ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে আরো ১২ মামলা, আসামি ১৫

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে আরো ১২ মামলা, আসামি ১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পাঁচ কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আরো ১২ মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাজধানীর রমনা মডেল থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন।

সোমবার দুদকের জনসংযোগ বিভাগ রাইজিংবিডিকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

১২ মামলায় মোট আসামি ১৫ জন। সব মামলাতেই আসামি হয়েছেন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পাঁচ কর্মকর্তা। তারা হলেন- আইসিবির প্রাক্তন উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) টিপু সুলতান ফারাজি, তিন সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. এহিয়া মণ্ডল, মো. সামছুল আলম আকন্দ ও শরিকুল আনাম, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ধনঞ্জয় কুমার মজুমদার।

অন্য আসামিরা হলেন- আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুস সামাদ ও তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার, তেজগাঁও স্টাফ কোয়ার্টারের এ কে এম রেজাউল হক ও তার স্ত্রী পাপিয়া সুলতানা, মোহাম্মদপুর খিলজি রোডের লাইলা নুর, তেজাগাঁও মণিপুরী পাড়ার এ কে এম আতিকুজ্জামান, গ্রিন রোডের কাজী মাহমুদুল হাসান, গুলশানের শেখ মেজবাহ উদ্দিন ও তার মেয়ে শিমা আক্তার এবং শ্যামলীবাগের বুলবুল আক্তার।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে শেয়ারবাজারে উল্লম্ফনের সময় কারসাজির ঘটনাগুলো ঘটে। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের (আইএসটিসিএল) কিছু কর্মকর্তা গ্রাহককে অনিয়মের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ করে দিয়ে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের শেষ দিকে এ-সংক্রান্ত অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

সূত্র জানায়, অনুসন্ধান শুরু করার পরও অকাট্য প্রমাণের অভাবে জালিয়াতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ অনুসন্ধানে আইসিবির বেশকিছু কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ৬৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মিলেছে। বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের মালিকদের মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে শেয়ার কেনার পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডেবিট স্থিতির ওপর টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, ২০০৯ সালের শেষের দিকে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। অতি মুনাফার লোভে গ্রাহক ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নেগেটিভ পারচেজ থাকা সত্বেও বিও হিসাবধারী তার অ্যাকাউন্টের সীমার বাইরে ব্যাপক অনিয়ম ঘটিয়ে সরকারি অর্থে অস্বাভাবিক ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনেন। পরে শেয়ারের দর পড়ে যাওয়ায় সরকারের বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হয়।

বিও হিসাব এবং আইসিবি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট হিসাবে মার্জিন ঋণের সীমা অতিক্রম করে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ হিসাবধারীকে আইএসটিসিএলের কর্মকর্তারা সুবিধা দিয়েছেন। এসব কর্মকর্তা প্রতিদিন লেনদেন শেষে গ্রাহক হিসাবের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় আদেশ অনুযায়ী যথাযথ আছে কি না, তা নিশ্চিত না করে জেনেশুনে অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেরা লাভবান হয়ে অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন।

এ নিয়ে মোট ১৩টি মামলা করলো দুদক। ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে সম্প্রতি বেশকিছু নথিপত্র দুদক কর্মকর্তাদের হাতে আসে। যেখানে মামলা দায়ের করার মতো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায় দুদক।

এর আগে গত ৩০ আগস্ট ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৩ কোটি ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯০৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) প্রাক্তন উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) টিপু সুলতান ফারাজি, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. এহিয়া মন্ডল, মোহাম্মদ সামছুল আলম, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ধনঞ্জয় কুমার মজুমদার, আইএফআইসি ব্যাংকের পল্লবী শাখার ব্যবস্থাপক মো. আবদুস সামাদ ও ব্যবসায়ী মো. শরিকুল আনামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। রাজধানীর রমনা মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হন।

এর মধ্যে আইসিবির প্রাক্তন উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) টিপু সুলতান ফারাজি, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. এহিয়া মন্ডল ও আইএফআইসি ব্যাংকের পল্লবী শাখার ব্যবস্থাপক মো. আবদুস সামাদকে মৎস্য ভবন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সংস্থাটি। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়