ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলা: আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি রাষ্ট্রপক্ষের

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫০, ১ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্রেনেড হামলা: আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি রাষ্ট্রপক্ষের

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় হতাহতের ঘটনার মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

সোমবার রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্কের শেষ দিনে প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান এ দাবি করেন। মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে যুক্তিতর্ক শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। একই সঙ্গে ১১ সরকারি কর্মকর্তার সাত বছর কারাদণ্ডও চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাষ্ট্রপক্ষের ২৫তম দিনের মতো যুক্তিতর্কে সৈয়দ রেজাউর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ ও দৃষ্টান্তমূলক দণ্ডের সপক্ষে বিভিন্ন মামলায় দেওয়া উচ্চতর আদালতের বেশকিছু সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন।

রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি সমাপ্ত ঘোষণার পর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ পর্যায়ে যুক্তিতর্কের সমাপ্তি ঘোষণা করলেন। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীরা মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন।

সৈয়দ রেজাউর যুক্তি উপস্থাপনে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পরিচালিত ওই গ্রেনেড হামলার লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যা করা। এতে করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বশূন্য হতো। যাতে ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নেতৃত্বশূন্য করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার অসৎ উদ্দেশ্য।

মৃত্যুদণ্ড দাবি করা ৩৮ আসামি হলেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপি দলীয় ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম ও রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, হরকাতুল জিহাদ নেতা আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ ওরফে জিএম, শেখ আব্দুস সালাম, কাশ্মিরী নাগরিক আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা শাওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, বাবু ওরফে বাতুল বাবু, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহমেদ তামিম, মইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান সুমন, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জল ওরফে রতন, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাও. তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুনছালিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার ও লিটন ওরফে মাও. লিটন।

ওই আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০-বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ১০৯ ও ৩৪ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩, ৪ ও ৬ ধারায় চার্জগঠন হয়। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মানুষ হত্যার অভিযোগে এবং ১২০-বি ধারায় হত্যার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগের উভয় ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ধারায় বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রাণহানির অভিযোগে এবং ৬ ধারায় অর্থ, পরামর্শ ও বিস্ফোরক দিয়ে সহায়তার অভিযোগে একই দণ্ডের বিধান রয়েছে।

৭ বছর কারাদণ্ড চাওয়া ১১ জন হলেন, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, সবেক ডিসি পূর্ব মো. ওবায়দুর রহমান, সবেক ডিসি দক্ষিণ খান সাইদ হাসান, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক ও লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, মেজর (অব.) এটিএম আমিন, তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি পরবর্তীতে আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়া ৩ তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ।

দণ্ডবিধির ২০১, ২১২, ২১৭, ২৩০ ও ২১৮ ধারায় ওই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়। ওই ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনের নির্মম মৃত্যু হয়। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন কয়েক শতাধিক। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্রবণশক্তি হারান।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ জানুয়ারি ২০১৮/মামুন খান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়