ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঈদে আমিও নতুন জামা পেতাম : অরুণা বিশ্বাস

কবি স্বরলিপি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১১, ২৯ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদে আমিও নতুন জামা পেতাম : অরুণা বিশ্বাস

আমি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমসে পড়াশোনা করেছি। রোজায় স্কুল বন্ধ হয়ে যেত। লম্বা ছুটি পেতাম। আনন্দের শুরু তো সেখান থেকেই। পূজায় যেমন নতুন জামা পেতাম, একইভাবে ঈদেও পেতাম। যে সময়ের যা পাওয়ার কথা বাবা এনে দিতেন। কেননা আমি সংস্কৃতিমনা পরিবারে বড় হয়েছি। আমাকে কখনো আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে পড়তে হয়নি।

পরিচয় বলতে আমি শিখেছি- আমি অরুণা বিশ্বাস, বাবা অমলেন্দু বিশ্বাস, মা জ্যোৎস্না বিশ্বাস। আমি বাঙালি। আমার জাতীয়তা বাংলাদেশী; সর্বোপরি আমি মানুষ। এর বাইরে আমার আর কি পরিচয় আছে- সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলাম অন্য আরেকজনের কাছ থেকে। আমি তখন ক্লাস ফোরের স্টুডেন্ট। রোজায় স্কুল বন্ধ। আমি ঢাকা আসবো। এক ভদ্রলোক আমাকে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি হিন্দু না মুসলিম?’ উত্তর দিতে পারিনি। বাসায় এসে বাবাকে প্রথম প্রশ্ন করলাম, ‘বাবা আমি কি হিন্দু?’ বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি মানুষ, আগে মানুষ হতে হয়, আগে মানুষ হও’।

হ্যাঁ, আমার একটি পারিবারিক পরিচয়ের মতো ধর্মীয় পরিচয়ও আছে। কিন্তু আমার দেশ বাংলাদেশ, এখানে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস। আমরা একজন আরেকজনের রীতি-নীতি–আচার-অনুষ্ঠানের সাথে পরিচিত। রোজার ইফতারের সময় আমি কখনও ভেদাভেদ দেখিনি। ঈদ একটা সর্বজনীন উৎসব।

আমি যখন ছুটিতে বাড়ি আসতাম; ধানমন্ডিতে ছিল আমাদের বাসা। সেখানে আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল। ঈদে তাদের বাসায় বেড়াতে যেতাম। সারা দিন ওদের সাথে ঘুরাঘুরি করতাম, বিভিন্ন বাসায় খাওয়া-দাওয়া চলতো, বিশেষ করে ঈদের সেমাই খাওয়া হতো খুব। কোনো কোনো দিন ওদের বাসায় থেকেও যেতাম।

এরপর যখন একটু একটু করে বড় হলাম, রাতে বাসার বাইরে থাকি মা চাইতেন না। একটু দুষ্টুও হয়ে গিয়েছিলাম। সেভেন, এইটে যখন পড়ি তখন তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভীষণ ভালো লাগতো। বিশেষ করে ছেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চাইতাম।

এটার পেছনে একটা কারণ আছে বলে আমার মনে হয়। আমি যে স্কুলে পড়তাম সেখানে মেয়েরা পড়ত। ফলে ছেলেদের প্রতি আলাদা আকর্ষণ ফিল করতাম। ছেলেদের সাথে কথা বলতে, আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্ক করতো ভালো লাগতো।

ঈদে অনেকের সাথে নতুন করে পরিচয় হতো, খুব আড্ডা দিতাম। একবার আমার এক বান্ধবী, ওদের বাসা কলাবাগানে, যাই হোক ও আমাকে বলেছে রাতে ওদের বাসায় থাকতে। বাবাকে বলে চলে গেলাম। সারা দিন খুব আনন্দ করছি, হঠাৎ ওই বাসার দারোয়ান আমাকে ডেকে বলল, নিচে তোমার মা এসেছে। দৌড়ে নিচে গিয়ে দেখি গেইটের সামনে রিকশা দাঁড়ানো। মা বসে আছে। মুখটা ভার। আমাকে বললেন, ‘রিকশায় ওঠো’। রাতে বাসায় ফিরে এলাম ঠিকই সকালে আবার বান্ধবীর বাসায় গেলাম ঈদের আনন্দ করতে।

এবার ঈদেও নতুন শাড়ি কিনেছি। শুধু নিজের জন্য কিনেছি তা নয়, প্রিয়জন অনেককেই শাড়ি গিফট করেছি ঈদ উপলক্ষে।

অনুলিখন : স্বরলিপি



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুন ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়