ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এ অর্জন ধরে রেখে আরো এগিয়ে নিতে হবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫২, ২১ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এ অর্জন ধরে রেখে আরো এগিয়ে নিতে হবে

বাংলাদেশ অচিরেই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এই সুখবর দিয়েছে। দেশ ও জাতির জন্য এটি খুবই আনন্দের সংবাদ। একসময় বাংলাদেশকে অনেক অবজ্ঞা সহ্য করতে হয়েছে। ভিক্ষুকের দেশ, তলাবিহীন ঝুড়ি ও নানা অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করে বাংলাদেশকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। কিন্তু সেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে।

সিডিপি’র সভায় বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় সিডিপি সেক্রেটারিয়েটের প্রধান রোলান্ড মোরালেস এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের হাতে তুলে দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর মধ্যে দুবার মূল্যায়ন করা হবে ২০২১ সালে ও ২০২৪ সালে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালে চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের।

প্রসঙ্গত, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের শর্ত হলো মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা— এই তিন সূচকের যেকোনো দুটিতে নির্ধারিত মান অর্জন করতে হবে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশকে উন্নয়নশীল হতে হলে মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে এক হাজার ২৩০ ডলার। জাতিসংঘের হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার ২৭৪ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে পয়েন্ট থাকতে হয় অন্তত ৬৪, সেখানে আছে ৭২ পয়েন্ট। আর অর্থনৈতিক ঝুঁকি কমিয়ে ৩২ পয়েন্টের নিচে আনলে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্য বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের এই ঝুঁকি বর্তমানে ২৫ দশমিক ২ পয়েন্ট। সিডিপি জানিয়েছে, বাংলাদেশ এই তিন সূচকেই নির্ধারিত মান অর্জন করেছে।

এখন আমাদের এসব অর্জন ধরে রাখতে এবং ক্রমান্বয়ে আরো এগিয়ে নিতে হবে। নিয়মানুয়ায়ী এই অগ্রগতির ধারা আরও ছয় বছর বজায় থাকলে ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশ ঘটবে বাংলাদেশের। তাই সামনের এই ছয় বছর আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা উন্নয়নশীল দেশ হয়ে গেলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যেত তা কমে যাবে। যেমন- এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ এখন রেয়াতি সুদে ঋণ পায়। কিন্তু এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর তা পাওয়া যাবে না। তখন ঋণ নিতে হবে উচ্চ সুদে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্কসুবিধা, মেধাস্বত্ব সুবিধা ইত্যাদি কমে যাবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে বিশ্ববাজারে। দেখা গেছে, এসব কারণে অনেক দেশ এলডিসির তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সমস্যায় পড়েছে। তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে; রপ্তানি, বিদেশি সহায়তা, রেমিট্যান্সও কমেছে। সুতরাং এলডিসি থেকে উত্তরণের পর যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে, সেসব মোকাবিলার প্রস্তুতি এখন থেকেই আমাদের শুরু করতে হবে।

বাংলাদেশ এখন যেসব সুবিধা পাচ্ছে, তা ২০২৪ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। তারপরও তিন বছরের জন্য এসব সুযোগ বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু তত দিনে আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ জোরদার করতে হবে। এ জন্য জ্বালানি ও অবকাঠামোগত ঘাটতি দূর করতে হবে। নজর দিতে হবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ব্যাপক ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।

বিশ্বে বাংলাদেশের নতুন ভাবমূর্তির কারণে বিনিয়োগের যে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে, তা কাজে লাগাতে পারলে এ লক্ষ্য অর্জনে তা সহায়ক হবে। প্রবৃদ্ধির চাকা সচল রাখার পাশাপাশি আমাদের দারিদ্র্য হ্রাসের হার দ্রুততর করা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা মনে করি দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে গতি সূচিত হয়েছে, সেসব অব্যাহত থাকলে তা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ একই গতিতে এগিয়ে যাবে এবং আরো উন্নত হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মার্চ ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়