ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

একজন কাস্তেওয়ালা মনমতো

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ১৯ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একজন কাস্তেওয়ালা মনমতো

মাগুরা প্রতিনিধি : চার আনা দামে কাস্তে বিক্রি করেছেন। এখন বিক্রি করছেন ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। পেশায় কামার মনমতো পোদ্দার ৭০ বছর ধরে হাটে হাটে কাস্তে বিক্রি করছেন। কয়েক বছর আগেও কাস্তে নিজে তৈরি করতে পারতেন। বয়সের কারণে এখন আর পারেন না। ছেলে বিষ্ণু পোদ্দারের তৈরি করা কাস্তে পাইকারি কিনে হাটে বিক্রি করেন। কাস্তে বিক্রি না করলে তার পেটে ভাত যায় না।

মনমতো পোদ্দারের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের জালসুখো গ্রামে।

মহম্মদপুর উপজেলা সদরে সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। নিয়মিত হাটে কাস্তে বিক্রি করতে আসেন তিনি। কথা হয় তার সঙ্গে। বাবা প্রিয়নাথ পোদ্দার কামারের কাজ করতেন। বাবার হাত ধরে শুরু। একদিনও স্কুলে যাননি। সাত বছর বয়স থেকে বাবার তৈরি কাস্তে হাটে হাটে বিক্রি করতেন। পরে নিজেই কাস্তে তৈরির কাজ শুরু করেন।

কৃষি প্রধান এলাকায় ধান, পাট কাটতে কাস্তের চাহিদা রয়েছে। মৌসুম শুরু হলে কাস্তের চাহিদা বেড়ে যায়। স্থানীয়ভাবে কাঁচি বলা হয়। কাঁচিতে বিশেষভাবে ধারকাটা হয়। মনমতোর কাস্তের সুনাম সর্বত্র।

বাবার জমিজমা নেই। জমি বলতে তিন-চার শতকের বসতভিটা। স্ত্রী সুমতি পোদ্দার ও চার ছেলে মনমতোর। তিন ছেলে কামার আর এক ছেলে কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করছেন। তাদের সবার আলাদা সংসার। ছেলেরা তেমন খোঁজ খবর নেন না। এই বয়সেও মনমতোর হাটে-হাটে কাস্তে বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। চোখেও তেমন দেখেন না। শরীরের শক্তি এখন কমে আসছে।

মনমতো পোদ্দার বলেন, ৪ আনা থেকে কাস্তে বিক্রি করছেন। এখন একটা কাস্তে বিক্রি করেন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। লাভ তেমন হয় না। আধুনিক যন্ত্রপাতি বের হওয়ায় কাস্তের চাহিদাও কমে গেছে। 

তিনি বলেন, ‘সারা জীবন একই কাজ করে গেলাম। অন্য কিছু পারি না। এই কাজ করে পরিবারের জন্য শুধু সৎভাবে দু-মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। আর কোনো উন্নতি করতে পারিনি।’ শেষ জীবনে সরকারি সহায়তা হিসেবে একটা বয়স্কভাতার কার্ড যাতে পান, সেই ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান তিনি।

মহম্মদপুর সদরের কৃষক আতিয়ার রহমান (৫০) জানান, এখনো কৃষকের কাজের অন্যতম যন্ত্র কাস্তে। ধান-পাট কাটতে কাস্তের প্রয়োজন হয়। মনমতো পোদ্দারের কাস্তে এই এলাকায় নামকরা।

দীর্ঘ জীবনে চোখের সামনে মনমতো রাষ্ট্র-মানুষের অনেক পরিবর্তন দেখেছেন। দ্রুত পাল্টে গেছে সমাজ-মানুষের জীবনধারা। মনমতোদের তেমন পরিবর্তন হয়নি। জীবনের শেষ কটা দিন কীভাবে কাটবে, তা ভাবলে চোখ আরও ঝাপসা হয়ে আসে মনমতোর।



রাইজিংবিডি/মাগুরা/১৯ জুলাই ২০১৭/মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়