ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘অপারেশন টোয়াইলাইট একটি মাইলফলক’

রফিকুল ইসলাম কামাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২৮ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘অপারেশন টোয়াইলাইট একটি মাইলফলক’

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট : সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি পাঠানপাড়ায় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোদের অপারেশন টোয়াইলাইট মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন সেনা সদর দপ্তরের গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।

আজ মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে সিলেটে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

ফখরুল আহসান বলেন, ‘গত ১৫ মার্চ সীতাকুণ্ডে পুলিশ  জঙ্গিবিরোধী সফল অভিযান চালায়। এ অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় সিলেটের শিববাড়িতে কোনো এক বাড়িতে জঙ্গিরা লুকিয়ে আছে। ২৪ মার্চ আনুমানিক রাত দেড়টায় পুলিশ এলাকাটি ঘিরে ফেলে। রাত আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে তারা নিশ্চিত হয় যে আতিয়া মহল নামক বাড়ির পাঁচ তলা ভবনের নিচ তলায় একটি ফ্ল্যাটে জঙ্গিরা অবস্থান করছে। অভিযান পরিচালনাকারী সদস্যরা সাথে সাথে নিচ তলার ছয়টি ফ্ল্যাট বাইরে থেকে বন্ধ করে দেন। এসময় মূল প্রবেশদ্বারে ভবনের কলাপসিবল গেইটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। একইসাথে ভবনটি সকল দিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়।’

তিনি বলেন, ‘পাঁচ তলা বাড়িটির প্রতি তলায় ৬টি করে মোট ৩০টি ফ্ল্যাট আছে।  ঘটনার সময় ২৮টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছিলেন। জঙ্গিরা পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাদেরকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারে।’

ফখরুল আহসান বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী জঙ্গিদের সক্ষমতা ও ২৮টি পরিবারের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে পুলিশের সোয়াত টিমের সাহায্য চায়। এসময় ভবনের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে নিজ নিজ ফ্ল্যাটে অবস্থান করেন। জঙ্গিরা তাদের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং ভবনের মূল ফটকে বিস্ফোরক স্থাপন করে।  এমনকি তারা একটি ফ্রিজ ও মোটরসাইকেলেও বিস্ফোরক লাগিয়ে রাখে। পুরো ভবনের সিঁড়িসহ বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক লাগিয়ে ভবনটিকে বিপজ্জনক করে তোলা হয়।’

তিনি বলেন, ‘সোয়াত টিমের সদস্যরা ২৪ মার্চ আনুমানিক বিকাল ৪টার সময় অপারেশন এলাকায় উপস্থিত হন। সোয়াত সদস্যরা তাদের পর্যবেক্ষণ, পরিকল্পনা ও বিচার বিশ্লেষণ শেষে বাসিন্দাদের নিরাপত্তা, বিস্ফোরণ ঝুঁকি ইত্যাদি বিবেচনা করে সেনাবাহিনীর সহায়তা চান।’

ফখরুল আহসান বলেন, ‘সেনাবাহিনী অপারেশনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৭ পদাতিক ডিভিশন ও বিশেষায়িত কমান্ডো দল পরদিন অভিযান শুরু করে। জানা যায়, ভবনের নিচ তলায় তিন জন পুরুষ ও একজন নারী জঙ্গি বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ অবস্থান করছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার আলোকে সেনাবাহিনী অপারেশন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। অপারেশনের মূলত দুটি গুরুত্ব (প্রায়োরিটি) নির্ধারণ করা হয়। প্রথমত, ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত, জঙ্গিদের নির্মূল করা। প্রথম পর্বটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ।  কমান্ডোরা তাদের জীবন বাজি রেখে ২৫ মার্চ দুপুরে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন মহিলা ও ২১ জন শিশুকে নিরাপদে উদ্ধার করেন। এ পর্বটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

এরপর জঙ্গিদের নির্মুল করার অভিযান শুরু হয়। এ পর্বে কমান্ডোদের পাশাপাশি স্নাইপার দল এপিসিসহ বিশেষায়িত অনেক সদস্য নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন। তিন দিন একটানা বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ২৭ মার্চ বিকেলের মধ্যে চার জন জঙ্গিকে নির্মুল করা হয়। মূলত গতকালই অভিযান শেষ হয়। তবে আরও বিশদ তল্লাশি ও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আজকের দিনটি কাজে লাগানো হয়। গতকাল দুটি মৃতদেহ পুলিশ প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি দুটি মৃতদেহ সুইসাইডাল ভেস্টসহ থাকায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। নিরাপত্তা বিবেচনায় ও পুলিশ প্রশাসনের পরামর্শে গতকালই সেগুলো বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের আগে প্রয়োজনীয় ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করা হয়। সকল কার্যক্রম শেষে আজ বিকেলে ভবনটি ক্রাইম সিন হিসেবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং অপারেশন টোয়াইলাইটের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।’

ফখরুল আহসান বলেন, ‘অপারেশন টোয়াইলাইট যে কোন ক্রাইসিস মোকাবেলায় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ মার্চ ২০১৭/কামাল/সাইফ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়