ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

অপেক্ষা ৭ মার্চের ও একটি ভাষণের

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৬ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অপেক্ষা ৭ মার্চের ও একটি ভাষণের

ঐতিহাসিক ৭মার্চে বঙ্গবন্ধু- শহিদুল ইসলামের পোট্রেট

শাহ মতিন টিপু : ৬ মার্চ, ১৯৭১। এদিনও বঙ্গবন্ধুর ডাকে সকাল ছ’টা থেকে দুপুর দু’টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হয়েছে।

এ দিন দুপুরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। বলা যায়, নামে ভাষণ হলেও আসলে এটি ছিল হুমকি। কারণ, তার ভাষণের পুরোটা জুড়েই ছিল বীর বাঙালীকে উদ্দেশ্য করে হুমকি ও ধমকি। ছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী দিয়ে বাঙালীকে শায়েস্তা করার হুমকি।

ইয়াহিয়ার হুমকিতে কী আসে যায়। বেপরোয়া বাঙালি তখন স্বাধীনতার স্বপ্নে যেমন উদ্দীপ্ত তেমনি ফুঁসছিল বিদ্রোহ, বিক্ষোভ ও ঘৃণায়। পরদিন ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেবেন বাঙালীর মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষণে তিনি কী বলবেন? এনিয়ে বাঙালি বিভোর। বাঙালি তখন শুধুমাত্র একটি ভাষণের প্রতীক্ষায়।

একাত্তরের এসব দিনের পরিস্থিতি ছিল এ রকম- একদিকে স্বাধীনতা ঠেকাতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানি সামরিক হানাদাররা। অন্যদিকে যে কোন আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে অটুটবন্ধনে বীর বাঙালীরা। সভা, মিছিল, কারফিউ ভঙ্গ, গুলিতে বাঙালী হত্যা- সব মিলিয়ে অগ্নিগর্ভ সময়।

একাত্তরের ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচী ৭ মার্চ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের একদিন আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার হুমকি বাঙালীকে উত্তেজিত করে তোলে। এমনিতেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে লাগাতার হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলন চলছে। ইয়াহিয়ার ভাষণের পর তা নতুন মাত্রা পায়।

বাঙালীর প্রবল আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা। কি ভাবে বাঙালীর এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করা যায় সে ব্যাপারে নীলনকশা করতে থাকে সামরিক জান্তা ও তাদের এদেশিয় দোসররা।

বিশ্বের কাছে স্বাধীনতার জন্য বাঙালীর এই বাঁধভাঙ্গা আন্দোলন-সংগ্রামের খবর যাতে কোনভাবেই যেতে না পারে সেজন্য তৎপর হয়ে উঠে পাকিস্তানি জেনারেলরা। শুধু সেন্সরশিপ আরোপই নয়, কোনভাবেই যাতে বাঙালীর আন্দোলন-সংগ্রামের খবর না ছাপা হয় সেজন্য প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসে ফোন বা সশরীরে গিয়ে হুমকি-ধমকিও দেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে হরতাল চলাকালে গত কয়েকদিনে সেনাবাহিনীর নির্বিচার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার ভাষণে এ ক’দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য বঙ্গবন্ধু ও বাংলার জনগণকে দায়ী করেন। ৫ মার্চ ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো ৫ ঘণ্টা গোপনে বৈঠক করে যে খসড়া তৈরি করেছিলেন বক্তৃতায় সেটিই প্রতিফলিত হয়।

অন্যান্য ঘটনাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙ্গে ৩৪১ জন কারাবন্দী পলায়নকালে পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়।

এদিন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক শাসক লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে সরিয়ে তদস্থলে ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ খ্যাত লে. জেনারেল টিক্কা খানকে উভয় পদে নিযুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এদিকে এয়ার মার্শাল আসগর খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “পরিস্থিতি রক্ষা করার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। বাকি বিষয় আগামীকাল শেখ মুজিবের বক্তৃতায় জানতে পারবেন।”

কার্যত, সারা দেশের মানুষ এদিন থেকে অধীর আগ্রহে প্রহর গুনতে থাকে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে পরবর্তী দিকনির্দেশনা জানার।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ মার্চ ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়