ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এই আবিষ্কার ডায়াবেটিসের অবসান ঘটাবে!

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৭ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এই আবিষ্কার ডায়াবেটিসের অবসান ঘটাবে!

বর্তমানে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন অথবা ইনসুলিন পাম্প গ্রহণ করা লাগে

এস এম গল্প ইকবাল : ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য নতুন আবিষ্কার হচ্ছে- ক্রেডিট কার্ড আকৃতির পাউচ, যা ত্বকের নিচে স্থাপন করা হয়। এই পাউচে ছোট ছোট টিউব থাকে যা কোষসহ ইনজেক্ট করা হয়- যা ইনসুলিন হরমোন উৎপাদন করে। ধারণা করা হচ্ছে, এই চিকিৎসা ডায়াবেটিস সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করবে।

গবেষকরা দেখেছেন যে, পাউচে এবং এর আশেপাশে রক্তনালীর বিকাশ হয় এবং এটি কোষকে পরিণত হতে সাহায্য করে, এটি পূর্ণ কার্যক্রমের একটি অর্গান সৃষ্টি করে- যা ইনসুলিন উৎপাদন করে ও রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা বর্তমানে টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ে পরীক্ষা করছেন।

টাইপ ১ ডায়াবেটিস তখন হয় যখন ইমিউন সিস্টেম অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন হরমোন উৎপাদনকারী আইসলেটকে (অগ্ন্যাশয়ের এক ধরনের কোষ) আক্রমণ করে, যার ফলে অগ্ন্যাশয়ে এই হরমোন সামান্য পরিমাণে উৎপাদন হয় কিংবা একেবারেই হয় না।

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ইনসুলিন উৎপাদন হ্রাস পায় অথবা এই কোষ এটির প্রতিক্রিয়ার প্রতি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে পড়ে, তাই রক্ত শর্করার মাত্রা উচ্চে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ক্যাপিলারিতে (যা প্রধান প্রধান অর্গানকে খাবারের যোগায় দেয় ও রক্তপ্রবাহ প্রতিরোধ করে) অপরিবর্তনীয় ড্যামেজ হয়।

অনেক বছর ধরে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে, নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন (প্রায়ক্ষেত্রে দিনে কয়েকবার) অথবা ইনসুলিন পাম্প। প্রায় ৩০ শতাংশ টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীরও এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন হয়। কিন্তু ইনসুলিন ইনজেক্টিং অসুবিধাজনক হতে পারে এবং এটি কোনো নিরাময় নয়।

নতুন সারনোভা সেল পাউচকে ডিজাইন করা হয়েছে এই রোগের উপসর্গের পরিবর্তে কারণকে ট্যাকল দেওয়ার লক্ষ্যে, যেখানে নতুন আইসলেট কোষ প্রতিস্থাপন করা হয়।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আইসলেট কোষ প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে, যা সাধারণত সদ্য মৃত ডোনার থেকে নিয়ে যকৃতের শিরায় প্রতিস্থাপনের সঙ্গে জড়িত, কিন্তু গবেষকরা সাজেস্ট করছে যে, সকল প্রতিস্থাপনকৃত আইসলেট কোষ বেঁচে থাকে না এবং এ কারণে অধিকাংশ রোগীর একাধিক প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। এরপর রোগীকে অবশ্যই বাকি জীবনে অ্যান্টি-রিজেকশন ড্রাগ গ্রহণ করতে হয়। পাউচ স্থাপনে এসব সমস্যা নেই, কারণ এটি নিজে নিজে কার্যকরভাবে ইনসুলিন উৎপাদনকারী অর্গান হয়ে যায় এবং এটির কোষ ইমিউন সিস্টেমের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত, তাই রোগীদের অ্যান্টি-রিজেকশন ড্রাগের প্রয়োজন পড়বে না।

বিশেষ পলিমার ম্যাটারিয়াল দিয়ে পাউচ তৈরি করা হয়, যা শরীরে ব্যবহার করা নিরাপদ এবং এটি বিকল হয় না। এটির সারফেসের ছিদ্র এটিতে রক্তনালী বিকশিত হতে সাহায্য করে এবং এতে ক্ষুদ্র টিউব থাকে যেখানে প্রতিস্থাপনকৃত কোষ রাখা হয়। একটি বিশেষ আবরণ এটিকে ইমিউন সিস্টেমের আক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করে।

