ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

এফবিআই-কানাডা পুলিশের সাক্ষ্যগ্রহণের শুনানি ৩ জানুয়ারি

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এফবিআই-কানাডা পুলিশের সাক্ষ্যগ্রহণের শুনানি ৩ জানুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক : নাইকো দুর্নীতি মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ও কানাডার রয়েল মাউন্টেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিতে পারবেন কিনা-এ বিষয়ে শুনানির তারিখ আগামী ৩ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত।

রোববার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ীভাবে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান শুনানির এদিন ঠিক করেন।

এদিন বেলা ১১ টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, নাইকো দুর্নীতি মামলায় ১৩ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ক্ষতির মাধ্যমে লোপাটের অভিযোগ। দেশীয় সংস্থার পাশাপাশি বিদেশেও এ অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। দেশীয় তদন্ত সংস্থা ও বিদেশি তদন্ত সংস্থার কার্যক্রম প্রায় একই রকম। সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এফবিআই ও কানাডার রয়েল মাউন্টেন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে উপস্থাপন করে সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত ২২ নভেম্বর আদালতে আসামিপক্ষের উপস্থিতিতে এ আবেদন দাখিল করেন। মামলায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে রাষ্ট্রেপক্ষের এ আবেদন গ্রহণের জোর দাবি জানান তিনি।

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আজ যেহেতু এ মামলার নির্ধারিত তারিখ না। শুধুমাত্র রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সময় আসামিদের আদালতে উপস্থিত থাকা জরুরি। আসামিরা সামনে না থাকলে এমন সিদ্ধান্ত দেওয়া ঠিক হবে না।

এরপর বিচারক এ আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি কার পক্ষে কথা বলছেন? আপনি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের (আসামি) পক্ষে বলছেন। তার পক্ষে সময় আবেদন করেছেন। এ মামলার অপর আসামিদের পক্ষে কোনো আবেদন করা হয়নি। এরপর আসামিপক্ষের আরও কোনো আবেদন দেওয়া হয়েছে কি না-তা আদালতের বেঞ্চ সহকারীর (পেশকার) কাছে জানতে চান বিচারক। বেঞ্চ সহকারী আদালতকে জানান, আর কোনো আবেদন দেওয়া হয়নি।

এ সময় মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আমি খালেদা জিয়ার পক্ষে এক্ষুণি আবেদন করছি।

তখন আদালত বলেন, আপনি তো মওদুদ আহমদের পক্ষে করেছেন। একজনের পক্ষে। ওই সময় মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিচাকের উদ্দেশ্যে কিছুটা উচ্চস্বরে বলেন, আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন না? আমি বললাম তো খালেদা জিয়ার পক্ষে এক্ষুণি আবেদন দিচ্ছি। এ সময় বিচারক আসামিপক্ষের এ আইনজীবীকে স্বরণ করিয়ে দেন যে, তিনি আদালতের ভেতর কথা বলছেন। এরপর মাসুদ আহমেদ তালুকদার ধার্য তারিখে সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়ে শুনানির আবেদন করেন।

এ সময় মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আদালতে গত ১০ বছর ধরে আমরা শান্তিতে আছি। আজ হঠাৎ কেন তিনি (মাসুদ আহমেদ তালুকদার) হট হয়ে গেলেন? প্রতি উত্তরে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আমি হট হইনি। মাইক হট হয়েছিল।

এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান বলেন, আমরা লিখিত অবজেকশন দিতে চাই। খালেদা জিয়াকে এ বিষয়ে জানানো উচিত। আইন অনুসারে কমিশনের কর্মকর্তা ছাড়া বাইরের কর্মকর্তার তদন্তের ক্ষমতা নেই। পরবর্তী তারিখ শুনানির জন্য ধার্য করলে ভালো হয়। বিষয়টি আমরা খালেদা জিয়াকে জানাবো।

এ পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী বলেন, নাইকো দুর্নীতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মামলা। আমরা আমাদের (দুদক) তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছি। এছাড়া এফবিআই ও কানাডা পুলিশ যে তদন্ত করেছে তা আপনার (বিচারক) কাছে উপস্থাপন করতে চাই। বিদেশে যে তদন্ত হয়েছে তা আমাদের দেশের আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই হয়েছে।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সকল আসামির পক্ষে আপত্তি দাখিলসহ বিদেশি সাক্ষীদর সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। একই সঙ্গে আসামিদের আদালতে হাজির হতে আদেশ দিয়েছেন।

বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম শেষ হয়।

এদিকে শুনানি শেষে আদালতের বাইরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, মামলা হয়েছে বাংলাদেশে, কানাডায় কোন মামলা হয়নি। এফবিআই বা কানাডা পুলিশ তদন্ত করতে পারবে না। তদন্ত করবে আমাদের দেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। তাদের তদন্ত করার এখতিয়ার নাই। এ মামলায় চার্জ শুনানি চলছে। চার্জ শুনানির আগে এ ধরনের আবেদন দেওয়ার এখতিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল বা পিপিদের কোনো ক্ষমা নেই। অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচনের আগে জাতিকে একটা চমক দেখানোর জন্য এ আবেদন করেছেন। এ আবেদন খারিজ হবে এবং অ্যাটর্নি জেনারেল কোন সুবিধা পাবেন না বলে আশা করছেন সানাউল্লাহ মিয়া।

শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমেরিকা এবং কানাডায় নাইকোর বিষয়ে তদন্ত হয়েছে। সেখানে ঘুষের প্রমাণ মিলেছে। দুদক আইন অনুসারে আদালত যে কোন সময় সাক্ষী নিতে পারবেন। আজই তাদের আসার কথা ছিল, আসতে পারেনি। পরবর্তীতে তারা আসবেন বলে কথা দিয়েছেন।

এর আগে ২২ নভেম্বর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে আসামিপক্ষের উপস্থিতিতে তিন বিদেশির  সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন করেন। আবেদনের সঙ্গে কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর দুর্নীতির বিষয়ে এফবিআই ও কানাডিয়ান পুলিশের দুটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।

গত ১৪ নভেম্বর নাইকো দুর্নীতির মামলায় চার্জ (অভিযোগ) শুনানির দিন ধার্য ছিল। ওইদিন আদালত আসামিপক্ষের সময় আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। একই দিন সকল আসামির পক্ষে আপত্তি দাখিলসহ বিদেশি সাক্ষীদর সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয়ে শুনানির জন্যও ধার্য করেছেন আদালত।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ডিসেম্বর ২০১৮/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়