ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অটিস্টিক শিশুর যত্ন

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০০, ৩ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অটিস্টিক শিশুর যত্ন

প্রতীকী ছবি

ঝুমকি বসু : ছোট থেকেই আরাফ সবার চেয়ে আলাদা। নিজের মতো থাকে, কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না। খেলাধুলাতেও আগ্রহ নেই। বয়স প্রায় ছয় হতে চলেছে অথচ একা কিছুই করতে পারে না। চুপচাপ থাকে স্কুলেও। দেখে মনে হবে বাবা-মায়ের উপর যেন কোনও টানও নেই। আসলে আরাফ অটিস্টিক। অটিজম এক ধরনের ব্রেন ডিজঅর্ডার যা শিশুদের কথা বলা, পড়াশোনা এবং সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করে।

দোলা আবার ছোট থেকেই কানে কম শোনে। কথা বলাতেও জড়তা রয়েছে ওর। কিন্তু এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও, প্রতিবার স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম পাঁচজনের মধ্যেই সে থাকে। ওর বাবা-মা শারীরিক ভঙ্গিমা বা ঠোঁট নাড়া দেখেই ওর মনের কথা বুঝে নেওয়া রপ্ত করে ফেলেছেন। স্কুলের শিক্ষকরাও যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। যার ফলে স্কুল, বাসা সব জায়গাতেই দোলা বেশ স্বচ্ছন্দ।

আরাফ এবং দোলা দুজনই একটু আলাদা শিশু। বাসায় এমন শিশু যদি থাকে তাহলে বাবা-মায়ের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। আবার হতে পারে শিশু শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই প্রতিবন্ধী। এসব শিশু সব সময় তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বুঝিয়ে বলতে পারে না, ফলে তাদের বড় করে তোলার কাজটা হয়ে যায় আরও কঠিন। তবে পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব যদি একটি ইউনিট হিসেবে কাজ করেন, তাহলে এসব শিশুর জীবনও হয়ে উঠতে পারে সুস্থ ও সুন্দর। শুধু চাই বাবা-মায়ের তরফ থেকে একটু বেশি সময়, উৎসাহ এবং অধ্যবসায়।

বাবা-মায়ের জন্য কিছু পরামর্শ
* সন্তানের শারীরিক বা মানসিক অসুবিধার কথা যখন প্রথম জানবেন, তখন আপনার প্রথম কাজ হবে নিজেকে প্রস্তুত করা। বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে ভালোভাবে সন্তানের অসুবিধাগুলো জানার পর, নিজেরা এই বিষয়ে পড়াশোনা করুন। সন্তানের কী ধরনের অসুখ, কী কী চিকিৎসা আছে, কোনো স্পেশাল থেরাপি করার প্রয়োজন আছে কী না, আপনার শহরে এমন শিশুর কোনো আলাদা বিদ্যালয় আছে কী না, সেগুলোর খোঁজ নিন। বাবা-মায়ের একজন যদি স্পেশাল এডুকেশনের ট্রেনিং নিতে পারেন, তাহলে খুবই ভালো হয়। এই নতুন শিক্ষা সন্তানকে নতুন করে চিনতে, ওর ব্যবহার, অনুভূতি সবকিছু নতুন করে বুঝতে আপনাকে সাহায্য করবে।

* পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বোঝাবার দায়িত্ব আপনাদেরই। নিজেদের বা সন্তানের ভাগ্যকে কখনো দোষারোপ করবেন না। তাহলে আপনার সন্তান কিন্তু সবার সহানুভূতির পাত্র হয়েই জীবন কাটাবে। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনকে শিশুর অসুবিধার কথা বুঝিয়ে বলুন যাতে তারা কোনোরকম অবৈজ্ঞানিক ধারণা মনে না পুষে রাখেন। যদি বোঝানো সত্ত্বেও আপনার সন্তানের সম্বন্ধে কেউ কোনো কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন, তাহলে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করুন।

* অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে সন্তানের মেলামেশার ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকুন। শিশু যখন ছোট, নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না, সেই সময়ে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলার সময় নিজে উপস্থিত থাকুন। শিশুর স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলুন। সন্তান যাতে স্কুলে স্বচ্ছন্দ থাকতে পারে, সে ব্যাপারে শিক্ষকদের সাহায্য নিন।

* ছোটবেলা থেকে ওকে নিজের কাজ করতে উৎসাহ দিন। বারবার ভুল করলেও আপনি ধৈর্য হারাবেন না। সন্তানকে বকাঝকা বা অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা করবেন না।

* এক এক জন শিশুর এক এক রকম প্রয়োজনীয়তা থাকে, স্পেশাল স্কুলে সেটা বুঝেই কারিকুলাম তৈরি করা হয়। খেলাধুলা, গানবাজনা, হাতের কাজ বা ছবি আঁকা সন্তানের যেদিকে ঝোঁক, সেদিকেই তাকে চালনা করুন।

আরো পড়ুন
*
* শিশুর স্কুল থেকে শেখা বদভ্যাস থামাবেন যেভাবে


* যেসব স্কুলসামগ্রী শিশুকে অসুস্থ করতে পারে
* কীভাবে বুঝবেন শিশু যৌন হয়রানির শিকার
* শিশুকে যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষা করার উপায়

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়