি কি পণ্য কিনলেন চান জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার কারণে বোনদের তেমন কিছু দিতে পারি না। তবে এখন সুযোগ পেয়েছি তা হাত ছাড়া করবো না। তাই গিফট ভাউচার দিয়ে দুইটা ফ্রিজ কিনে দুই বোনকে দিয়েছি। আর বাকি টাকা দিয়ে আমাদের বাড়ির জন্য একটি স্মার্ট এলইডি টিভি, চার্জার ফ্যান, রাইস কুকার, রুটি মেকারসহ মোট আটটি প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়েছি। এতে লাখ টাকার কিছু বেশি বিল হয়েছিল। বাকিটা নগদ পরিশোধ করেছি।’

ওয়ালটন পণ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে ওয়ালটনের মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি। যদিও কম দামের কিন্তু কখনো সমস্যা দেখা দেয়নি। তাই ওয়ালটন পণ্য অনেক ভালো বলে আমি মনে করি। তাছাড়া ওয়ালটন কোম্পানি সহজ শর্তে কিস্তিতে মানুষকে পণ্য দিচ্ছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। কর্মীদের ব্যবহারও অনেক ভালো। আমি মন থেকে ওয়ালটনের সফলতা কামনা করছি।’

উল্লেখ্য, ক্রেতাদের দোরগোড়ায় অনলাইনে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করেছে ওয়ালটন। এই কার্যক্রমে ক্রেতাদের অংশগ্রহণকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে নিশ্চিত ক্যাশ ভাউচার। ওয়ালটন প্লাজা এবং পরিবেশক শোরুম থেকে ১০ হাজার টাকা বা তার বেশি মূল্যের পণ্য কিনে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করে সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পাচ্ছেন ক্রেতারা। ক্যাশ ভাউচার পাওয়ার এই সুযোগ থাকবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ নভেম্বর ২০১৭/জাকির হুসাইন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়