ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এক হাতে স্বপ্ন জয়

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৪ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক হাতে স্বপ্ন জয়

মিজান, ছবি : নিরব অরণ্য

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : মিজানের জন্মই যেন আজন্ম পাপ। জন্মের প্রথম মুহূর্তে মিজানকে মেরে চিরদিনের মতো ঝামেলা বিদায় করতে চেয়েছিলেন বাবা। মায়ের কারণেই সে যাত্রা প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এরপর নিশ্চয়ই আর বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, মিজানের শৈশব কতটা অনাদর, অবহেলায় কেটেছে। পরিবার, সমাজ এমনকি স্কুল শিক্ষকরাও তাকে তুচ্ছজ্ঞান করেছে অনেক সময়। তবুও মিজানের পথচলা থেমে থাকেনি, সব বাঁধা পেরিয়ে মিজান এগিয়েছে স্বপ্ন জয়ের পথে।

 

নোয়াখালী জেলার হাতিয়া দ্বীপের জাহাজমারা ইউনিয়নে মিজানের জন্ম। তার শৈশব-কৈশর বা বেড়ে ওঠার গল্প সমাজের অন্য দশ জনের মতো ছিল না। কারণ জন্ম থেকেই তার ডান হাত নেই। যে বয়সে মিজানের মা-বাবার মমতা পাওয়ার কথা, সে বয়সে পেয়েছেন চরম অবহেলা। পাড়ার ছেলেরা খেলায় নিতো না। ক্লাশের বন্ধুরা হাসাহাসি করতো। কিন্তু পড়ালেখায় নিয়মিত ভালো করতো মিজান। তবুও কটাক্ষ করতো স্কুল শিক্ষকেরা। চতুর্থ শেণিতে পড়াকালীন এক শিক্ষক বলেছিলেন, ভালো ভালো ছাত্ররা জায়গা পায় না, পুঙ্গ আসে ক্লাশ করতে।

 

পড়ালেখার খরচের জন্য বাবার কাছে টাকা চাইলে বিরূপ মনোভাব দেখাতেন। বলতেন, ছেলের হাত নেই, ওকে দিয়ে পড়ালেখা হবে না। এ ঘটনা মিজানকে ভীষণ জেদি করে তোলে। সমাজের দশজনের মতো নয়, বরং দশজনের চেয়ে ভালো কিছু করার স্বপ্ন বুনতে থাকেন তিনি। মিজানের অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে সব বাধা এক সময় হার মানে। এক হাতেই তিনি জয় করেছেন সাফল্যের স্বপ্নচূড়া। কৃতিত্বের সাথে টপকে গেছেন এসএসসি, এসএইচসি। এমনকি বেশ সাফল্যের সাথে শেষ করেছেন উচ্চশিক্ষার গণ্ডি। নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে ২০১২ সালে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স ও ২০১৩ সালে মাস্টার্স শেষ করে মিজান।

 

পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা ও লেখালেখিতেও মিজানের জুড়িমেলা ভার। শৈশবে যে মিজানকে সমবয়সীরা খেলায় নিতো না, সেই মিজান এক সময় স্থানীয়ভাবে খেলাধুলায় বেশ নাম করে। হাতিয়া দ্বীপে এখন কোনো ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হলে সেখানে মিজানের নাম থাকবেই। খেলে চ্যাম্পিয়ানও হয়েছেন তিনি। শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবলেও নোয়াখালী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ক্যারাম, ব্যাডমিন্টন ও দাবা খেলাতেও মিজানের জুড়ি মেলা ভার। লেখালেখিতেও মিজান সুনাম কুড়িয়েছে বেশ। স্থানীয় পত্রিকায় লিখছেন নিয়মিত। ২০১০ সালে ‘গ্রামীণ ফোন বিজয়ের গল্প’ লিখে সেরা গল্পকার নির্বাচিত হন তিনি। মিজানকে নিয়ে প্রামাণ্য অনুষ্ঠান তৈরি করেছে দেশ টিভি ও চ্যানেল আই। বিজ্ঞাপনচিত্র তৈরি করেছে গ্রামীণ ফোন।

 

সফলতার জন্য মিজানকে জীবন যুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে অবিরাম। অবহেলিত সেই মানুষটি আজ সবার কাছে সাফল্যেল উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সমাজে মিজান এখন তারুণ্যের অনুপ্রেরণা। এলাকার প্রতিবন্ধী শিশুদের মা-বাবা মিজানকে দেখে ভরসা খুঁজে পান। পরামর্শ নেন তার প্রতিবন্ধী সন্তানকে কীভাবে মিজানের মতো যোগ্য করে তুলবেন। মিজান বলেন, সফলতার কোনো শটকাট রাস্তা নেই, প্রতিবন্ধকতা আসবে, সব বাধা পেরিয়ে সাফল্য ছিনিয়ে আনতে হবে।

 

মিজানের এখন একটাই স্বপ্ন- বিসিএস দিয়ে সরকারী বড় কর্মকর্তা হওয়া। যে পরিবারের ভাবনা ছিল মিজানকে দিয়ে কিছু হবে না। সেই পরিবার আজ তাকিয়ে আছে তার দিকে ভালো কিছুর প্রত্যাশায়।






রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জানুয়ারি ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়