ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আল মাহমুদ এমন একজন কবি

টোকন ঠাকুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৫, ১১ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আল মাহমুদ এমন একজন কবি

আল মাহমুদ, ছবি : সংগৃহীত

সেই শীতরাতে, মেয়েটিকে ভালো লেগে গেল আমাদের, তিন বন্ধুর। আমরা তিন বন্ধুই ভাবতে শুরু করি, মেয়েটির সঙ্গে আমাদের কিছু না কিছু হবেই, পরে। হইছে কি, ক’দিন পরেই এসএসসি পরীক্ষা। রাত জেগে পড়ালেখা করার একটা সেকালের ভালো ছাত্রত্ব ব্যাপারও ছিল আমার নামে। আমি বড় হচ্ছিলাম মধুপুর গ্রামে। মধুপুর গাড়াগঞ্জ বাজারের পাশের ছোট্ট গ্রাম। একটা নদ চলে গেছে পাশ দিয়ে, শৈলকুপার দিকে।

সে সময়, গত শতাব্দীর মিড এইটটিজের সেই আমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দিনে বাইসাইকেল ছিল, সেই বাইসাইকেলই আমার ও আমার সে সময়ের বন্ধুদের কাছে বিরাট ব্যাপার। সেই সাইকেলে চড়ে মাঝে মধ্যেই শৈলকুপা ‘কিছুক্ষণ’ সিমেনা হলে ঢুকে সিনেমা দেখতাম। বাড়িতে কেউ যাতে এই সিনেমা দেখার ঘটনা টের না পায়, সদা সতর্ক থাকতাম। মাঝে মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা শহরে গিয়ে সিনেমা দেখে আসতাম। ‘ছবিঘর’, ‘প্রিয়া’ ও ‘চান্দা’ নামে তিনটি হল ছিল। সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরে মাঝে মধ্যে বড়দের কাছে ধরাও খেয়েছি। মাইর খেয়েছি। আবার সিনেমা দেখতে গেছি, আরও গোপনে।

তো সেই শীতরাতে, আমার এসএসসি পরীক্ষার আগে-আগেই, কে যেন বলল, শৈলকুপার ওই পাশে যে গ্রাম আছে, মনোহরপুর- কবি গোলাম মোস্তফার জন্মগ্রাম। কবির নামে হাই স্কুল আছে। স্কুল মাঠে কবির স্মরণে অনুষ্ঠান হবে। সেই অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে অনেকেই আসবেন। গান-বাজনা আছে। যথেষ্ঠ। রাতে, বাড়ির কাউকে না বলে, আস্তে আস্তে আমার বাইসাইকেলটা নিঃশব্দে উঠোন থেকে বের করে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। হুমায়ুন আমার সঙ্গী। আর সঙ্গী গ্রামবন্ধু আতুর। তিনজন তিনটা সাইকেলে আমরা প্রথমে গেলাম শৈলকুপা, তারপর মনোহরপুর কবি গোলাম মোস্তফার গ্রামে, হাই স্কুল মাঠে। কিসের শীত, কিসের অন্ধকার? ওসব কি পাত্তা পায়, আমাদের কাছে?

