ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আইডিএ-১৮ ঋণের বড় অংশ পাওয়া যাবে : মুহিত

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইডিএ-১৮ ঋণের বড় অংশ পাওয়া যাবে : মুহিত

বিশেষ প্রতিবেদক : বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিএ) তার সদস্য দেশগুলোতে ২০১৮ সালের জন্য ৭৫ বিলিয়ন ডলার (আইডিএ-১৮) ঋণ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর একটি বড় অংশ বাংলাদেশ পাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে বিশ্বব্যাংকের ফাইন্যান্স অ্যান্ড মার্কেটস গ্লোবাল প্র্যাকটিস বিভাগের পরিচালক সেবাস্টিয়ান এ মলিনিয়াসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে। এই প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি কুমিও ফান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল একটি চূড়ান্ত ধরনের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আইডিএ প্রতি তিন বছর পর নবায়ন হয়। ১৭ তম আইডিএ এ বছর শেষ হচ্ছে। গত বছর আমরা ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি করেছিলাম। এবার ২ বিলিয়ন ডলারের মতো। কিন্তু ২ বিলিয়ন হচ্ছে না। কিছু কম হবে। তারা এসে বলল, আমরা যেহেতু ভালো করছি সেহেতু যেসব দেশের অর্থ থেকে যাবে, সেটা এখানে নিয়ে আসা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘২০১৭ সালে পাইপলাইনে থাকা কিছু প্রকল্প নিয়ে আমরা কথা বলেছি। সেখানে একটা বড় প্রোগ্রাম হচ্ছে হাউজিংয়ের জন্য। আরেকটা প্রোগ্রাম আছে স্কেল আপ ফ্যাসিলিটি। এটা হচ্ছে কোনো প্রকল্পের জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি সুদে টাকা নেওয়া। এটার জন্য প্রয়োজন ৩০০ মিলিয়ন ডলার। তবে আইডিএ থেকে যেটা পাব সেটা ২০০ মিলিয়ন ডলার।’

তিনি বলেন, ‘আমার রায় হচ্ছে, আমাদের ঋণভার বিবেচনায় নিয়ে আমরা এই সুবিধা নিতে পারি। যেটা আমরা এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সাথে করছি। আমরা তাদের মূল তহবিল এশিয় উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার করি। অর্ডিনারি রিসোর্সও ব্যবহার করি। এই দুটি সুবিধা বিশ্বব্যাংক থেকেও নিতে চাই। এখন আমরা তাদের নিয়মিত তহবিল থেকে টাকা নিচ্ছি না। আমরা আইডিএ নিচ্ছি, আর স্কেল আপ সুবিধা দিয়ে আইডিএ-এর পরিমাণ বাড়াচ্ছি।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইনস্যুরেন্স ও পেনশন পদ্ধতির উন্নয়নে তাদের একটা কর্মসূচি ছিল। আমি সেটাকে দুটি ভিন্ন কর্মসূচি করতে বলি। ২০১৮ সাল নাগাদ পেনশনে আমরা একটা বড় কর্মসূচি আশা করছি। এই তিনটি প্রকল্পের অগ্রগতি ধীরগতিতে হচ্ছে। এটা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন তারা।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আইডিএ-১৮ এ ৭৫ বিলিয়ন নির্ধারিত হয়েছে। আইডিএ-১৭ তে এটা ছিল ৫২ বিলিয়ন। এই প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। আইডিএ-১৮ বড় হলে আমাদের অংশও বড় হবে। ২ বিলিয়ন থেকে ৩ বিলিয়ন হবে। সেটা নিয়ে সামান্য আলোচনা হয়েছে- এটাকে আমরা কীভাবে দেখছি। স্থিতিশীলতা এবং একনিষ্ঠতা একটা বড় বিষয় হবে। এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনা করছে। হ্যাকিংয়ের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এটা নিয়ে সিরিয়াসলি আলোচনা করছে।’

