ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আর্মেনিয়ায় দুই তরুণের ‘বাংলাদেশ’ আবিষ্কার

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৯, ৪ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আর্মেনিয়ায় দুই তরুণের ‘বাংলাদেশ’ আবিষ্কার

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : মূকাভিনয় করতে আর্মেনিয়া গিয়ে সেখানে বাংলাদেশের খোঁজ পেলেন মীর লোকমান ও সাইফুল্লাহ সাদেক। একজন ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক ও তরুণ মূকা্ভিনেতা, অন্যজন সংগঠনটির সদস্য এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। দেশের তরুণদের নিয়ে দুজনই কাজ করেন। সম্প্রতি এই দুই তরুণ গিয়েছিলেন পূর্ব ইউরোপের দেশ আর্মেনিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসবে।

আর্মেনিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ইয়েরেভান প্যান্টোমাইম থিয়েটারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ৫ দিনব্যাপী ‘লিওনিদ ইয়েংগিবারিয়ান ইন্টারন্যাশনাল মাইম ফেস্টিভাল-২০১৭’। ২২ জুলাই আর্মেনিয়ার পর্যটন শহর সাঘকাদজরে শুরু হয় বর্ণাঢ্য এই উৎসব। জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, চেক প্রজাতন্ত্র, বাংলাদেশ, নাগার্নো কারাবাখস এবং স্বাগতিক আর্মেনিয়াসহ ৮টি দেশ উৎসবে অংশ নেয়। উৎসব উদ্বোধন করেন দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রী আর্মেন আমিরিয়ান। বাংলাদেশের পরিবেশনা ছিলো ২৪ জুলাই। সেদিন দুই তরুণের মূকাভিনয়ে মুগ্ধ ছিলো আর্মেনিয়ার দর্শক। ২৫ জুলাই ছিল সমাপনী দিন। সমাপনী অনুষ্ঠানে দলগুলোর হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন আয়োজক কমিটির পরিচালক দাদাসিয়ান।

বাংলাদেশকে সমাপনী পর্বের মূল আকর্ষণ ধরা হয়েছিল। পাঞ্জাবি আর চিরচেনা গামছায় প্রিয় লাল-সবুজ পতাকা হাতে মঞ্চে ওঠে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল।  হাতে একতারা, গলা এবং মাথায় গামছা, পরনে সাদা পাঞ্জাবি দেখে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে ভীষণ কৌতূহল জাগে। অনেকেই পোশাকগুলো সম্পর্কে জানতে চান। তাদের তখন বলা হয় এগুলো বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক। শুধু তাই নয়, এ সময় ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে মীর লোকমান ও সাইফুল্লাহ সাদেকও কৌতূহলী হয়ে ওঠেন যখন জানতে পারেন আর্মেনিয়ায় বাংলাদেশ নামে একটি অঞ্চল রয়েছে। তারা মূলত এই তথ্য পান ১৯ তারিখ বিমানবন্দরে নেমে ডলার এক্সেঞ্জ করতে গিয়ে।



মীর লোকমান ও সাইফুল্লাহ সাদেক প্রথমে বিষয়টি বিশ্বাস করতে চাননি। পরে আয়োজক কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে তারা বিষয়টি নিশ্চিত হন। এরপর তারা এই নামের কারণ অনুসন্ধান করতে থাকেন। কথা বলেন সেখানকার অনেকের সঙ্গে। সে সময় এমন নামকরণের কারণ হিসেবে বিভিন্ন তথ্য মেলে। ইয়েরেভান রেডিওর সাংবাদিক দিদিয়ান ইউয়ং মনে করেন, জায়গাটি ইয়েরেভান থেকে বেশ দূরে। তবে সবুজে ঘেরা, মনোরম, নিচু অঞ্চল এবং কিছুটা অনুন্নত- সম্ভবত এ কারণেই এর নাম বাংলাদেশ রাখা হয়েছে।

অনেকে মনে করেন ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সম্মান জানানোর জন্যও জায়গাটির এমন নামকরণ হতে পারে। আর্মেনিয়ার নৃবিজ্ঞানী লিলিট মির্জিওয়ানের লেখা একটি আর্টিকেল থেকে জানা যায় এই তথ্য। তিনি লিখেছেন, এই এলাকার নাম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে 'বাংলাদেশ' হিসেবে পরিচিতি পায়। আবার এমন মত রয়েছে যে, আর্মেনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করার প্রতিবাদে এমন নামকরণ করা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ লোকের ধারণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানিদের হামলার প্রতিবাদ এবং বাঙালি জাতির স্বাধীনতার প্রতি সম্মানস্বরূপ আর্মেনিয়ার ওই অঞ্চল বাংলাদেশ নামে খ্যাতি অর্জন করে। তবে এখানে একটি ঐতিহাসিক সূত্র রয়েছে। ঢাকার আর্মানিটোলার একটি ঐতিহাসিক ধারা আর্মেনিয়ায় ওই অঞ্চলের নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখতে ভূমিকা রেখেছে। অষ্টাদশ শতকে ব্যবসা-বাণিজ্য, ধর্মপ্রচার প্রভৃতি কারণে যেসব আর্মেনিয়ান পূর্ব বাংলায় এসেছিলেন তারা দেশে ফিরে সম্ভবত এই নামকরণ করেন। সাইফুল্লাহ সাদেক ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে এটিকেই উপযুক্ত কারণ বলে মনে করেন।

সাইফুল্লাহ সাদেক রাইজিংবিডিকে বলেন, ইউরোপ এসে বাংলাদেশ নামক জেলার কথা শুনে আবেগ বেড়ে যায়। এ বিষয়ে শোনার পর থেকে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলতে থাকি। সবাই বাংলাদেশ জেলার কথা জানেন। যদিও এর অফিসিয়াল নাম মালাতিয়া সেবাস্তিয়া। কিন্তু কেউ জায়গাটিকে এ নামে ডাকে না। যেখানে গিয়েছি বাংলাদেশ নামটিই শুনেছি। আমরা তো এটাই চাই। এমন অনেক বাংলাদেশ চাই পৃথিবীর বুকে।

তিনি বলেন, চেষ্টা করলে বাংলাদেশ জেলাকে কেন্দ্র করে আর্মেনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেয়া যায়। ভেবে দেখুন, আর্মেনিয়দের প্রতি সম্মান থেকে ঢাকায় আর্মানিটোলা, আবার বাংলাদেশের প্রতি সম্মান থেকে আর্মেনিয়ায় এক টুকরো বাংলাদেশ।

মীর লোকমান রাইজিংবিডিকে বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ইয়েরেভান প্যান্টোমাইম থিয়েটারের আমন্ত্রণে আমরা আর্মেনিয়া গিয়েছিলাম। এই উৎসব আর্মেনিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মজার বিষয়, সেখানে গিয়ে জানতে পারি দেশটিতে রয়েছে আরেকটি বাংলাদেশ। সুতরাং আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রটি অনেক গভীর এবং সেটি হলো আমরা বাংলাদেশি। এই সম্পর্ক সামনে অনেক দৃঢ় হতে পারে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ আগস্ট ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়