মনোহরপুর কবি গোলাম মোস্তফা হাই স্কুলের মাঠে মঞ্চ করা হয়েছিল। মঞ্চে ছিলেন কবি আল মাহমুদ, কবি তালিম হোসেন, কবি গোলাম মোস্তফার পুত্র শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার এবং কবির আরেক স্ত্রীর পুত্র শিল্পী মুস্তফা আজিজ মঞ্চের কোণায় বসে আল মাহমুদ অথবা তালিম হোসেনের চারকোল পেন্সিলে পোর্ট্রেট করছিলেন, দূর থেকে দর্শকের ভেতর দাঁড়িয়ে এটাই প্রথম দেখলাম। হ্যাঁ, কবি আল মাহমুদের কবিতা আমাদের বাংলা বইতে পাঠ্য ছিল, তাকে আগেই চিনতাম। দেখার একটা আকর্ষণ নিয়েই ছুটে গেছিলাম সেই রাতে, শৈলকুপা পার হয়ে, মনোহরপুর গ্রামের হাই স্কুল মাঠে। সে এক কৈশোরক অ্যাডভেঞ্চারও বটে। মনোহরপুর গ্রামটির কথা আমার এখনো মনে আছে। গ্রামের সামনে দিয়েই গাড়াগঞ্জ-বারোইপাড়া পার হয়ে আসা শীর্ণকায় কুমার নদ। জানাই আজ, ডাঙায় হাফপ্যান্ট খুলে রেখে যে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছি আমি, সেই জল কুমারের। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যত নদ-নদী শুকিয়ে গেছে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রত্যক্ষ প্রভাবে, কুমার নদও সেই শুকিয়ে যাওয়া একটি নদ। বর্ষায় কিছু জল হয় বটে কিন্তু প্রবীণেরা স্মৃতিকথায় তুলে ধরেন, ‘এই গাঙে একসময় বড় বড় বাণিজ্য নৌকা আসত। দিন ছিল।’

তো মনোহরপুর গ্রামে সেই রাতে আমরা জীবনে প্রথম কবি আল মাহমুদকে দেখলাম। তিনি মঞ্চে বসা ছিলেন। কথা বলতে পারিনি। তবু দেখলাম তো! সে সময়, ১৯৮৭ সালে আল মাহমুদের মুখে দাড়িগোঁফ ছিল না, হয়তো তখন তাঁর ছিল দাড়িগোঁফ রাখবার প্রস্তুতিকাল। যে কবি লিখেছেন, ‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে… ’ তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। নিজের কাছে তখন এ আমার অহঙ্কার। মুস্তাফা মনোয়ারকে দেখলাম, সেও এক আনন্দ আমার। আর মুস্তাফা আজিজ তো আমাদের গাড়াগঞ্জ হাই স্কুলে আসতেন, মানুষের পোর্ট্রেট, স্কেচ করে তাক লাগিয়ে দিতেন। মুস্তাফা আজিজকে কী কারণে যেন আমরা ‘মামা’ ডাকতাম। তিনি আমাদের বাড়িতেও আসতেন আমি তাঁর স্কেচখাতা দেখতাম, মুগ্ধ হতাম তাঁর আঁকিবুকি দেখে। আজিজ মামার কাঁধের ব্যাগের ভেতরে ভাঁজ করে রাখা যায় এমন একটি চেয়ার থাকত। তিনি ঝোলা থেকে সেই ভাঁজ করা চেয়ার বের করেই মাটিতে পেতে বসে তাঁর পছন্দের ক্যারেক্টর দেখলেই পোর্ট্রেট করতে বসে যেতেন। আজিজ মামা বলতেন, ‘মৃত্যুর পর এই চেয়ারটা আমার কবরে যাবে, বলে রেখেছি।’

