ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইকো ট্যুরিজম করমজলে মুগ্ধ দর্শনার্থী

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৫ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইকো ট্যুরিজম করমজলে মুগ্ধ দর্শনার্থী

বাগেরহাট সংবাদদাতা : বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র করমজলে বানর হরিণ কুমিরসহ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। করমজল এখন দর্শনার্থীদের পদচারণায় মূখর।

ক্রমেই করমজলে আকর্ষন বাড়ছে দর্শনার্থীদের। এই মৌসুমে ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। দর্শনার্থীরা স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে করমজলে এসে বেড়িয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন।

সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীনে করমজল পর্যটন কেন্দ্র। নদী পথে খুলনা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং মংলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এ পর্যটন কেন্দ্রটির অবস্থান। ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র ছাড়াও এখানে আছে হরিণ ও কুমির প্রজনন ও লালন পালন কেন্দ্র।

মংলা থেকে ইঞ্জিন নৌকায় চড়লে করমজলের জেটিতে পৌঁছা যাবে এক থেকে দেড় ঘণ্টায়। পর্যটন কেন্দ্রটির শুরুতেই বিশাল আকৃতির মানচিত্র সুন্দরবন সম্পর্কে ধারণা দেবে। মানচিত্র পেছনে ফেলে বনের মধ্যে দক্ষিণে চলে গেছে আঁকাবাঁকা কাঠের তৈরি হাঁটা পথ। পথের নাম মাঙ্কি ট্রেইল। ট্রেইলে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই এক ভিন্ন আবহে পদার্পন করবেন পর্যটক। পুরো ট্রেইল জুড়েই দেখা মিলবে সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা রেসাস বানরের।

পথের দুই ধারে ঘন জঙ্গল। এ বনে বাইন গাছের সংখ্যা বেশি। কাঠের পথ কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের বাঁয়ে শাখা পথ গিয়ে থেমেছে পশুরের তীরে। শেষ মাথায় নদীর তীরে বেঞ্চ পাতানো ছাউনি। মূল পথটি আরও প্রায় আধা কিলোমিটার দক্ষিণে গিয়ে ছোট খালের পাড়ে থেমেছে। পথের মাথায় এখানেও আরও একটি শেইড। সেখান থেকে আবারও পশ্চিম দিকে কাঠের ট্রেইলটি চলে গেছে কুমির প্রজনন কেন্দ্রের পাশে। এই ট্রেইলের মাঝামাঝি জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ বুরুজ। এর চূড়ায় উঠলে করমজলের চারপাশটা ভালো করে দেখা যায়।

কাঠের তৈরি ট্রেইলের  একেবারে শেষ প্রান্তে কুমির প্রজনন কেন্দ্র। সেখান থেকে সামান্য পশ্চিম দিকে হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র। সামনেই ছোট ছোট অনেকগুলো চৌবাচ্চা। কোনটিতে ডিম ফুটে বের হওয়া কুমির ছানা, কোনটিতে মাঝারি আকৃতির আবার কোনটিতে আরও একটু বড় বয়সের লোনা জলের কুমিরের বাচ্চা।

একেবারে দক্ষিণ পাশে দেয়াল ঘেরা বড় পুকুরে আছে রোমিও, জুলিয়েট আর পিলপিল। জেলেদের জালে ধরা পড়া এই তিন লোনা পানির কুমিরকে ২০০২ সালে সুন্দরবনের করমজলে আনা হয়। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম উপায়ে কুমির উৎপাদনে মূল অবদান তাদেরই। জুলিয়েট আকারে রোমিওর চেয়ে সামান্য ছোট। লোনা পানির এই প্রজাতির কুমির আশি থেকে একশো বছর বাঁচে।

বনবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করমজলে হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রে যদি ডলফিনের এক্সিভিশন করা, সুন্দরবনে যে অরকিড আছে সেগুলোর গার্ডেন করা, বাটার ফ্লাইয়ের গার্ডেনসহ আরো একটু বৈচিত্র্য আনতে পারলে আরও দর্শনার্থীদের উপভোগের মজা আরো বাড়বে।

এ মৌসুমে সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী আব্দুল মমিন বলেন, ‘আমরা ৪৬ জনের একটি টিম আসছি। সুন্দরবন স্বচক্ষে দেখে খুবই ভাল লেগেছে। অনেক কিছু দেখলাম, অনেক মজা করেছি’।

ফরিদপুর থেকে আসা গৃহবধু তায়শা ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবনে প্রথম এসে হরিণ, বানর, কুমির, বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ ও নানা পশুপাখি দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’

অনেক দর্শনার্থীদের অভিযোগ, ট্যুরিজম এলাকায় দর্শনার্থীদের বসার টুলের ব্যবস্থা নেই, ফুট ট্রেইল ও ওয়াচ টাওয়ারটি নাজুক । এ কারণে দর্শনার্থীদের ঝুকিঁ নিয়ে চলাচল করতে হয়।’

কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণি ইকো ট্যুরিজমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘পর্যটক মৌসুমে এখানে মাত্র দুটি ঘাট যথেষ্ট নয়। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে নতুন কিছু অবকাঠামো নির্মাণের। যাতে ঘুরতে এসে কোন দর্শনার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়।’

 

 

রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/৫ মার্চ ২০১৮/আলী আকবর টুটুল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়