এই চিকিৎসার দুটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথম পদ্ধতি সাধারণ অ্যানেসথেশিয়া অবলম্বনে করা হয়, যেখানে পেটের ত্বকের নিচে পাউচ স্থাপন করা হয় এবং পাউচের ভেতর রক্তনালী ও টিস্যু বিকাশের জন্য প্রায় তিন সপ্তাহ রেখে দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় পদ্ধতিতে চিকিৎসকরা পাউচের ছোট টিউবে ডোনারের হাজার হাজার আইসলেট কোষ ইনজেক্ট করেন। ইতোমধ্যে রক্তপ্রবাহ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে আইসলেট কোষ ভালো সহায়তা পেয়ে থাকে এবং আশা করা হচ্ছে, তারা স্বাভাবিক অগ্ন্যাশয়ে থাকার মতোই কাজ করবে।

২০১১ সালে কানাডায় অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার এক গবেষণায় পাওয়া যায় যে, ডায়াবেটিক ইঁদুরের মধ্যে পাউচ ফিট করে ১০০ দিন রাখার পর তাদের আর ইনসুলিন ইনজেকশনের প্রয়োজন হয়নি।

এই চিকিৎসা মানুষের জন্যও নিরাপদ বলে প্রমাণ হয়েছে। আইসলেট কোষগুলো ইনসুলিন উৎপাদন করতে সমর্থ হয়েছিল এবং সংবহনতন্ত্রের সঙ্গে সংযোগ করতে পেরেছিল। বর্তমানে এটি টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

গবেষকরা ধারণা করছেন যে, ভবিষ্যতে এই টেকনিক অন্যান্য ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন- হেমোফিলিয়া ও পারকিনসন’স রোগ, যা কিছু কম্পাউন্ডের অভাবে হয়ে থাকে।

হেমোফিলিয়ার ক্ষেত্রে কোষসহ পাউচ ইনজেক্ট করা যেতে পারে, যা রক্ত জমাটবদ্ধতার অ্যাজেন্ট ফ্যাক্টর ৮ এর ধ্রুব মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে, যার অভাবে রোগীরা ভুগে।

মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণকারী ডোপামিনের ঘাটতির কারণে পারকিনসন’স হয়ে থাকে। রোগীদের পাউচে ডোপামিন উৎপাদনকারী কোষ ইনজেক্টিংয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর নতুন পরীক্ষায় টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের সারনোভা সেল পাউচ দেওয়া হবে এবং এক বছর ধরে তাদের রক্ত শর্করা, ইনসুলিনের মাত্রা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মনিটর করা হবে।

ডায়াবেটিস ইউকে’র এমিলি বার্নস বলেন, ‘বিজ্ঞানীরা ইনসুলিন-উৎপাদনকারী কোষ প্রতিস্থাপনের জন্য উপায় খুঁজছেন এবং স্থাপনযোগ্য ডিভাইস তৈরি হচ্ছে এমন একটি পন্থা।’ তিনি যোগ করেন, ‘কোষ প্রতিস্থাপন ও পুনরুৎপাদন হচ্ছে গবেষণার একটি উত্তেজনাপূর্ণ ক্ষেত্র, কিন্তু এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। এটি অবলম্বনে রোগের নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন ট্রায়াল প্রয়োজন হবে। ট্রায়াল সফল হলে এটি ভবিষ্যতে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় বিস্ময়কর পরিবর্তন আনবে।’

এছাড়া, গবেষণায় আবিষ্কার হয়েছে যে নিয়মিত মাছ ভোজন ডায়াবেটিস থাকা হৃদরোগীদের গুরুতর ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। ডায়াবেটিস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং জর্জিয়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা প্রায় ১৮ বছর ধরে ১,১০০ এরও বেশি ডায়াবেটিক প্রাপ্তবয়স্ককে মনিটর করে পেয়েছেন যে, যারা সপ্তাহে দুবারের বেশি মাছ খেয়েছেন তারা যারা সপ্তাহে কোনো মাছ খায়নি তাদের তুলনায় দুবছর বেশি বেঁচেছিল। মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ানো ইনফ্ল্যামেটরি কম্পাউন্ড উৎপাদন হ্রাস করতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুলাই ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়