ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আজও শোকবিহ্বল হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জবাসী

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৩ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আজও শোকবিহ্বল হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জবাসী

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : আজ ৩রা নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ইতিহাসের নজিরবিহীন নৃংশস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন জাতীয় চার নেতা। তাদেরই একজন দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, কিশোরগঞ্জের কৃতি সন্তান শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বছর ঘুরে দিনটি ফিরে এলে প্রিয় মানুষের কথা স্মরণ করে আজও শোকবিহ্বল হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জবাসী।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বীর দামপাড়া গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। সৈয়দ নজরুলের স্মৃতিধন্য বাড়িটিতে বর্তমানে পরিবারের কেউ থাকেন না। আত্মীয়-স্বজনরাই দেখাশোনা করেন। স্বাধীনতার পর এলাকার উন্নয়নে বেশকিছু শিল্পকারখানা গড়ে তোলেন তিনি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে একটি মেডিক্যাল কলেজ ও স্টেডিয়াম করলেও ওই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে।

কিশোরগঞ্জের প্রসঙ্গ এলেই শ্রদ্ধাভারে উচ্চারিত হয় সৈয়দ নজরুল ইসলামের নাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে যাদের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিল, জাতি পেয়েছিল স্বাধীন একটি দেশ, তাদের মধ্যে সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামটি অবিস্মরণীয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম এই পুরুষকে নিয়ে কিশোরগঞ্জবাসীর গর্বের শেষ নেই। তারা জানেন প্রিয় এ নেতার বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর বাংলার মানুষের অধিকার-উন্নয়ন ছাড়া কিছুই চাওয়ার ছিল না।

কিশোরগঞ্জে সৈয়দ নজরুল ইসলামের পৈত্রিক বাড়ির পার্শ্ববর্তী আত্মীয় মো. শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন তার সঙ্গে থেকেছি। মানুষটির ভেতরে কখনো চাওয়া-পাওয়ার কিছু ছিল না। ৩ নভেম্বর নৃংশসভাবে হত্যার পর তার লাশ আরমানিটোলা মাঠে নিয়ে আসা হয়। তখন খালেদ মোশাররফের ক্ষমতা চলে যায় এবং ক্ষমতা পায় খন্দকার মোশতাক। সেনাবাহিনীরা সবাইকে সেখান থেকে চলে যেতে বলে এবং বনানী গোরস্তানে লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেয়। শুধু দুজন- তার ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম এবং বোন জামাতা মো. আসাদুজ্জামনকে লাশের পাশে থাকার অনুমতি দেয়। আমরা কিশোরগঞ্জবাসী এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা  জড়িত ছিল তাদের এই বাংলার মাটিতে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

 



সৈয়দ নজরুল ইসলামের বর্তমান গ্রামের বাড়ির দেখাশুনার কাজ করেন খুরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘আমার আব্বা এ বাড়িটি দেখাশোনা করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে আমি আমার মা ও পরিবার পরিজন নিয়ে এই বাড়িটির দেখাশোনা করছি। আমি ওনাকে কখনো দেখিনি। কিন্তু আমার আব্বা ও এলাকাবাসীর কাছে শুনেছি কীভাবে কারাগারের মতো একটি নিরাপদ জায়গায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। পৃথিবীর বুকে এর চেয়ে জঘন্য কোনো কাজ আর হতে পারে না। তাই সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আমরা কিশোরগঞ্জবাসী হত্যাকারীদের বিচার চাই।’

কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতাকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল যারা, তারাই আবার পরবর্তীকালে ভেবেছিলেন এ হত্যাকাণ্ডটি হয়তো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। তাই তারা রাতের আধারে জেলের সকল আইন ভঙ্গ করে স্বাধীনতার অন্যতম স্থপতি জাতীয় চার নেতাকে ৩ নভেম্বর নির্মমভাবে হত্যা করে। যদি এ চার নেতাকে হত্যা করা না হতো, তাহলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ঘুরে দাঁড়াতো তখনকার সময়েই। এমনকি বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা অল্প সময়ের মধ্যেই একটি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে অর্থনৈতিকভাবে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী দেশে পরিণত হত। ৩ নভেম্বর যারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের বিচারটি পরিপূর্ণ হয়নি। তাদের বিচারটি পরিপূর্ণ করে তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে। কারণ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকাণ্ড এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তরফদার মো. আক্তার জামীল জানান, এবারই কিশোরগঞ্জে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে পালন করা হচ্ছে সৈয়দ নজরুল ইসলামের শাহাদতবার্ষিকী। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ উপলক্ষে শোক র‌্যালি, আলোচনা সভা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রক্তদান কর্মসূচিসহ সারা দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।



রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/৩ নভেম্বর ২০১৭/রুমন চক্রবর্তী/রুহুল/এসএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়