ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এইচএসসি পরীক্ষায় পাবনার ট্রাস্টের ১১ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৩ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এইচএসসি পরীক্ষায় পাবনার ট্রাস্টের ১১ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

পাবনা প্রতিনিধি: এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থাকা ১১ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তারা পাবনার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে।

এসব যুবকের চোখের আলো না থাকলেও, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবার জন্য শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ ও সেন্ট্রাল গার্লস স্কুল কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

এরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার সুশেল চন্দ ধরের ছেলে চন্দন কুমার ধর, পাবনার ফরিদপুর উপজেলার মোক্তার সরকারের ছেলে হারুনার রশিদ, পাবনা সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর গ্রামের সিদ্দিক হোসেনের ছেলে কাওসার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তৌরিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মতিন, তৈয়মুর রহমানের ছেলে আব্দুস সবুর, গোলাম মোস্তফার ছেলে আনারুল ইসলাম, ঢাকার গাজিপুর জেলার থেকে গোলজার হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান শাওন, নওগাঁ জেলার টিপু সুলতানের ছেলে মাহবুব জামান, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার হাবিবুর রহমানের ছেলে আরিফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ জেলার বাচ্চু মিয়ার ছেলে নাদিম হোসেন এবং টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার শ্যামল চন্দ্রের ছেলে ভোলানাথ চন্দ্র।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী কাওসার হোসেন, আরিফুল ইসলাম, হারুনার রশিদ জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকের, তাদের সন্মানী দিতে হয় আট থেকে দশ হাজার টাকা। অথচ শ্রুতি লেখকদের সম্মানী তো দূরের কথা, লেখাপড়ার করার ন্যূনতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা আমাদের নেই।
 


এছাড়া শিক্ষাবোর্ড থেকে শ্রুতি লেখকদের অনুমোদন, রেজিষ্ট্রেশন জটিলতা এবং বিভিন্ন বোর্ডের ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালার কারণে পদে পদে তাদের হয়রানীর শিকার হতে হয়। তারপরেও থেমে থাকছেনা এসব সংগ্রামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষা জীবন।

এ ১১ জন পরীক্ষার্থীর মত আরো প্রায় ৮০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছেন। এ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪ জন পথশিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা ও ২ জন এমএ সহ মোট ১৮৫ জন বিভিন্ন শ্রেণিতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

পাবনা মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ‘সংবাদপত্রে প্রচারের মাধ্যমে দেশবাসীর নিকট এই প্রতিষ্ঠানের কথা ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিবন্ধী ছাত্র ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। এ প্রতিষ্ঠানে সকল ধর্মের প্রতিবন্ধী ছাত্রদের আশ্রয় দিয়ে সম্পূর্ণ খরচমুক্ত তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামীতে ছাত্রদের আবাসনজনিত সংকটের কারণে নির্মাণাধীন ৫ তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করা, একটি ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন এবং অসহায় প্রবীণদের জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন ১৯৯৪ সাল থেকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে সময় ও শ্রম দিয়ে প্রতিবন্ধী গোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে আসছেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনাবাসিকভাবে বিভিন্ন জেলার ১২ জনদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীকে বরাবর আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন।

 

 

রাইজিংবিডি/পাবনা/১৩ এপ্রিল ২০১৯ /শাহীন রহমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়