তো কবি-শিল্পীদের আলোচনা শেষ হলো। তারপর শুরু হবে গান-বাজনা। সেই গান-বাজনা শোনা বা দেখার সময়েই একটি মেয়েকে দেখে আমাদের নৈশকালীন ঘরপালানো তিনবন্ধুর ভালো লেগে গেল। সেই মেয়ে নাকি থাকে যশোর, সে অনেক দূর। বাইসাইকেলে তো আর যাওয়া যাবে না, বাসে চড়তে হবে। আর যশোরে গিয়ে তাকে পাচ্ছিই বা কোথায়? বাসার ঠিকানা তো জানি না। সেই রাতে, মনোহরপুর থেকে ফেরার সময় আমরা সেই মেয়েটির ঠিকানা বের করতে বিশেষ উদগ্রীব হয়ে পড়লাম। ভোরের দিকে আমরা যে-যার বাড়িতে ফিরে আসি। এভাবেই বাড়ি থেকে কাউকে না বলে সারারাত কোথাও যাত্রা বা সার্কাস দেখে আসার অভ্যাস আমার ছিল। দিনের বেলায় দেখে আসতাম সিনেমা। স্কুল পার হয়ে কলেজে উঠে ঠিকঠাক ক্লাস না করলেও সরকারি পাবলিক লাইব্রেরি, বেসরকারি পাবলিক লাইব্রেরিতে বিকাল-সন্ধ্যা ডুবে থাকার নেশা গড়ে উঠল আমার। হাই স্কুলে থাকতেই কবিতার অসুখ ধরে, কলেজে উঠে দেখি, সেই অসুখ বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে সেই অসুখেও আমার কেটে গেল তিনদশক। অবাক লাগে। আবার লাগে না। লাগালাগি যাই হোক, আমার মাথায় ঢুকে পড়তে শুরু করে ঊনিশ শতক, আমার চোখের মধ্যে ঢুকে পড়ে বিশ শতকের হাওয়া, এখন চোখে বিদ্ধ একুশ শতক। কবিতা থেকে মুক্তি পাইনি। বললামই তো, চোখের মধ্যে ঢুকে পড়ল ত্রিশের পাণ্ডব, মাথার মধ্যে ফেঁড়ে গেল ছেচল্লিশের তলোয়ার-ত্রিশূল, ভাগ হয়ে গেলাম। মাথার মধ্যে ঢুকে পড়ল পূর্ব-পাকিস্তানের মানচিত্র, সেই মানচিত্রই ১৯৭১ এ অনেক রক্তপাত প্রাণ-সম্পদ ক্ষয়ের পরে বাংলাদেশ।

তো কবিতা যখন কামড় দিল, সেই ঘোর মফস্বলে বসেই বইয়ের ছাপানো অক্ষরে ইতিহাস পাচ্ছিলাম, চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগের তরুণ কবিদের আড্ডা দেখতে পাচ্ছিলাম বিউটি বোর্ডিংয়ে, পুরোনো ঢাকায়। সেই আড্ডায় শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী, হাসান হাফিজুর রহমান, মূর্তজা বশীর, কাইয়ূম চৌধুরী, খালেদ চৌধুরী, বিজন চৌধুরী বা সৈয়দ শামসুল হক যেমন তরুণ, আল মাহমুদও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কবিতা লেখার অভিপ্রায় নিয়ে আসা তরুণ। আমরা সেই তারুণ্য দেখিনি কিন্তু ঝিনাইদহে বসে আমার কলেজের হোস্টেলে রাত জেগে যখন আমি পড়ি ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’-আমার মনে হলো আল মাহমুদের বড় হয়ে ওঠাটা আমি দেখতে পেলাম। ‘লোক-লোকান্তর’, ‘সোনালি কাবিন’ ঘোর নিয়ে পড়েছি। আল মাহমুদের কবিতায় মজে থাকা দিনও পেয়েছি। ‘পানকৌড়ির রক্ত’ পড়লাম। দ্বিতীয়বার পড়ার পর গল্পটি ধরতে পেরেছিলাম। ‘উপমহাদেশ’ উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে একটা ম্যাগাজিনে বেরুচ্ছিল। ঝিনাইদহে বসেই আমি ওটা পড়তাম। সুস্বাদু লাগত। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত মনে হতো, আল মাহমুদ আমার মোটামুটি পড়া হয়ে গেছে।

ঢাকায় থাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্বের সুবাদে। কবিতা লিখতাম বা লিখি বলেই কবিদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক হয়ে আছে। আমার পরিষ্কার মনে আছে, একদিন কুসুমকুমারী দাশের ছেলের সঙ্গে দেখা, কোলকাতায়, বললাম, ‘কেমন আছেন?’

