আইন লঙ্ঘন : হাইকোর্টে ব্যাখ্যা দিলেন ২ বিচারক
নিজস্ব প্রতিবেদক : তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এক মামলায় আসামির জামিনের আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা এবং না করার প্রশ্নে হাইকোর্টে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও মাগুরার জেলা ও দায়রা জজ।
ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৭১ ধারার বিধানমতে ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন আবেদন শুনানি করার এখতিয়ারসম্পন্ন। কারণ ইতিপূর্বে পৃথক চারটি মামলার আসামিকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে জামিনের বিষয় নিষ্পত্তির আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। আইনের বিধানমতে এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ট্রাইব্যুনাল জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছে। এরপরেও জামিনের বিষয়টি শুনানির জন্য গ্রহণ করে অনিচ্ছাকৃত কোনো ত্রুটি করে থাকলে ক্ষমা প্রার্থনা করা হলো।
অপরদিকে মাগুরার জেলা ও দায়রা জজ তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৭৪ ধারা মোতাবেক সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠনের পূর্ব পর্যন্ত উল্লিখিত আইনের মামলাসূমহ দায়রা আদালত শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর আইনের ৭১ ধারার বিধানমতে দায়রা আদালত এ ধরনের মামলার জামিন আবেদন শুনানির জন্য আর গ্রহণের সুযোগ নেই। এ কারণে জামিন আবেদনটি গ্রহণ করা হয়নি শুনানির জন্য।
বুধবার বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বশিরউল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে এই লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করা হয়। পরে শুনানি নিয়ে আদালত বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে গত ১৩ মার্চ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলার এক আসামির জামিন আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা না-করার প্রশ্নে দুই বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন হাইকোর্ট। ওই আদেশ মোতাবেক ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সাইফুল ইসলাম এবং মাগুরার জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান হাইকোর্টে নিজ নিজ লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করেন।
আদালতে আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট আমিমুল এহসান জুবায়ের এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ একেএম মনিরুজ্জামান কবির শুনানি করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্টকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মাগুরা জেলার মোহাম্মপুর থানার আহমেদ সবুজ নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
এ মামলায় মাগুরার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।
পরে মাগুরার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন আহমেদ সবুজ। কিন্তু দায়রা জজ আদালত একই বছরের ১৭ নভেম্বর এই মামলা শুনানিতে অস্বীকৃতি জানান।
এরপর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে জামিন আবেদন করলে ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আহমেদ সবুজের আইনজীবী। হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে উপরোক্ত আদেশ দেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির বলেন, আইনুযায়ী যেকোনো মামলার বিচার আমলে নেওয়ার আগ পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের যেকোনো আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালত শুনানি গ্রহণ করবেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দায়রা জজ ওই জামিন আবেদন শুনানিতে মৌখিকভাবে অস্বীকৃতি জানান। অপরদিকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের যেকোনো মামলা আমলে নেওয়ার আগ পর্যন্ত সাইবার ট্রাইব্যুনাল শুনানি করতে পারেন না। কিন্তু এ মামলা আমলে নেওয়ার আগেই সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শুনানি করেছেন। এসব বিষয়ে দুই বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মার্চ ২০১৭/মেহেদী/মুশফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন