ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

আইসিসির প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় ৭ জয় (প্রথম পর্ব)

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২৫ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইসিসির প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় ৭ জয় (প্রথম পর্ব)

রুহুল আমিন : তথাকথিত বড় দলগুলোকে বাংলাদেশ হারাতে পারে না, আগে নিয়মিতই এই কথা শোনা যেত। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ঠিক যতটুকু যোগ্য বলে দাবিদার বাংলাদেশ সেটুকুও যেন দিতে চায় না বড় দলগুলো বা তথাকথিত ক্রিকেট বিশষজ্ঞরা। সব সময় বাংলাদেশ দল আন্ডাররেটেড এবং প্রাপ্য প্রশংসাটুকুও করা হয় না। তবে বাংলাদেশ সমালোচকদেরকে সব সময় জবাব দিয়েছে এবং কখনো কখনো লজ্জায়ও ফেলেছে। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে তাদের বেশ কয়েকটি স্মরণীয় জয় আছে। আর তাদের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ও আশ্চর্যজনক জয়টি ছিল ২০০৫ সালে কার্ডিফে ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। 

এ ছাড়াও বিশ্ব আসরে বেশ কয়েকবার তারা তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে জানান দিয়েছে। আট দলের অংশ গ্রহণে নক-আউট পদ্ধতির আইসিসি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েও তারা তাদের সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে আবার। বৈশ্বি টুর্নামেন্টে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে এই পর্যন্ত সাতবার পরাজিত করেছে। যা সত্যি অবিস্মরণীয় বাংলাদেশ দলের জন্য। চলুন দেখে আসি সেই সাত জয়: 

১. ১৯৯৯ বিশ্বকাপ, নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় : ১৯৯৯ সালের ফাইনালিস্ট পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নবাগত বাংলাদেশের বিপক্ষে হার ছিল সবচেয়ে বড় ধাক্কা। নর্দাম্পটনের কাউন্টি গ্রাউন্ডে টসে জিতে পাকিস্তানের অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়। ওয়াসিম, ওয়াকার ও শোয়েবের ভয়ঙ্কর সেই বোলিং আক্রমণের সামনে পড়ে বাংলাদেশ। তবে শাহরিয়ার হোসেন ও মেহরাব হোসেনের উদ্বোধনী জুটি উড়ন্ত এক সূচনায় পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ তেমন একটা চাপ তৈরি করতে পারেনি। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৬৯ রান। তবে খেলার মধ্যবর্তী সময়ে লেগ স্পিনার সাকলাইন মোস্তাকের ঘুর্ণিতে বাংলাদেশ তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। সাকলাইন পাঁচ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ দলে একাই ধস নামিয়ে দেন। এই ম্যাচে পাকিস্তান অতিরিক্ত ৪০ রান দেয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২২৩ রান করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ২২৩ রানের পুঁজিতেই ঘটবে এক ভয়াবহ ঘটনা ক্রিকেট বিশ্বের কেউ কি ভেবেছিল তখন। বাংলাদেশি মিডিয়াম পেসার খালেদ মাহমুদ সুজনের বোলিংয়ে পাকিস্তানের টপ ও মিডল অর্ডার এলোমেলো হয়ে যায়। মাত্র ৪২ রানে পাকিস্তান হারিয়ে ফেলে মূল্যবান পাঁচ উইকেট। অলরাউন্ডার আজহার মাহমুদ ও অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম আউট হওয়ার আগে ৫৫ রান যোগ করেন। তারপরও ১৬১ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান। ৩১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হন খালেদ মাহমুদ সুজন।

 


২. ২০০৭ বিশ্বকাপ, পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে জয় : আক্রমণাত্মক ও বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে ভারত টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের পেস ও স্পিন বোলাররা নীল জার্সিধারী ভারতকে বেশ ভুগিয়ে ছাড়ে এদিন। শুরুটা করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। মাশরাফির পেসের সঙ্গে সুইং আর অভিজ্ঞ স্পিনার মোহাম্মদ রফিক বেশ ঝামেলায় ফেলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। একসময় ভারত ৭২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে। তবে সৌরভ গাঙ্গুলি খুব কষ্টে সৃষ্টে ১২৯ বল খেলে ৬৬ রান করেন। যুবরাজ সিং একটু আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। তিনি ৫৮ বল খেলে ৪৭ রান করেন। ভারতীয় ইনিংসের শেষের দিকে আবার মাশরাফি, রফিক ও আব্দুর রাজ্জাক চেপে ধরেন। মাশরাফি ৩৮ রানে ৪ উইকেট নেন। ভারত ১৯১ রানের এক লজ্জাজনক স্কোর গড়ে।

