ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘আমি এক সাধারণ শিল্পী’

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আমি এক সাধারণ শিল্পী’

বশির আহমেদ

শাহ মতিন টিপু : গানটির প্রথম কলি এরকম- ‘অজস্র ভালোবাসা  দিলে  তোমরা  কি  করে দেবো তার প্রতিদান - আমি এক সাধারণ  শিল্পী -  আছে কিছু সুর আর গান’। বিটিভিতে বেশ ক’বারই গানটি গেয়েছেন বশির আহমেদ। লিখেছেন গীতিকার রঙ্গু শাহাবুদ্দীন।আর তা বশির আহমেদের অনুরোধেই ।

বশির আহমেদ গীতিকারকে বলেছিলেন- রঙ্গু, শ্রোতারা আমাকে অনেক ভালোবাসা দিলো—অনেক কিছু দিলো—আমি তো কিছুই দিতে পারলাম না শ্রোতাদেরকে—এই নিয়ে গান লিখে দিতে হবে।

বশির আহমেদের কণ্ঠস্বর ছিল মাধূর্যে ভরা। দরদ দিয়ে গান গাইতেন তিনি। তার গাওয়া প্রচুর গান রয়েছে, যা অনেক অনেকদিন মনে রাখবে এ দেশের সঙ্গীতপ্রিয় মানুষ।

যেমন- ‘অনেক সাধের ময়না আমার’, ‘আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো’, ‘যা রে যাবি যদি যা/পিঞ্জর খুলে দিয়েছি’, ‘ডেকো না আমারে তুমি/কাছে ডেকো না’,‘খুঁজে খুঁজে জনম গেল’,‘সজনী গো ভালোবেসে এত জ্বালা কেন বল না’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন, জীবন মানেই আনন্দ ভালোবাসা’, ‘ও গো প্রিয়তমা’,  ‘অথৈ জলে ডুবে যদি মানিক পাওয়া যায়’, ‘চঞ্চল বনানী তুমি অশান্ত সবুজ তুমি’ এমনই সব অসাধারণ গানগুলো গেয়েছেন এই কিংবদন্তি শিল্পী ।

নিরবে নিভৃতে কেটে গেল কিংবদন্তি এই শিল্পীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন।বশির আহমেদের স্ত্রী মীনা বশিরও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী।বশির আহমেদের মৃত্যুর পর থেকে খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন মীনা বশির। কিছুতেই তিনি মানতে পারছিলেন না বশির আর নেই। শ্বাস কষ্টে ভুগছিলেন তিনি। এ কারণে মাঝে মাঝে তাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হতো । একই বছর ৭  আগস্ট তিনিও মারা যান।

বশির আহমেদ ছিলেন একাধারে শিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক । তিনি একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। এই শিল্পী পরিবারের দুই সন্তান ছেলে রাজা বশির ও মেয়ে হুমায়রা বশিরও সংগীতের সঙ্গে যুক্ত।

দিল্লির সওদাগর পরিবারের সন্তান বশির আহমেদ ১৯৩৯ সালের ১৯ নভেম্বর কলকাতার খিদিরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নাসির আহমেদ। ১৯৬৪ সালে বশির আহমেদ সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় আসার আগে উর্দু চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু করেন। তার পরিবার ছিল উর্দুভাষী। বশির আহমেদ ভারতের অধিবাসী হয়েও, বাংলাদেশে এসে তিনি তার গানের সুর ছড়িয়ে ভক্তদের মুগ্ধ করেন।

তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁর কাছে তালিম নিয়েছেন । উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী তালাত মাহমুদের সঙ্গে তিনি তালাশ চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। ষাট ও সত্তর দশকের জনপ্রিয় এই শিল্পী ও সুরকার ঢাকা আর লাহোরের ছবিতে প্রচুর প্লে ব্যাক করেছেন ।বশির আহমেদ নিজস্ব শিল্পীসত্ত্বা ছাড়া একজন বিশিষ্ট সঙ্গীত গুরু হিসেবেও অমর থাকবেন যুগ যুগ। তার প্রত্যক্ষ শিষ্য এদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী কনকচাঁপা, শাকিলা জাফরসহ বহু শিল্পী।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়