ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘দুখিনী মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছে ওয়ালটন’

জাকির হুসাইন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘দুখিনী মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছে ওয়ালটন’

এই হাসিমুখই বলে দেয় সব। ওয়ালটনের লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচারের মেসেজ দেখাচ্ছেন জুমেল মিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। মা অনেক কষ্টে আমাদের বড় করেছেন। জীবনে সুখ বলতে কিছুই পান নাই তিনি। মায়ের সুখের কথা চিন্তা করে ওয়ালটন থেকে কিস্তিতে ছোট একটা ফ্রিজ কিনেছি। আর তাতেই ভাগ্যের জোরে পেয়েছি ১ লাখ টাকা। এ সংবাদ শুনে দুখিনী মায়ের মুখে হাসি ফুটেছে। বাবা মারা যাওয়ার পর তার মুখে এই প্রথম এমন হাসি দেখলাম।’

কথাগুলো বলে কাঁদতে থাকেন মো. জুমেল মিয়া। এ কান্না আনন্দের। কারণ, কষ্ট করে কেনা ওয়ালটন ফ্রিজে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার। যা দিয়ে বোনদের জন্য ফ্রিজ কিনেছেন। মায়ের পছন্দমতো পণ্যে ভরেছে তার ঘর।

জুমেল মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের রাজনগর থানার কদমহাটার বাসিন্দা তিনি। তার দুই বোন। একজন জুমেল মিয়ার বড়। অন্যজন ছোট। তাদের দুজনের বিয়ে হয়েছে। জুমেল এখনো বিয়ে করেননি।

মো. জুমেল মিয়া বলেন, ‘আমার বড় আপা যখন ফোরে আর আমি টুতে পড়ি, তখনই আমাদের এতিম করে বাবা ইন্তেকাল করেন। তিনি অল্প বেতনের সরকারি কর্মচারী ছিলেন। তবে তাতেই আমাদের দিন ভালোভাবে কেটে যেত। তার ইন্তেকালে দিশেহারা হয়ে পড়েন মা। অনেক দুঃখ-কষ্ট সয়ে আমাদের লালন-পালন করেন। আমাদের তেমন লেখাপড়া করাতে পারেন নাই, তবে বড় করে তুলেছেন। দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘একমাত্র ছেলে আমি। তাই বুঝ হওয়ার পর থেকে অনেক চেষ্টা করছি মাকে হাসিখুশি রাখতে। বাড়িতে ইলেকট্রনিক্স কোনো জিনিস ছিল না। অভাবের কারণে কখনো কেনার চেষ্টাও করি নাই। তবে এখন আমি স্থানীয় বাজারে একটি কসমেটিকের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করি। যে টাকা বেতন পাই তাতে মা এবং আমার থাকা-খাওয়া ভালোভাবে চলে যাচ্ছে। টিভি, ফ্রিজের মতো আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের সাধ কার না থাকে? আমার মায়েরও ছিল। কখনো তা পূরণ করতে পারিনি। বাস্তবতার কারণে তাতে মায়েরও কোনো অভিযোগ ছিল না। তবে মাকে খুশি করতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মা প্রায়ই একটা ফ্রিজের কথা বলত। তাই মনে মনে ফ্রিজ কেনার পরিকল্পনা করি।’

জুমেল মিয়া বলেন, ‘ফ্রিজ-টিভি যা-ই বলি না কেন, সবই দেশীয় কোম্পানি ওয়ালটনের আছে। পণ্যের মান যেমন ভালো, দামও অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে অনেক কম। কিস্তিতে কেনার সুবিধা আছে। আমি নিজে গ্যারান্টার হিসেবে অনেককে ওয়ালটন পণ্য কিনে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কারোর কোনো অভিযোগ পাই নাই। বরং সবাই অনেক ভালো বলছে। তাই মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে কিস্তিতে একটা ওয়ালটন ফ্রিজ কেনার সিদ্ধান্ত নিই। তাছাড়া, আমি যে দোকানে কাজ করি, ঠিক তার উল্টা দিকে (এমএসআর রোড, মৌলভীবাজার) ওয়ালটন প্লাজা। তাদের সাথে আমার বেশ খাতির।’

মো. জুমেল মিয়ার হাতে লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার তুলে দেওয়া হচ্ছে


তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৭ ফেব্রুয়ারি ওয়ালটন শোরুমে যাই। প্লাজা ম্যানেজার মো. মঞ্জুরুল ইসলামের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সবচেয়ে ছোট ৯ সিএফটি সাইজের ফ্রিজটি কেনা চূড়ান্ত করি। তিনিও খুশি মনে আমাকে ফ্রিজটি দেওয়ার জন্য সব ধরনের সহায়তা করেন। মাত্র ৬ হাজার টাকা জমা নিয়ে বাকি টাকা সুবিধামতো সহজ কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ করে দেন।’

জুমেল মিয়া বলেন, ‘একই বাজারে দোকান হওয়াতে সব ধরনের খোঁজ-খবর আমরা রাখি। তাই ওয়ালটন কোম্পানির জিনিস কিনলে লাখ টাকার পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ আছে, এটা আমার জানা ছিল। কিন্তু মৌলভীবাজারে এখনো কেউ এমন উপহার না পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তেমন সাড়া পড়েনি। বেশিরভাগ কাস্টমার ২০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পান। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে আমারও বেশি আগ্রহ ছিল না। তাই ফ্রিজ কিনে এক বন্ধুর মাধ্যমে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। এদিকে উপহার পাই বা না পাই নিয়ম অনুযায়ী আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করি।’

তিনি বলেন, ‘দোকানে ফিরে যাওয়ার পরপরই আমার মোবাইলে একটা এসএমএস আসে। প্রথমে তাতে লেখা দেখতে পাই ১০ হাজার টাকা। মনে মনে ভাবলাম, এটা মনে হয় ফ্রিজের জন্য আমি যে টাকা জমা দিয়েছি, সেটা এসএমএস করে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমি তো জমা দিয়েছি ৬ হাজার টাকা। ১০ হাজার কী করে হলো এটা জানার জন্য ওয়ালটনে আবারও যাই। এবার যাওয়ার সাথে সাথে প্লাজার সবাই আমাকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। আমি বিষয়টি আগে বুঝতে পারি নাই। পরে জানতে পারি এতদিন মৌলভীবাজারে যা কেউ পায় নাই, আমি সেটাই পেয়েছি। অর্থাৎ ওয়ালটন পণ্য কিনে আমার ভাগ্যে মিলেছে ১ লাখ টাকার গিফট ভাউচার।’

জুমেল মিয়া বলেন, ‘এ খবর শোনামাত্রই আমার শরীরে কাঁপন ধরে। ভাষা হারিয়ে ফেলি। এটা আমি কখনো কল্পনাও করি নাই। এতে আমার বোনেরাসহ এলাকাবাসীও ব্যাপক খুশি। সবচেয়ে বেশি খুশি আমার মা। কারণ, তিনি স্বামীকে হারিয়েছেন প্রায় ২০ বছর আগে। তার বিয়োগে শোকের ছায়া নেমে আসে মায়ের জীবনে। তারপরেও এমন একটা দিন আসবে তা তিনি কখনো ভাবেন নাই। ওয়ালটন থেকে উপহার পাওয়ার দিন মায়ের মুখে যে হাসি দেখেছি তা আমার জীবনে আর কোনো দিন দেখি নাই। আমার মায়ের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য ওয়ালটনকে আমি কোটি কোটি বার ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

ক্যাশ ভাউচারের এ টাকা দিয়ে কী কিনেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কাছে ১ লাখ টাকা কোটি টাকার সমান। এদিকে বোনদের বিয়ে দিয়েছি কিন্তু তাদের তেমন কিছু দেওয়া হয় নাই। তাই মূল্যবান এই টাকা দিয়ে দুই বোনের জন্য দুইটা ফ্রিজ দিয়েছি। বাকি টাকা দিয়ে মায়ের পছন্দে নিজেদের জন্য ঘরভর্তি পণ্য নিয়েছি। এর মধ্যে আছে এলইডি টিভি, ফ্যান, রাইস কুকার এবং প্রেসার কুকার। এতে আমার মায়ের মন একেবারে ভরে গেছে।’

উল্লেখ্য, ক্রেতাদের দোরগোড়ায় অনলাইনে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করেছে ওয়ালটন। এই কার্যক্রমে ক্রেতাদের অংশগ্রহণকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে নিশ্চিত ক্যাশ ভাউচার। ওয়ালটন প্লাজা এবং পরিবেশক শোরুম থেকে ১০ হাজার টাকা বা তার বেশি মূল্যের পণ্য কিনে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করে সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পাচ্ছেন ক্রেতারা। ক্যাশ ভাউচার পাওয়ার এই সুযোগ থাকবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/অগাস্টিন সুজন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়