ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আফজাল হোসেনের কাছে আমি ‘পাগলী’: রোজী সিদ্দিকী

কবি স্বরলিপি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ৫ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 আফজাল হোসেনের কাছে আমি ‘পাগলী’: রোজী সিদ্দিকী

বন্ধু তো সে, পরম সুখে যে মানুষটির মুখ সবার আগে মনে পড়ে। দুঃখে যে মানুষটির কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে অথবা মনে হয় সে আমার পাশে এসে দাঁড়াক। বন্ধু তো সে, কোনো একটি কাজ হাতে নেওয়ার আগে যার উৎসাহ অনেক বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বন্ধুত্বের একটা বৈশিষ্ট্য- অন্যরকম সম্বোধন। সম্বোধনে থাকতে পারে হেঁয়ালি। আপাতদৃষ্টিতে হেঁয়ালি মনে হলেও ভেতরে থাকে ভালোবাসা। যার দৃষ্টিজুড়ে থাকে প্রশস্ততা আর নির্ভরতা। বন্ধুত্ব কখনো কখনো সব কিছু ছাপিয়ে অনেক বেশি শ্রদ্ধার সম্পর্কও হয়ে ওঠে।

এই যে এতো কিছু বলা, তার কারণ আমি স্মরণ করছি আফজাল হোসেনের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা। স্মরণ করছি, সম্পর্কের জার্নি। মাঝে মাঝে মনে হয়, তিনি পিতা। মাঝে মাঝে মনে হয় তিনি অভিভাবক। আবার তিনি সব কিছুর উর্ধ্বে কেবলই বন্ধু।

বন্ধু ছাড়া আর কে আছে এমন! মঞ্চে দীর্ঘ বিশ বছর যিনি কোনো কাজ করেননি। তিনি একটি কথার জন্য সমস্ত ব্যস্ততা দূরে ঠেলে চলে এসেছিলেন মঞ্চের সেট তৈরি করতে। কাজ করেছেন টানা ১৫ দিন। এই ১৫ দিন নিজের অফিসে একটি বারের জন্যও যাননি। বন্ধুত্বের উপহার যদি বলি, আমার কাছে এ এক বিরাট উপহার। যা আমার কাজের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। আমি একক অভিনয় করলাম ‘পঞ্চনারী আখ্যান’-এ। প্রযোজনা করল ঢাকা থিয়েটার। সেট ডিজাইন করেছিলেন আফজাল হোসেন।

আফজাল হোসেনের ব্যস্ততা নিয়ে বাড়িয়ে বা বুঝিয়ে বলার কিছু নেই। অথচ আমার জন্মদিনে তিনি ঠিকই সময় বের করে নেন। এমনও হয়েছে জন্মদিনে তার আঁকা আমার একটি স্কেচ উপহার পেয়েছি। এখানে এসে বলতে ইচ্ছা করে জীবন সুন্দর!

আফজাল হোসেন কখনো আমার নাম ধরে ডাকেন না। তার কাছে আমি ‘পাগলী’। আমি নিজেও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। আমার মনে হয়, পাগলীও আমার নাম।

২০০৬ কি ২০০৭-এর কথা! আমি আফজাল হোসনের নির্দেশনায় ‘ছবির মতো মেয়েটি’ নাটকে কাজ করি। নাটকের শুটিং চলছিল কক্সবাজার। সঙ্গে ছিল এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। জয়া তখন অভিনয়ে নতুন। নাটকের শুটিং শেষে আফজাল হোসেন জয়াকে বললেন, ‘ওর অভিনয় দেখ’। হয়তো শুনে মনে হবে এ আর এমন কী!

একটু খোলাসা করে বলতে হয়, আফজাল হোসেন একজন মানুষের যখন মন্দ দিক নিয়ে কথা বলেন তখন একাধারে অনেক কিছু বলে যেতে পারেন। কিন্তু কারো সম্পর্কে যখন ইতিবাচক কোনো কিছু বলেন দুই-তিন শব্দের মধ্যে শেষ করে দেন।

কেউ যখন কথা বলে তিনি মনোযোগ দিয়ে শোনেন। শোনা শেষ হলে ছোট মন্তব্য করেন। এইতো, আমি যখন ‘পঞ্চনারী আখ্যান’ নাটকের সেট ডিজাইনের বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন দিলাম। ওভার ফোনে তেমন কিছু না বলে শুধু বললাম, ‘একটু কথা আছে।’ বললেন, ‘অফিসে চলে আয়।’ অফিসে গিয়ে বললাম, ‘আমার নাটকের সেট ডিজাইন করে দিতে হবে।’

এক দৃষ্টিতে আমাকে দেখলেন। অল্প কিছুক্ষণ একদম চুপ। আমিও চুপ। তারপর একটি শব্দ বললেন, ‘যা’। আর মাথাটা নাড়লেন। আমি বুঝে নিলাম তিনি রাজী।

তার চোখের দিকে তাকালে মাঝে মাঝে মনে হয় তিনি খুব কাছের। আবার মাঝে মাঝে মনে হয়, তলিয়ে যাচ্ছি। বন্ধুত্বের কথা মুখে না বলে যে ‘বন্ধুত্ব’ আফজাল হোসেনের সঙ্গে আমারও তাই। সাইলেন্ট অ্যান্ড সাইলেন্ট জার্নি।

অনুলিখন: স্বরলিপি




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ আগস্ট ২০১৭/শান্ত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়