জীবনানন্দ দাশ একবার তাকালেন। আমি আবার প্রশ্ন করি, ‘কোলকাতায় কেমন লাগে আপনার?’ আপনার কবিতায় তো বরিশাল ওঁত পেতে আছে।’
জীবনানন্দ ছোট্ট করে প্রশ্ন করেন, ‘যারা অলকানন্দকে আলেকান্দা বলে ডাকে, সেই বরিশালে আর যেতে ইচ্ছে করে না।’
কবির সঙ্গে কত রকম সম্পর্ক হয় আমার, আমাদের। শামসুর রাহমানের বাসায় খুব যাওয়া-আসা ছিল আমার। আল মাহমুদের মগবাজারের বাসায় দু’একবার গেছি, দেখা করতে ‘সংগ্রাম’ অফিসেও গেছি। যদিও সেটি জামায়াতে ইসলামির পত্রিকা, আমরা কখনোই ঐ পত্রিকা পছন্দ করিনি এবং করবও না তাদের কৃতকর্মের জন্য, সেই অফিসে আল মাহমুদ দীর্ঘদিন চাকরি করে জীবন-সংসার চালিয়েছেন। আল মাহমুদই সম্ভবত বাংলাদেশের সেই কবি, যার কবিতা পছন্দ করা অনেক পাঠক রাজনৈতিক পাটাতনের কারণে কবিকে পছন্দ করেন না। আল মাহমুদকে অস্বীকার করার সামর্থ বাংলা কবিতা পাঠকের হয়নি যেমনি, ব্যক্তি আল মাহমুদকে খুব গ্রহণযোগ্য করে সমাদরও করেনি তারা, মুক্তিযোদ্ধা হয়েও পরবর্তীতে তাঁর জামায়াত কানেকটেড রাজনৈতিক-সামাজিক অবস্থানের কারণে। আজ কবির কী নির্মম নিয়তি!

আল মাহমুদ তাঁর নির্বাচিত কবিতা বইটির এক কপি আমাকে দিয়েছিলেন, মনে আছে। আগে দেখা হলেই বলতেন, ‘এই মিয়া, গোল্ডলিফ আছে? বের করো?’
একবার ‘প্রথম আলো’তে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদের সাক্ষাৎকার ছাপা হলো, নাসির আলী মামুনের নেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার। সেখানে তারা অনেক কথা বলেছিলেন। পরের সপ্তাহে সেই সাক্ষাৎকারে আল মাহমুদের একটি কথার সূত্র ধরে আমি একটি ভিন্নমত লিখে পাঠাই এবং সেটা ছাপা হয় ওই পত্রিকারই সাহিত্য সাময়িকীতে। তারই প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের আরেক দৈনিক ‘নয়া দিগন্তে’ পরপর দুই সপ্তাহে দুই কিস্তি গদ্য লিখলেন আমার বিরুদ্ধে, ব্যাপক আক্রমণাত্মকভাবে। মানছি, একজন বয়স্ক কবি বা সিনিয়র সিটিজেন ভয়াবহ সংক্ষুব্ধ হবেন, এমন প্রতিক্রিয়া দেখানো আমার বাড়াবাড়ি ছিল। আমার বিরুদ্ধে আল মাহমুদ এত বড় নিন্দা-কুৎসার গদ্য লিখবেন আমিও ভাবিনি। দিনে দিনে সম্পর্কের শৈথিল্য এলো মনে হয়। আল মাহমুদের সঙ্গে আর কোনো প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই প্রায় দশ বছর। এখন মাহমুদ ভাইয়ের আরো বয়স হয়েছে। তিনি চোখে প্রায় দেখতেই পান না। কানেও কম শোনেন।

