ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

অ্যাপলের পণ্যের দাম অনেক বেড়েছে

স্বপ্নীল মাহফুজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অ্যাপলের পণ্যের দাম অনেক বেড়েছে

প্রতীকী ছবি

স্বপ্নীল মাহফুজ : ২০১৮ সালে অ্যাপল তাদের প্রায় সব ধরনের প্রযুক্তির পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। দেখা গেছে, জনপ্রিয় প্রযুক্তিপণ্যগুলোর দাম গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে। অ্যাপল কর্তৃপক্ষের মতে, ‘উচ্চ দাম ন্যায্য, কারণ পণ্যগুলো আগের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত।’ কিন্তু এই চড়া দাম গ্রাহকদের জন্য সুখকর নয়।

আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন যে, ২০১৮ সাল জুড়ে বাজারে আসা অ্যাপলের প্রায় সব ধরনের প্রযুক্তির পণ্যের দাম অনেক বেশি।

২০১৬ সালে অ্যাপল তাদের নতুন আইফোন ৭-এর দাম শুরু করেছিল ৬৪৯ ডলার থেকে। ২০১৭ সালে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের নতুন আইফোন ৮-এর দাম শুরু করেছিল ৬৯৯ ডলার থেকে, আগের বছরের তুলনায় দাম ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করেছিল। ২০১৮ সালে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের নতুন আইফোনের দাম আরো বেড়েছে। আইফোন ১০আর-এর মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৭৪৯ ডলার, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৭ শতাংশ এবং ২০১৬ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি দাম।

২০১৭ সালে ১০.৫ ইঞ্চি আইপ্যাড প্রো ট্যাবলেটের দাম শুরু হয়েছিল ৬৪৯ ডলার থেকে। ২০১৮ সালে ১১ ইঞ্চি আইপ্যাড প্রো ট্যাবলেটের দাম শুরু করা হয় ৭৯৯ ডলার থেকে। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে আইপ্যাড প্রো ট্যাবলেট পিসির দাম বাড়িয়েছে ২৩ শতাংশ বাড়িয়েছে অ্যাপল।

২০১৭ সালে ১২.৯ ইঞ্চি আইপ্যাড প্রো ট্যাবলেটের দাম শুরু হয়েছিল ৭৯৯ ডলার থেকে। ২০১৮ সালে ১২.৯ ইঞ্চি আইপ্যাড প্রো ট্যাবলেটের দাম শুরু করা হয় ৯৯৯ ডলার থেকে। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে অ্যাপল এই ট্যাবলেট পিসির দাম ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছে।

২০১৭ সালে ছোট আকৃতির ডেস্কটপ পিসি ম্যাক মিনি’র দাম শুরু হয়েছিল ৪৯৯ ডলার থেকে। ২০১৮ সালে এর দাম শুরু হয় ৭৯৯ ডলার থেকে। অর্থাৎ এ বছর ম্যাক মিনি পিসির দাম ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে অ্যাপল।

২০১৭ সালে ম্যাকবুক এয়ার ল্যাপটপের দাম শুরু হয়েছিল ৯৯৯ ডলার থেকে। ২০১৮ সালে ম্যাকবুক এয়ার ল্যাপটপের দাম শুরু করা হয় ১১৯৯ ডলার থেকে, ২০১৭ সালের তুলনায় দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

২০১৭ সালে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ থ্রি (শুধু জিপিএস ফিচারযুক্ত) স্মার্ট ওয়াচের দাম শুরু হয়েছিল ৩২৯ ডলার থেকে। ২০১৮ সালে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ফোর (শুধু জিপিএস ফিচারযুক্ত) স্মার্ট ওয়াচের দাম শুরু করা হয় ৩৯৯ ডলার থেকে, দাম বাড়ানো হয়েছে ২১ শতাংশ।

২০১৭ সালে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ থ্রি (জিপিএস এবং সেলুলার- উভয় ফিচার যুক্ত) স্মার্ট ওয়াচের দাম শুরু হয়েছিল ৩৯৯ ডলার থেকে। ২০১৮ সালে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ফোর (জিপিএস এবং সেলুলার- উভয় ফিচারযুক্ত) স্মার্ট ওয়াচের দাম শুরু হয়েছে ৪৯৯ ডলার থেকে, দাম বাড়ানো হয়েছে ২৫ শতাংশ।

