ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আমার বলা গল্পগুলো মানুষ আমার চোখেই দেখুক: মারিয়া তুষার

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২৮ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমার বলা গল্পগুলো মানুষ আমার চোখেই দেখুক: মারিয়া তুষার

‘গ্রাস’ সিনেমার পোস্টার

ছাইফুল ইসলাম মাছুম: ‘ক্লাশ মাঝে মাঝে মিস যেত, তবে শুটিং মিস যেত না। শুটিং আমার কাছে নেশার মতো। অনেকের অনেক রকম নেশা থাকে। আমার নেশা চলচ্চিত্র নির্মাণ। আই লাভ শুটিং।’ কথাগুলো বলছিলেন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা মারিয়া তুষার। তিনি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়ার শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি মারিয়া তুষার নির্মাণ করেছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘গ্রাস’। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘চলচ্চিত্র নির্মাণ খুব শক্তিশালী একটি মাধ্যম। ক্যামেরার পিছনে আমি গল্প বলবো। সেই গল্প শুনে মানুষ হাসবে, কাঁদবে। কত সহজেই মানুষের অনুভূতি ভীষণভাবে নাড়া দেবে। আমি চাই আমার বলা গল্পগুলো মানুষ আমার চোখেই দেখুক।’

মারিয়ার পুরো নাম মারিয়া আফরিন তুষার। জন্ম বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। বাবা আলহাজ্ব মজিবুল হক, মা তানজিলা পারভিন। দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। মায়ের চাকরির সুবাদে শৈশব কেটেছে রাজশাহীতে। ছোটবেলা থেকেই মারিয়া বিভিন্ন কাজে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। ছাত্রানং অধ্যয়নং তপঃ- কথাটি মেনে চলার চেষ্টা করতেন। যে কারণে পড়াশোনাতেই ছিল সব মনোযোগ। ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়ে সে কথার প্রমাণ রেখেছেন। মাধ্যমিক শেষে ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী মহিলা কলেজে। মায়ের আগ্রহ ছিল গানে। ফলে রাজশাহী শিল্পকলায় নিয়মিত গান শিখতে যেতেন। গানের প্রেমে পড়ে প্রথম দিকে বেশ কিছু গানও লিখেছিলেন তিনি।

মারিয়া আফরিন তুষার


কলেজের পাট চুকিয়ে এবার উচ্চশিক্ষার পালা। পরিবার চাইতেন মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার অথবা ব্যারিস্টার হোক। মারিয়ার আগ্রহ ছিল চিকিৎসা বিদ্যায়। মেডিক্যালে সুযোগ না পেয়ে পরিবারের আগ্রহে আইন বিষয়ে ২০১১ সালে ভর্তি হন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুষ্ঠান সহকারী হিসেবে কাজ করেন। শুরু হয় পেশাজীবন। ২০১৩ সালে রিহ্যাবের বিজ্ঞাপন ও ইউনিসেফ-এর ডকুমেন্টারি তৈরির দায়িত্ব পান। কাজ দুটো তাকে পরিচিতি পাইয়ে দিতে সাহায্য করে। তিনি প্রশংসিত হন। এখান থেকেই তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে বড় পর্দার নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। মনের গহীনে মেলে দেন স্বপ্নের ডানা।

আইন মারিয়াকে কোনোভাবেই টানতো না। নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন থেকেই আইন পড়া বাদ দিয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে শুরু করলেন ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজে পড়াশোনা। কিন্তু পরিবার বাদ সাধল। পরিবারের ভাষ্য এই বিষয়ে পড়াশোনা করে কোনো ভবিষ্যত নেই। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন মারিয়া। তার সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না তার প্রমাণ মিলল ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর। তিনি সে বছর ‘বিজয় চলচ্চিত্র উৎসব-১৫’ এর শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতার পুরস্কার জিতে নেন।

শুধু নির্মাণে নয়, কবিতা লেখাতেও দক্ষ মারিয়া তুষার। ২০১৬ সালে একুশে গ্রন্থমেলায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘১০১ চিরকুট’ এবং ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘অদৃশ্য অসুখ’। বাংলাদেশের কনিষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে মারিয়া তুষারের প্রথম সাহসী উদ্যোগ ‘গ্রাস’। মারিয়া রাইজিংবিডিকে জানান, একজন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাকে ঘিরে চলচ্চিত্রের কাহিনি এগিয়ে গেছে। ১২০ মিনিটের এই চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের গল্প।

শুটিংয়ের একটি দৃশ্য


চলচ্চিত্রটির প্রথম ধাপের শুটিং শুরু হয় ২০১৩ সালের ১৭ অক্টোবর। শুটিং শেষ হয় তিন ধাপে। ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর চলচ্চিত্রটি সেন্সর অনুমোদন পায়। আনন্দের কথা চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাচ্ছে ২৮ জুলাই। এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন রানী সরকার। ষাটের দশকের জনপ্রিয় এ অভিনেত্রীকে কেন্দ্র করেই ছবির মূল গল্প। এতে তরুণ নির্মাতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আর.বি. প্রীতম। তার সহ-অভিনেত্রী তমা মির্জা। আজ থেকে সাতটি পেক্ষাগৃহে দর্শক মারিয়া তুষারের ‘গ্রাস’ দেখতে পাবেন।

মারিয়া তুষার সম্প্রতি গড়ে তুলেছেন ইয়ুথ ফিল্ম সোসাইটি। তিনি জানান, নতুন যারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে আসেন, তাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। ইয়ুথ ফিল্ম সোসাইটির মূল লক্ষ্য তরুণ নির্মাতাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা। তিনি ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আরো অনেক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই। চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাই।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুলাই ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়