বাংলা কবিতায় আল মাহমুদ অনেক বড় কবি। ব্যক্তির অন্যায় বা বেঁচে থাকতে গিয়ে জীবিকার চক্করে পড়ে যাওয়া কোনো কবির বিচার পরবর্তী সময় কিভাবে করবে, তাও এক দেখার বিষয়। কবিতার জোরে আল মাহমুদ দীর্ঘজীবী হয়ে থাকবেন বিশ্বাস করি। সম্প্রতি ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার উদ্যোগে তরুণ কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ আমাকে আল মাহমুদের মুখোমুখি করিয়ে দিলেন। দীর্ঘবছর পর একটানা দীর্ঘসময় আড্ডা দিই। সেই আড্ডা ধারণ করা হয় এবং পরে পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হয়। এর আগে ‘সমকাল’ পত্রিকার উদ্যোগে সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের সঞ্চালনে বাংলা কবিতার আড্ডায় বসেছিলাম। সেখানে ছিলেন আল মাহমুদ, রফিক আজাদ, ফারুক মাহমুদ, রিফাত চৌধুরী এবং ক’জন তরুণ কবি।

নানারকম ব্যক্তিগত স্মৃতির মধ্যে আল মাহমুদকে পেলেও আমার বলা উচিত, কবি আল মাহমুদকে আমি পেয়েছি তাঁর কবিতায়, তাঁর ছন্দে, তাঁর শব্দে। তাঁর চিত্রকল্প আমার খুব পছন্দ হয়। তাঁর কবিতায় গ্রাম-নদী-নারী একাকার হয়ে একটা প্রেম তৈরি করে। তিতাস নদী তো বিখ্যাতই হয়ে গেল অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাস আর আল মাহমুদের কবিতায়।

এটা আমার ভালো লাগে যে, কবি আল মাহমুদের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল, তিনি আমাকে চিনতেন। স্নেহ করতেন। প্রশ্রয় দিতেন। এবং একবার খুব ক্ষেপে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে সরাসরি জাতীয় দৈনিকে লিখলেনও বটে।

আদতে এসব কিছুই নয়। বাংলা ভাষা থাকলে বাংলা কবিতা থাকবে। বাংলা কবিতা থাকলে আল মাহমুদ থাকবেন। কেউ তাঁর পক্ষে থাকবে, কেউ বিপক্ষে যাবে। এতেও যায় আসে না কবির। শেষ বিচারে পাঠক কবির বিচার করবে তাঁর কবিতার ভেতর দিয়েই। জীবিকার আপোষে সবাইকেই কত কিছু করতে হয়, কবিও তার বাইরে যাবেন কি করে। কবিকেও বাড়িভাড়া দিয়ে থাকতে হয়, কাঁচাবাজারে যেতে হয়, হাসপাতালে যেতে হয়। কবি বলে কেউ একটাকা কম নেবে না। অন্য কবিরা যখন প্রগতিশীলতার পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে কামাই করে সংসার চালাচ্ছেন, আল মাহমুদও তখন গেছেন আরেক শিবিরে। কবিতা তো আর চাকরি করেনি। নাকি করেছে? এই নত সময়ে আল মাহমুদের কবিতা খুব যে উন্নত হয়েছে, সেই দাবির জোর পাওয়া যাবে না মনে হয়। এইসব তর্ক-বিতর্কের ফাঁকে, হঠাৎ তাকিয়ে দেখি, এক ডাহুক পাখি ডেকে উঠল, একটি শোল মাছ লাফ দিল জলে, বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব কিন্তু মক্তবের মেয়ে চুল খোলা আয়েশা আক্তারের মন ভালো নেই- কারণ?
কারণ, কবি তাকে নিয়ে আর আগের মতো কবিতা লেখেন না- এছাড়া আর কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই।

আল মাহমুদ এমন একজন কবি, যাকে মনে করতেই আমার শীতরাতে মনোহরপুরে দেখা সেই বালিকাকে মনে পড়ে যায়। যাকে আমি পরবর্তী জীবনে আর খুঁজেও পাইনি কখনো ...
 

২৭ মে ২০১৭
ফরাশগঞ্জ, ঢাকা

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়