অ্যাপলের এই দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপ বাস্তবায়নে পথের কাটা হিসেবে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের আইফোনের মডেলটিকে সরিয়ে নেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে। ৩৫০ ডলার মূল্যের আইফোন এসই বাজারে আর সরবরাহ করবে না বলে জানিয়েছে।

সবচেয়ে কম দামের এবং সবচেয়ে বেশি দামের যথাক্রমে ১৫০ ডলার থেকে শুরু হওয়া অ্যাপল টিভি এবং ৫০০০ ডলার থেকে শুরু হওয়া আইপ্যাক প্রো ডেস্কটপ পিসির দাম বিগত বছরের তুলনায় বাড়ানো হয়নি।

অ্যাপলের দৃষ্টিতে, উচ্চ দাম সম্পূর্ণভাবে যুক্তিসঙ্গত। উদ্ভাবনী খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি আধুনিক সব ফিচার যুক্ত করার কারণেও ডিভাইসগুলো ব্যয়বহুল হয়েছে। যেমন আইফোন ১০ এ ব্যবহৃত ওএলইডি ডিসপ্লে প্রযুক্তির খরচ বিগত প্রযুক্তির তুলনায় বেশি।

এ বছর অ্যাপলের এক সিদ্ধান্ত হতাশ করেছে বিনোয়োগকারীদের। প্রতিষ্ঠানটির এক ঘোষণায় জানিয়েছে, তারা আয়ের রিপোর্টগুলোতে সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য আইফোন কতসংখ্যক বিক্রয় হয়েছে, সেই তথ্য প্রকাশ করবে না। এ ঘটনায় শেয়ারবাজারে দরপতন হয় অ্যাপলের। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী আইফোনের বিক্রি কম হওয়াটা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে মূল্যবৃদ্ধি।

কি কারণে অ্যাপল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তা আসলে কোনো বিষয় না। অ্যাপল দাম বাড়াচ্ছে কারণ, লোকজন যেকোনো ভাবে হোক অ্যাপলের পণ্য কিনছে।

অনেক প্রযুক্তিপ্রেমীরা অ্যাপলের পণ্যের জন্য অতিরিক্ত মূল্যের ভার বহন করতে রাজি কারণ তারা বিশ্বাস করেন অতিরিক্ত ভালো মানের পণ্য পাচ্ছেন। অ্যাপল একটি অনন্য প্রযুক্তি কোম্পানি যারা তাদের হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং অন্যান্য সকল ডিভাইসের সার্ভিস এবং সেই সঙ্গে শোরুমের উন্নত মান বজায় রাখে। অনেকেই অ্যাপলের এই বিষয়টি পছন্দ করেন।

অ্যাপলের অন্ধভক্তও একটা ব্যাপার। এমনও অনেক অ্যাপলপ্রেমী রয়েছেন যারা ব্র্যান্ডটিকে ভালোবাসেন এবং প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহারে অ্যাপল ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেন না। দামের বিষয়ে মাথা ঘামান না, দামের চেয়ে মানকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

অ্যাপল বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। নাইক এবং সুউশ ব্র্যান্ডের পণ্যের দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যায়, যখন তাদের কোনো পণ্যে অ্যাপলের লোগো থাকে। অ্যাপল হচ্ছে প্রযুক্তি, পাশাপাশি এটি ফ্যাশনও।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, উচ্চ দাম নির্ধারণে মনস্তাত্বিক কৌশলও জড়িত। যখন কোনো পণ্যের দাম বেড়ে যায়, কম সংখ্যক লোকই সেটি কিনতে সক্ষম হয়, যা পণ্যটিকে বিরল করে এবং মানুষজনের মধ্যে সেটির জন্য আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করে। সম্ভবত এটি আপনাকে ঈর্ষাপরায়ন করে তোলে, আপনি ভাবেন যে আপনার আরো টাকার প্রয়োজন, যার ফলে অ্যাপলের পণ্য কিনতে পারবেন।

অ্যাপলের এই মূল্য কৌশল সম্ভবত শিগগির পরিবর্ত হবে না। তাছাড়া উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি করা কোনো সস্তা কাজ নয় এবং সকল বয়সীদের কাছে অ্যাপল এখনো জনপ্রিয়। তা সত্ত্বেও, এর মানে এই নয় যে, ২০১৮ সালে অ্যাপল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ব্যবহারকারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থনযোগ্য ছিল।

তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়