ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অবিশ্বাস্য ৯ পরিবার

আসিফ রাতুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৫, ২৮ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অবিশ্বাস্য ৯ পরিবার

আসিফ রাতুল : আমরা অনেক সময় মনে করি যে, আমাদের পরিবার বিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত পরিবার। কিন্তু পরে বুঝতে পারি যে, আমাদের পরিবার বাকিদের মতোই স্বাভাবিক একটি পরিবার।

তবে এ প্রতিবেদনে বিশ্বের এমন ৯টি পরিবার সম্পর্কে বলা হল, যা আপনি বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে, এমন পরিবারও হয়।

 

ডাগার পরিবার ( এক দম্পত্তির ১৯ সন্তান)

যুক্তরাষ্ট্রের জিম বব এবং মিশেল ডাগার দম্পত্তি ১৯ সন্তানের জনক। এই দম্পত্তির ৯ মেয়ে এবং ১০ ছেলে রয়েছে। তারা ‘১৯ কিডস অ্যান্ড কাউন্টিং’ নামক একটি টিভি রিয়েলিটি শো করেছে। তাদের অনেকগুলো সন্তান নেওয়ার নেপথ্যের কারণটা খুব সহজ, তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে কোনো ধরনের গর্ভনিরোধক নিতে অস্বীকার করে। তারা ধর্মপ্রাণ ব্যাপটিস্ট এবং ঈশ্বরের বিশুদ্ধতা, বিনয় এবং বিশ্বাসের মূল্যবোধ নিয়ে প্রায়ই আলোচনা করে থাকে।

 

চানা পরিবার (এক পুরুষের ৩৯ স্ত্রী)

যদি ডাগার পরিবারটিকে আপনার বিশাল পরিবার মনে হয়, তাহলে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের জিয়োন চানা নামক এই মানুষটার কথা শুনে কি মনে হবে, যিনি ৩৯ জন নারীকে বিয়ে করেছেন, ৯৪ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং ১৪ পুত্রবধূ ও ৩৪ নাতি-নাতনিসহ তার পরিবারে মোট ১৮০ জন সদস্য রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম পরিবারের প্রধান হওয়ায় তিনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অধিকারী।

 

মার্শাল পরিবার (কৃত্রিম স্তনের পরিবার)

এই পরিবারের মা এবং কন্যা সবাই অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে নকল স্তনের অধিকারী হয়েছেন। এক মেয়ে ব্রিটনি মার্শাল ব্যতীত পরিবারের অন্য সকল নারীরা কৃত্রিম বড় বুকের অধিকারী। ব্রিটনি তার পরিবারের একমাত্র নারী যিনি এখনো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার বাকি বোনদের মতো হয়নি। কোনো সন্দেহ নেই, এটি বিশ্বের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য পরিবারের মধ্যে একটি।

 

ম্যানশন পরিবার (মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত পরিবার)

চার্লস ম্যানসন সম্ভবত ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত এবং জনপ্রিয় সিরিয়াল কিলার। তিনি একজন সংগীতশিল্পী হলেও ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের জন্য কুখ্যাত খুনী হয়ে উঠেন। চার্লস নিজেকে যিশু খ্রিষ্ট হিসেবে প্ররোচিত করেছিল এবং মানুষকে হত্যা করে রহস্য-উন্মোচক জাতি যুদ্ধ সৃষ্টির প্রত্যাশায় ছিল। সে ছিল স্পষ্টতই একজন উন্মাদ ব্যক্তি। তার পরিবার ছিল অপরাধীদের একটি গ্রুপ, যারা অনেক অপরাধ করেছে।

 

লিয়া এবং অ্যারো (ভ্যাম্পায়ার দম্পতি)

লিয়া বেনিংহফ এবং অ্যারো ড্রেভেন- এই প্রেমিক যুগল প্রতি সপ্তাহে একে অপরের রক্ত পান করে থাকে। তারা বিশ্বাস করে যে, একে অপরের রক্ত পান ​​চিরদিনের জন্য তাদের একসঙ্গে রাখবে। তারা ইন্টারনেটে একটি ভিডিও উন্মুক্ত করেছে, যেখানে দেখা গেছে তারা উভয়েই নিজেদের কাটছে এবং অন্যজন রক্ত পান করছে।

 

থেরেসা নর ও তার শিশুরা (পাগল মা)

থেরেসা নর ৬ সন্তানের মা এবং শারীরিক এবং মানসিকভাবে তিনি তার সন্তানদের নির্যাতন করতেন। তিনি ৪ বার বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হোন কিন্তু সম্ভবত তার অস্বাভাবিক মনের কারণে প্রতিবারই তার ডিভোর্স হয়। চতুর্থ ডিভোর্সের পর থেরেসা আরো বেশি বদমেজাজী হয়ে ওঠে এবং প্রচুর মদ্যপান করতে শুরু করে। যার ফলে তার ওজন বেড়ে যায় এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

তিনি বাইরের জগতের সঙ্গে তার সব সন্তানদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। সন্তানদের বাইরে যেতে ও ফোনে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না। অনেক বছর ধরে থেরেসা তার সন্তানদের নির্যাতন করে। লাঠি দিয়ে মারধর, সিগারেটের ছ্যাকা, তাদের ওপর ছুরি ছুঁড়ে এবং বন্দুক দিয়ে হুমকি দিয়ে, বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতন করতো। বিশেষ করে বড় দুই মেয়ের ওপর তার অত্যাচারের মাত্রা বেশি ছিল এবং তিনি তার সবচেয়ে ছোট সন্তানটির ওপর নির্যাতনে তাকে সাহায্য করার জন্য অন্য সন্তানদের বাধ্য করতো। থেরেসা ভাবতো তার বড় মেয়ে সুসান একজন জাদুকরী। মায়ের অত্যাচার থেকে বাচঁতে সুসান একবার বাড়ি থেকে পালিয়ে পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ সুসানকে আবার তার মায়ের কাছে ফেরত পাঠায়, কারণ তার মা পুলিশকে বিশ্বাস করিয়েছিল যে, সুসান মানসিক ভারসাম্যহীন। পরবর্তীতে সুসানের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত সুসানের বুকে গুলি করে হত্যা করে তার মা থেরেসা। এ ঘটনায় থেরেসার যাবজ্জীবন সাজা হয়।
 

পডকোপেভ পরিবার (সিরিয়াল হত্যাকারী পরিবার)

স্বামী, স্ত্রী এবং দুই কন্যা নিয়ে রাশিয়ান এক পরিবার। তবে এই পরিবার নারী ও শিশুসহ ৩০ জনকে হত্যা করার জন্য কুখ্যাত। মূলত ডাকাতি করতো পডকোপেভ দম্পত্তি। সবকিছু লুটে নিয়ে খুন করতে দ্বিধা করতো না। ডাকাতির প্রতিশোধ নিতে এই দম্পত্তির কন্যা ভিক্টোরিয়াকে খুন করে এক ভিকটিম। পরবর্তীতে পুরো পরিবারও করুণ পরিণতি ভোগ করে।
 


ফ্রিটজেল পরিবার (মানসিক বাবা, বোকা মা এবং অভাগী মেয়ে)

ফ্রিটজেল কেস ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, যখন এলিজাবেথ ফ্রিটজেল অস্ট্রিয়ার স্থানীয় পুলিশকে বলেছিলেন যে তাকে ২৪ বছর ধরে তার পিতা বন্দী করে রেখেছিল। তাকে কেবল বাড়ির বেসমেন্টে বন্দীই করে রাখা হয়নি, বরঞ্চ ২৪ বছর ধরে নির্যাতন এবং ধর্ষণ করেছিল তার বাবা জোসেফ ফ্রিটজেল। বাবার যৌন নির্যাতনের ফলে এলিজাবেথের ৭ সন্তানের জন্ম হয়। এদের মধ্যে চারজন মায়ের সঙ্গে ছিল এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যার কারণে একজন জন্মের কয়েকদিনের মধ্যে মারা যায়। বাকি তিন শিশুকে জোসেফ এবং তার স্ত্রী লালনপালন করতো।  কেরস্টিন নামের বড় মেয়ে যখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলিজাবেথকে অনুমতি দিয়েছিল জোসেফ। আর এর মাধ্যমেই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
 


কোল্ট ক্লান (নিজেদের মধ্যে ব্যাভিচারে লিপ্ত পরিবার)

এই পরিবারের ঘটনাটি অনেকের কাছে অস্বস্তিকর লাগতে পারে, কারণ পুরো পরিবারটি নিজেদের মধ্যে যৌন সম্পর্কে ছিল, তাই এটা না পড়ে এড়িয়ে যেতে পারেন।

২০০৩ সালের অস্ট্রেলিয়ার কোল্ট ক্লান পরিবারের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে, যা সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার সরকারকেও হতবাক করেছিল। পিতামহ থেকে মা, বাবা, কন্যা, পুত্র, আন্টি, আংকেল, ভাতিজা, ভাতিজি, ভাই, বোনসহ ৪০ সদস্যের পরিবারটি নিজেদের মধ্যে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত ছিল।

দুই অভিবাসী ভাই এবং বোন মাধ্যমে ঘটনার শুরু এবং তা ৪ প্রজন্ম পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পুরো পরিবারের বসবাস ভয়ানক পরিবেশে ছিল, টিনের ছাদের ঘর এবং পানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ ছিল না।

ক্লোল্ট ক্লান পরিবারের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে যখন পরিবারের এক শিশু কণ্যা তার ভাইদের মাধ্যমে গর্ভবতী হয় এবং জানতে পারে না যে, কোন ভাই তার সন্তানের আসল পিতা।

তথ্যসূত্র : ওয়ান্ডার্স লিস্ট
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ মে ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়