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তি গত নয় বছরে এই সরকারের অন্যতম মূল নীতি। সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের কাছ থেকে আমরা এটা অনেক শুনেছি। তার সময়ে এটাকে তিনি কোর প্রোগ্রামের পর্যা্য়ে নিয়ে গেছেন। আমাদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তি বিশ্বে অন্যতম সেরা। কারণ, আমরা ব্যাংকিংয়ের আওতায় জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭০ ভাগকে নিয়ে এসেছি। এটা এই দেশে খুবই অসাধারণ অর্জন। এটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিশেষ করে কৃষি মন্ত্রণালয়কে কৃতিত্ব দেওয়া যায়। এটা শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এস কে সাদেক যখন শিক্ষকের বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়ার নিয়ম করেন, তখন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। ১০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মতিয়া চৌধুরী আরো বড় করে দিলেন। যার ফলে এবারের আইডিএতে অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তি দ্বিতীয় শীর্ষে চলে আসে। তৃতীয়টা হচ্ছে, জাতীয় পেনশন স্কিম সেখানে আসবে। ২০১৮ সালের মধ্যে হয়তো আমরা একটা আউটলাইন দেব। এটার বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০১৯ সালের মধ্যে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত কয়েক মাসে পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো হয়েছে। এটা যাতে আরো বেগবান হয়, সে চেষ্টা হবে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে আমাদের এজেন্ডা আছে। আমাদের বন্ড মার্কেট নেই। এটা সম্পর্কে কিছু করতে হবে। এই মুহূর্তে আমার কোনো আইডিয়া নেই। আমাদের একটা গ্রুপ এটা নিয়ে কাজ করছে। পেনশনের সঙ্গে এটা সম্পর্কিত। এটাতে আমাদের কিছু করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘তারা (বিশ্বব্যাংক) পশুসম্পদে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমার উদ্যোগে আমাদের মন্ত্রণালয় একটা পশুসম্পদ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তাদের আগ্রহের মূলে রয়েছে গরু। এটাকে তারা আরো বড় করে করতে চায়। এ বিষয়ে দ্রুত তারা রোডম্যাপ টু ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর করতে চায়। সেটার জন্য একটা আউটলাইন দিতে বলেছি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারা সেটা দেবে। যাতে আমরা নিজেদের বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি। মঙ্গোলিয়াতে তারা ভালো একটা পশুসম্পদ কর্মসূচি করেছে, আমরা তাদেরকে এটার একটা আউটলাইন দিতে বলেছি। এটা থেকে কিছু শিক্ষা নিতে পারি।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘পরবর্তী কর্মসূচি ডিজিটাইজেশন। এটাতে বাংলাদেশ বেশ অগ্রগামী। আমাদের এটুআই এটা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে বিস্তারিত কথা বলেছে। ডিজিটাল পেমেন্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটা দুর্নীতি কমিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আর এ কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হবে। আইডিএ-১৭ মার্চের মধ্যে শেষ হবে। এরপর আমাদেরকে আইডিএ-১৮ নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।’

এর আগে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কোকাকোলা কোম্পানির সিইও এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল ছাড়াও তার নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেখা করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কোকাকোলা কোম্পানি ভালুকায় একটা ইন্টিগ্রেটেড কারখানা স্থাপন করছে। কোকাকোলার প্রেসিডেন্ট সাহেব ঢাকায় আছেন। তাদের পক্ষে কাজ করছেন মিসেস প্যারেসিতা শেফা। যার স্বামী একসময় আমাদের এখানে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তখন তিনিও এখানে ছিলেন। তিনিও পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজ করেছেন। তার স্বামী এখানে থাকতেই তিনি শ্রীলঙ্কায় রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সেখানে আমি যাব। ১৭ তারিখে কারখানার উদ্বোধন হবে।’

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা অর্থমন্ত্রীর কাছে তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানো এবং সিলেট নগরীর বাইরে সদর হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জানুয়ারি ২০১৬/হাসনাত/রফিক/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