ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

একটি চাকরি চান প্রতিবন্ধী চাঁদের কনা

অদিত্য রাসেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ২৬ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একটি চাকরি চান প্রতিবন্ধী চাঁদের কনা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা : যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছেন তিনি। এ বছরই চাকরির বয়স শেষ। বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে চাঁদের কনা। এখন তার বয়স ৩১ বছর। শিশুকাল থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার। হাতের উপর ভর দিয়ে হেঁটেই পার হয়ে ২০১৩ সালে ইডেন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরির জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন এ দুয়ার থেকে ও দুয়ার। কিন্তু সেই চাকরি আর ধরা দেয়নি। তাই নিরূপায় হয়ে বুধবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন সেই চাঁদের কনা।

তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, মাত্র নয় মাস বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে দুটি পায়ের কার্যক্ষমতা হারায় চাঁদের কনা। তবুও বাবা-মায়ের সচেতনতা আর নিজের প্রতিবন্ধকতা জয়ের অদম্য চেষ্টায় চলতে থাকে হাতে হেঁটে পড়ালেখা। চাঁদের কনা যখন অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী, তখন তার মা হাসনা হেনা বেগম মারা যান। এর কয়েক বছর পর ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা।

পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এবং বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে তার জীবনে প্রতিবন্ধিতার সঙ্গে নেমে আসে চরম দারিদ্র্যতা। অবশেষে পড়ালেখার খরচ যোগাতে একটি বেসকারি টিভি চ্যানেলে সামান্য বেতনে চাকরি নেন তিনি। শত কষ্টের মাঝেও গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে সফলতার সঙ্গে অর্জন করেন উচ্চতর ডিগ্রি। চাঁদের কনা বলেন, সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। অর্জন করেছেন প্রথম বিভাগ। শুধু তাই নয়, পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন।

টিভি-রেডিওতে সংবাদ পাঠ; টিভি প্রোগ্রাম গ্রন্থনা; উপস্থাপনা ও পরিচালনা; নাটক, গল্প ও কবিতা লেখা; অভিনয় ও কবিতা আবৃতি করা; গল্প বলা; ছবি আঁকা এবং কম্পিউটারে সকল কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি।

চাঁদের কনা আরো বলেন, রাজশাহী মাদার বক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে তিনি অনার্স পড়েছেন। পঞ্চম তলায় তার ক্লাস হতো। অন্যসব ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে আসতেন ৯টার দিকে। অথচ তিনি কলেজে যেতেন সকাল ৭টার দিকে। কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে তার দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যেত। স্কুল জীবন থেকে শুরু করে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন পর্যন্ত এমন হাজারো বাধা পেরিয়ে তিনি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন; শুধু তার স্বপ্ন একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার জন্য। এরপর যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। এ বছরই তার সরকারি চাকরির বয়স শেষ। বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে বসা তার হুইল চেয়ার ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন বার্তা লেখা ২০টির মতো প্লাকার্ড। গলায় ঝুলছে, ‘আমি আমার মা প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসা চাই। তার সঙ্গে দেখা করতে চাই’ লেখা প্লাকার্ড।

 

 

রাইজিংবিডি/সিরাজগঞ্জ/২৬ জুন ২০১৯/অদিত্য রাসেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়