ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

উপ-কমিটি নিয়ে তোপের মুখে কাদের!

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১০, ২০ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উপ-কমিটি নিয়ে তোপের মুখে কাদের!

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ  কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতে আপাতত তিন মাস সহ-সম্পাদকের পদ থাকবে না, সবাই সদস্য হবে- ছাত্রলীগের প্রাক্তন ছাত্রনেতাদের তোপের মুখে এমন ঘোষণা দিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শনিবার ওবায়দুল কাদেরের এমন ঘোষণায় সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের সামনে আনন্দ মিছিল করে কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতারা। তার আগে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ের পাশে নির্বাচনী অফিসে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয় পদবঞ্চিত নেতাদের। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

বৈঠকে ওবায়দুল কাদেরসহ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য আমিরুল আলম মিলন, আনোয়ার হোসেন, এস এম কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বের হয়ে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে সভাপতির কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করে।

উপ-কমিটি নিয়ে গণমাধ্যমসসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে উপ-কমিটি গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়নি বলে উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, অন্তর্ভুক্ত হওয়া নেতাদের সামাজিক মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়ে শুভেচ্ছাও ভাইরাল হয়ে পড়ে। গত ১৭ জানুয়ারি ‘আ.লীগ উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক তালিকা চূড়ান্ত’ সংবাদটি রাইজিংবিডিতে প্রকাশিত হওয়ার পর উপ-কমিটি গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা নড়েচড়ে বসেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিতর্ক এড়াতে এবং নিজস্ব অনুসারীদের উপ-কমিটিতে স্থান দিতেই অতি গোপনে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটি করা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের দুই নেতা।

গত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপকে উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এবং বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক পদে সদস্যদের তালিকা দ্রুত সংশ্লিষ্ট সদস্য সচিবদের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর নভেম্বরে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহের জন্য ছাত্রলীগের প্রাক্তন দপ্তর সম্পাদক নাসিম আল মোমিন রুপক ও সভাপতির কার্যালয়ের স্টাফ সাঈদ আহমেদকে দায়িত্ব দেন।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেকটি বিভাগভিত্তিক সম্পাদকীয় পদের সহযোগী হিসেবে পাঁচজন করে সহ-সম্পাদক থাকার নিয়ম আছে। তবে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদগুলো বিভাগভিত্তিক নয়। তাই এ পদগুলোর বিপরীতে কোনো সহ-সম্পাদক থাকবে না। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাদ দিলে পদ দাঁড়ায় ১৯টি। সহ-সম্পাদকের ব্যাপারে বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘পার্টি অফিসের সামনে যার সঙ্গে ধাক্কা লাগে তিনিই বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক। কিন্তু তারা যে উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এটা বলেন না। এই সহ-সম্পাদকের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে অনেকে নিজ জেলায় অনেক হুমকি-ধামকিও মারে। তাই আগামী সম্মেলনে সহ-সম্পাদকের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে।’

দলের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়ে গত ২৬ অক্টোবর ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০০ করার যে বিধান রয়েছে, আমরা তার বাইরে যাব না। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা একশ’র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।’ আর গত বছরের ৩০ জুন সভাপতির কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে কাদের বলেন, ‘আমরা তো পুরনোদের চিনি। এবার নতুনদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছি। এখানে আমাদের একটা ক্যাটাগরি আছে।’

যারা অন্যান্য শাখা বা কমিটিতে আছেন তারা কিন্তু উপ-কমিটিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি থাকতে পারবেন না। কিন্তু মেম্বার (কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য) থাকতে পারবেন। যারা অন্য কমিটিতে আছেন, এমন কেউ অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি (সহ-সম্পাদক) হতে পারবেন না। এই অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ১০০ অতিক্রম করবে না, সর্বমোট ৯৫ জনের মতো হবে।’

সহ-সম্পাদকদের দায়িত্ব বণ্টনের ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে তিনজন করে সহ-সম্পাদক সংযুক্ত থাকবেন। এ বিষয়ে আমরা আজকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রচার এবং দপ্তর- এই দুটি বিভাগে পাঁচজন করে থাকবেন। তথ্য-গবেষণায় চারজন থাকবেন। এভাবে আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি। এরই আলোকে আমরা পরবর্তী মিটিংয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করব। হয়তো সেক্ষেত্রে আরো একটি মিটিং করে চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করে ধারাবাহিকভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ করব।

সম্পাদকীয় উপ-কমিটির সদস্যদের সীমা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উপ-কমিটির সদস্য পদে ২০ থেকে ৩০ জন থাকবেন। এখানে পার্লামেন্টের মেম্বাররা থাকবেন পাঁচ থেকে সাতজন। অনেক আছে আওয়ামী লীগমনস্ক, আমাদের আদর্শের লোক; তারাও স্থান পাবেন। আর ১৯টি উপ-কমিটির মধ্যে ১৬টি উপ-কমিটিতে তিনজন করে সহ-সম্পাদক থাকবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জানুয়ারি ২০১৮/নৃপেন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়