ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

এই স্বীকৃতি দেশের জন্য বেশ গর্বের

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১০ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এই স্বীকৃতি দেশের জন্য বেশ গর্বের

আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই-জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ফলে ইলিশ বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃতি পাবে। পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী ইলিশের জিআই নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে মৎস্য অধিদফতরের হাতে ইলিশের জিআই নিবন্ধনের সনদ তুলে দেয়া হবে।

দেশে প্রতিবছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। এবারও ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার খবর পাচ্ছি আমরা সংবাদমাধ্যমে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বিশ্বে প্রতিবছর পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়, যার ৬০ শতাংশই হয় বাংলাদেশে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। শুধু পরিমাণগত নয়, স্বাদ বা গুণগত দিক থেকেও আমাদের ইলিশ বিশ্বসেরা। তাই ইলিশ মাছ যে একান্তই আমাদের নিজস্ব এতে কোনো সন্দেহ নেই। জিআই নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো।

ইলিশের এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য বেশ গর্বের বিষয়। কেননা এর মধ্য দিয়ে ইলিশের ওপর বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অধিকার স্বত্ব আকারে সুপ্রতিষ্ঠিত হলো। এই স্বীকৃতির ফলে ইলিশ বিপণনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বিপণন স্বত্বের অংশীদার হবে বাংলাদেশ। ফলে আগের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মূল্য বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশি ইলিশের ব্র্যান্ড ভ্যালুও বাড়বে।

জিআই পণ্য হিসেবে এই স্বীকৃতি এমন সময় এলো, যখন বিশ্বের অন্যান্য অংশে ইলিশের উৎপাদন ক্রমে কমতে থাকলেও বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা বেড়ে চলেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সরকারের জাটকা রক্ষা কার্যক্রম। প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জাটকা ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যার সুফল হচ্ছে এই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি। আমাদের প্রত্যাশা জিআই পণ্য হিসেবে ইলিশ নিবন্ধিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর কদর আরও বাড়বে। তবে ইলিশের রফতানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশীয় বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশের প্রাপ্তিও নিশ্চিত করতে হবে। দেশের বাজারে ইলিশ যেন দুষ্প্রাপ্য মাছ হয়ে না ওঠে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এর আগে গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশের আরেক ঐতিহ্য জামদানি দেশের প্রথম মেধাসম্পদ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। এর মধ্য দিয়ে রচিত হয় মেধাস্বত্ব রক্ষায় এক অনন্য মাইলফলক। আন্তর্জাতিকভাবে ইলিশের একক মালিকানা পাওয়ার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর জিআই নিবন্ধনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছিল মৎস্য অধিদফতর। এবার সেই স্বীকৃতি মিলল।

আমাদের আরো কিছু নিজস্ব সম্পদ রয়েছে এবং সেসবের নিবন্ধন হওয়া প্রয়োজন। ইতিমধ্যে অবশ্য কালিজিরা ধান ও কাটারিভোগের নিবন্ধনের আবেদন প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া নিম, হলুদ ও ফজলি আম রয়েছে আমাদের। তবে এগুলো নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতিবেশি ভারতের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। আমরা আশা করি এসব পণ্যেরও স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে পারবে বাংলাদেশ। আমাদের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশের প্রধান প্রধান মেধাসম্পদ চিহ্নিত, নিবন্ধন ও সেসবের ওপর জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হবেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ আগস্ট ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়