সেদিন বাংলাদেশের তরুণ ওপেনার তামিম ইকবাল বাংলাদেশের দর্শকদের দারুণ এক খেলা উপহার দেন। তিনি ভারতীয় পেস আক্রমণের বিপক্ষে নির্ভয়ে খেলে ৫১ রান করেন। এ ছাড়া মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ৫৬ রান ও সাকিব আল হাসানের ৫৩ রান ভারতের পরাজয় নিশ্চিত করে। যদিও মুশফিক ও সাকিব খুব ধীরগতিতে ব্যাটিং করেন। শেষ দিকে অবশ্য পার্টটাইম বোলার হিসেবে অফস্পিন করতে আসেন শেবাগ এবং দুইটি উইকেটও নেন তিনি। তবে ততক্ষণে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ের চিত্রনাট্য লেখা সম্পূর্ণ হয়ে গেছে।

 


৩. ২০০৭ বিশ্বকাপ, জর্জটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় : বাংলাদেশ তখন ভারত ও বারমুডাকে হারিয়ে সুপার এইটে জায়গা করে নিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী এক দল। দক্ষিণ আফ্রিকা টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। দক্ষিণ আফ্রিকান বোলার আন্দ্রে নেলের পেস ও বাউন্সে বাংলাদেশ ৮৪ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে। ম্যাচটি লো স্কোর হবে এটাই তখন স্বাভাবিক ধরে নিয়েছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। কিন্তু মোহাম্মদ আশরাফুল তার সেন্সিবল ব্যাটিং দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন। তিনি আফতাব আহমেদকে নিয়ে ৭৬ রান যোগ করে দলকে সামনের দিকে নিয়ে যান। সর্বশেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আশরাফুল যখন আউট হন তখন নিজের নামের পাশে ৮৭ রান যোগ করে ফেলেছেন ততক্ষণে। এ ছাড়া ১৬ বলে ২৫ রান করেন মাশরাফি। নেল ৪৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন। কিন্তু তার পাঁচ উইকেট কাজে লাগেনি অবশ্য। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে নেমে ৮৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে। বাহাতি মিডিয়াম পেসার সৈয়দ রাসেল দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডারে জোড়া আঘাত হানেন। তার সঙ্গে স্পিনার সাকিব আল হাসান ও আব্দুর রাজ্জাক দক্ষিণ আফ্রিকার আশায় গুঁড়ে বালি দেন। তবে শন পোলকের ব্যাটিংয়ে কিছুটা স্বস্তি ও আশার আলো দেখতে পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু শেষের দিকে একটি রান আউট ও স্পিনারদের ট্রিপল আঘাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস গুঁড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ নিজেদের সক্ষমতা দেখিয়ে ৬৭ রানের আরো একটি ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয়।     

 


৪. ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় : ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইংনিসের শুরুতে সৈয়দ রাসেলের বলে ক্রিস গেইল শূন্য রানে ফিরে যান। তবে শিবনারায়ণ চন্দরপাল ও ডেভন স্মিথ খুব সর্তকভাবে ব্যাট করেন। এরপর মারলন স্যামুয়েলসের ১৪ বলে ২৭ ও ডোয়াইন স্মিথের ৭ বলে বিধ্বংসী ২৯ রানের সুবাধে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬৪ রান করে। স্মিথ চারটি ছয় মারেন।

কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ভাগ্যটা সেদিন সুপ্রসন্ন ছিল না। ১৬৪ রান করেও তারা ম্যাচ হারবে তা তারা ভাবেনি বোধহয়। মোহাম্মদ আশরাফুল ও আফতাব আহমেদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১১ ওভারে ১০৯ রান করে বাংলাদেশ। আট বাউন্ডারি দিয়ে ৪৯ বলে ৬২ রান করে আফতাব আহমেদ অপরাজিত থাকেন। আশরাফুল তো আরো বিধ্বংসী। তিনি  সাত চার ও তিন ছয়ে ২৭ বলে ৬১ রান করে আউট হন। সাকিব আল হাসান করেন ৯ বলে ১৩ রান। পার্টটাইম বোলার রামনরেশ সারওয়ানের বলে আউট হন সাকিব। আশরাফুলও তার বলেই আউট হন।কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। কারণ খেলার দুই ওভার হাতে রেখেই চার উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের এই জয়ের ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্রুপ পর্বে বাদ পড়ে দেশের পথ ধরে।  

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ আগস্ট ২০১৭/রুহুল/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