ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অর্থ উত্তোলনে সহায়তা চেয়েছে জলবায়ু ফান্ড

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অর্থ উত্তোলনে সহায়তা চেয়েছে জলবায়ু ফান্ড

কেএমএ হাসানত : জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের ৫০৮ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ফার্মার্স ব্যাংকে গচ্ছিত রেখে বিপদে পড়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে একটি হিসাবের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ব্যাংকটিতে গচ্ছিত অর্থ উত্তোলন করতে পারছে না মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক দীপক কান্তি পাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে বিষয়টি নিয়ে একটি চিঠি দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দি ফার্মার্স ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা এর বিভিন্ন শাখায় জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের মোট ৫০৮ কোটি ১৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা এক বছর মেয়াদে স্থায়ী আমানত হিসাবে রক্ষিত আছে। রক্ষীত স্থায়ী আমানতের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ ২২০ কোটি ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ৬৮০ টাকা নগদায়ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা/নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরকে অনুরোধ করা হয়েছিল। সে প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে  গত ২৩ জানুয়ারি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ ২২০ কোটি ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ৬৮০ টাকার স্থায়ী আমানতের অর্থ পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করার জন্য ফার্মার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দি ফার্মার্স ব্যাংক মতিঝিল শাখায় রক্ষিত জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ১৭৩ কোটি ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫০ টাকার আরো একটি এফডিআর ২১ জানুয়ারি মেয়াদউত্তীর্ণ হয়েছে। সেটি নগদায়নের জন্য গত ১৪ জানুয়ারি এবং চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখে তাগিদ পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু দি ফার্মর্স ব্যাংক মতিঝিল শাখা অদ্যাবদি স্থায়ী আমানতসমুহ সুদাসলসহ নগদায়ন করেনি।

এ অবস্থায় চিঠিতে ব্যাংকটির মতিঝিল শাখায় রক্ষিত জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ১৭৩ কোটি ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫০ টাকা নগদায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতালি সফরে যাওয়ার আগে রাইজিংবিডি’র এ প্রতিনিধির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। সে সময় ফার্মার্স ব্যাংকের সার্বিক বিষয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকটি সমস্যায় পড়েছে। কোন ব্যাংক দেউলিয়া হোক, তা সরকার চায় না। কারণ, এটা যে কোন দেশের জন্য খুবই ভয়াবহ বিষয়। ব্যাংকটিকে এ অবস্থা থেকে কীভাবে উদ্ধার করা যায় সে বিষয়ে ভেবে দেখতে হবে। কারণ, এটি একটি বেসরকারি খাতের ব্যাংক।’

এর আগে ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি, অনিয়ম, গ্রাহকের আমানতসহ জলবায়ু তহবিলের গচ্ছিত অর্থ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দেয়  ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বিবৃতিতে সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে, ‘ফারমার্স ব্যাংকে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের গচ্ছিত ৫০৮ কোটি টাকা আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর চাহিদা অনুযায়ী ফেরত দিতে ব্যর্থতার ঘটনা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, পুরো ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনিসংকেতও।’

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সরকারকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল গঠনের উদ্যোগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে   উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই তহবিলের অর্থ তুলনামূলকভাবে সুখ্যাতিসম্পন্ন ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠানে জমা না রেখে কোন যুক্তিতে, কার স্বার্থে ফারমার্স ব্যাংকে অধিক মুনাফার নামে রাখা হল, সেই প্রশ্নই এখন সবার।’

তহবিলটি পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সকলের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল ছাড়ে বিলম্ব হলে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পাবে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ এর থেকে উত্তরণে জলবায়ু তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানায় টিআইবি।

ড. জামান বলেন, ‘তারল্য সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ফারমার্স ব্যাংকের প্রতি আস্থা হারিয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন  গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠান তাদের আমানতের বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। ঋণ জালিয়াতিসহ ব্যাংকটির লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির বোঝা গ্রাহকদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

বিবৃতিতে ড. জামান আরও বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ গ্রাহকদের ফেরত প্রদানসহ ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতি ও অন্যান্য অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। শুধু পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন বা ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন যথেষ্ট নয়। ফারমার্স ব্যাংক তথা সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের স্বার্থে আগের পরিচালনা পর্ষদসহ এ ব্যাংকের শীর্ষ পর্র্যায়ের উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা এ সংকটের জন্য দায়ী, তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়