ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

আনন্দ শোভাযাত্রা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ১১ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আনন্দ শোভাযাত্রা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : কেউ তৈরি করছেন কাগজের মুখোশ, কেউ তৈরি করছেন রাজা-রানির মুখাবয়ব, পেঁচার মুখ, টেপা পুতুল, কেউ বানাচ্ছেন তুহিন পুতুল।

এভাবেই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সামনে রেখে প্রস্তুতি পর্বে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাবির চারুকলার শিক্ষার্থীরা। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার স্লোগান ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর।’

গত ১৯ মার্চ প্রখ্যাত শিল্পী রফিকুন নবী চারুকলার জয়নুল আবেদীন গ্যালারিতে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বের উদ্বোধন করেন। সেই থেকে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বের অন্যতম সমন্বয়ক সবুজ দাস রাইজিংবিডিকে বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রায় তিনশ’র নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং দুইশ’র মতো সাবেক শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার খরচ নির্বাহ ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কিছু মুখোশ ও কারুপণ্য বিক্রির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মান অনুযায়ী কারুপণ্যগুলোর দাম রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

যেভাবে শুরু মঙ্গল শোভাযাত্রা

মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে আনন্দ শোভাযাত্রা নামে। এই শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে সার্বজনীন পয়লা বৈশাখ উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। ১৯৮০’র দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একইসঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম আনন্দ শোভাযাত্রা নামে, মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। সে বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থীগণ পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ প্রতি বছর অব্যাহত রাখে।

শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ বিশালকায় চারুকর্ম পুতুল, হাতি, কুমির ও ঘোড়াসহ বিচিত্র মুখোশ ও সাজসজ্জাসহ বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্য। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়।

১৯৯০ সালের আনন্দ শোভাযাত্রায়ও নানা ধরনের শিল্পকর্মের প্রতিকৃতি স্থান পায়। ১৯৯১ সালে চারুকলার শোভাযাত্রা জনপ্রিয়তায় নতুন মাত্রা লাভ করে। ১৯৯২ সালে আনন্দ শোভাযাত্রার সম্মুখে রঙ বেরঙয়ের পোশাক পরিহিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাঁধে ছিল বিরাট আকারের কুমির। বাঁশ এবং বহু বর্ণের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল কুমিরটি। ১৯৯৩ সালে ‘১৪০০ সাল উদযাপন কমিটি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রার আকর্ষণ ছিল বাঘ, হাতি, ময়ূর, ঘোড়া, বিভিন্ন ধরনের মুখোশ। সময়ের বিবর্তনে আনন্দ শোভাযাত্রা, মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম ধারণ করে।

ইউনেস্কোর ঐতিহ‌্যের তালিকায় মঙ্গল শোভাযাত্রা

জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা বা ইনটেনজিবল সাংস্কৃতিক ঐতিহ‌্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা’য় অনুষ্ঠিত ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর সংশিষ্ট আন্তর্জাতিক পর্ষদ (ইন্টারগভর্নমেন্টাল কমিটি ফর দ্য সেফগার্ডিং অব দ্য ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ) বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবটি অনুমোদন করে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ এপ্রিল ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়