ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইসলামে ‘সাদকাতুল ফিতর’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৫ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইসলামে ‘সাদকাতুল ফিতর’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : ইসলামে ‘সাদাকাতুল ফিতর’ বা সদকায়ে ফিতরের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ পাক কোরআন মজিদে একাধিকবার তার নির্দেশিত পথে বান্দাকে ব্যয় করতে বলেছেন। এতে তাঁর পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদানের কথা বলা হয়েছে।

ইসলামি শরিয়তে ঈদুল ফিতরে ধনীদের ওপর ‘সাদাকাতুল ফিতর’ ওয়াজিব করা হয়েছে। সদকায়ে ফিতরের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈদের খুশিতে গরিব লোকদেরও শামিল করে নেওয়া। এর দ্বারা রোজার মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য ক্ষতিপূরণও হবে এবং গরিব-দুঃখী মুসলমান নিশ্চিন্ত মনে খাওয়া-পরার জিনিসপত্র সংগ্রহ করে অন্যান্য মুসলমানের সঙ্গে ঈদের জামাতে শরিক হতে পারবেন।

ঈদ উল ফিতরের নামাজের আগেই সদকায়ে ফিতর আদায় করার ব্যাপারে প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদিস রয়েছে। তিনি বিধান অনুযায়ী ঈমানদারদের সদকায়ে ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

এক হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন যেন মক্কার অলিগলিতে এ ঘোষণা দেয় ‘সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব’। (তিরমিজি ২য় খন্ড ১৫১পৃষ্ঠা)

ইসলামে সদকায়ে ফিতরের অনেক ফজিলত রয়েছে। সদকায়ে ফিতর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পছন্দনীয় আমলের মধ্যে একটি। সদকায়ে ফিতরের মাধ্যমে একমাস সিয়াম সাধনা মাহে রমজানের রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।

হাদিসে আছে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, হুজুরে আনোয়ার (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত সদকায়ে ফিতর আদায় করা হয় না, ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার রোজা জমিন ও আসমানের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে।’’(কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড)

আরেক হাদিসে আছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘‘রাসূলে আকরাম (সা.) সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন, যাতে অনর্থক কথাবার্তা থেকে রোজাগুলোর পবিত্রতা অর্জিত হয়, অনুরূপভাবে মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়।’’ (সুনানে আবু দাউদ, ২য় খন্ড)

সাদকাতুল ফিতর কী, কার উপর?
ইসলামী বিধান অনুযায়ী সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব (ফরজের কাছাকাছি)। মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এক সা পরিমাণ যব, খেজুর, পনির কিংবা কিসমিস কিংবা এর সমপরিমাণ টাকা আদায় করতে হবে। সদকায়ে ফিতর আদায় করা না হলে বড় গুনাহগার হবেন।

সদকায়ে ফিতর আদায়ের পরিমাণ উল্লেখ করে এ সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে।

হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ-নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক যব হোক এক সা পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন। লোকজনদের ঈদের সালাতে বের হওয়ার আগেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।  (সহিহ বুখারী)

রাসূলের ( সা.) যুগে সাহাবিগণও এ পরিমাণ সদকায়ে ফিতর আদায় করেছেন।

এ প্রসঙ্গে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত- এক হাদিসে তিনি বলেন, আমরা এক সা পরিমাণ খাদ্য, এক সা পরিমাণ যব অথবা এক সা পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা পরিমাণ পনির, অথবা এক সা পরিমাণ কিসমিস দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (সহিহ বুখারী)

ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭০ টাকা, চাইলে বেশি দেওয়া যাবে :
আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা’ বা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর সর্বোচ্চ বাজার মূল্য ৭০ টাকা দিতে হবে। যব দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০  গ্রাম বা এর সর্বোচ্চ বাজার মূল্য ৫০০ টাকা।

কিসমিস দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর সর্বোচ্চ বাজার মূল্য ১৩২০ টাকা দিতে হবে।  আর খেজুর দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০  গ্রাম বা এর সর্বোচ্চ বাজার মূল্য ১৯৮০ টাকা দিতে হবে।  পনির দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর সর্বোচ্চ বাজার মূল্য ২৩১০ টাকা ফিতরা প্রদান করতে হবে।

সদকায়ে ফিতর কখন আদায় করবেন :
ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী- ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। নাবালক ছেলেমেয়ের পক্ষ থেকে বাবাকে ফিতরা আদায় করতে হয়।

প্রসিদ্ধ ফতোয়াগ্রন্থ ‘ফতোয়ায়ে আলমগীরী’ এর প্রথম খন্ডে উল্লেখ আছে, মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ (সাড়ে সাতভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে ৫২ ভরি রূপা) সম্পদের অধিকারি প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব।

এতে আরো বলা হয়েছে, সদকায়ে ফিতর আদায়ের উত্তম সময় হচেছ ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর থেকে ঈদের নামাজ আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত। যদি চাঁদ রাত কিংবা রমজানের কোনো একদিন বরং রমজানের আগেও যদি কেউ আদায় করে থাকে তাহলে তার ফিতরা আদায় হয়ে যাবে।

সদকায়ে ফিতর তাকে দিতে হবে যে জাকাতের উপযোগী। যাকে জাকাত দেওয়া যায় না তাকে ফিতরাও দেওয়া যায় না। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা)

সদকায়ে ফিতর ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বংশধররা কখনো নিতে পারেন না। অর্থাৎ তাদের সদকায়ে ফিতর দেওয়া যাবে না। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী)

ফিতরা দেওয়ার মাধ্যমে ধনী-গরিবের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান কিছুটা হলেও কমে আসে এবং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। ঈদ উল ফিতরের আগেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উচিত সদকায়ে ফিতর আদায় করা। আল্লাহ আমাদের আল্লাহর নির্দেশিত পথে সদকায়ে ফিতর আদায় করার তওফিক দিন। আমীন



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুন ২০১৮/নঈমুদ্দীন/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়