ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

১৬৫ কোটি টাকা পাচার

এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে তলব

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২০, ১২ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভুয়া অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে ১৬৫ কোটি টাকা পাচারের মামলার তদন্তে আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের (এবি) বর্তমান চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো নোটিশে তাদেরকে মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) দুপুর ২টা হাজির হওয়ার জন্যা বলা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্যা জানা গেছে। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর থেকেও রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

তলবকৃতরা হলেন-এবি ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমান চৌধুরী।

এর মধ্যে এম এ আউয়ালকে দ্বিতীয়বারের মতো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য্ তলব করেছে দুদক। তাকে অনুসন্ধান পর্যায়ে গত ৭ জানুয়ারি প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল দুদক।

এছাড়া মঙ্গলবার একই মামলায় আসামি এবি ব্যাংকের হেড অব অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (ওবিইউ) মোহাম্মদ লোকমান, হেড অব করপোরেট ব্যাংকিং মোহাম্মদ মাহফুজ উল ইসলাম এবং জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নুরুল আজিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে।

এর আগে এ ঘটনায় প্রাক্তন চেয়ারম্যান, এমডি ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ভুয়া অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে ১৬৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গত ২৫ জানুয়ারি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়।

তারা হলেন-এবি ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক, প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ চৌধুরী, মো. ফজলুর রহমান, কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এবি ব্যাংকের হেড অব অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (ওবিইউ) মোহাম্মদ লোকমান, হেড অব করপোরেট ব্যাংকিং মোহাম্মদ মাহফুজ উল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নুরুল আজিম এবং এবি ব্যাংকের গ্রাহক আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল হক।

দায়ের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে ১৬৫ কোটি টাকা এবি ব্যাংকের চট্টগ্রাম ইপিজেড শাখা থেকে দুবাইয়ে পাচার করে এবং পরে তা আত্মসাৎ করে। আত্মসাৎকালে ওয়াহিদুল হক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। কথিত ওই বিনিয়োগ এবং অর্থ আত্মসাতের নেপথ্যে ব্যাংকের গ্রাহক আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের সাইফুল হকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এক সময় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কাজ করা সাইফুল হকের এবি ব্যাংকে কোনো অংশীদারিত্ব নেই। তবে তিনি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোরশেদ খানের মেয়ের স্বামী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সাইফুল হক দুবাইয়ে থাকাকালে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সদস্য খুররম আবদুল্লাহ ও আব্দুস সামাদ খানের সঙ্গে তার সখ্য হয়। তিনি এবি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হকেরও পূর্বপরিচিত। সাইফুল হকই এবি ব্যাংকের অর্থপাচারের বিষয়ে ওই প্রতারক চক্রের সঙ্গে ‍ওয়াহিদুল হকের পরিচয় করিয়ে দেন। পরে দুবাই ও বাংলাদেশে একাধিকবার বৈঠক করেন তারা।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ওয়াহিদুল হক ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল ব্যাংকের বোর্ডকে না জানিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুবাই গিয়ে প্রতারক চক্রের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর ওই প্রতারক চক্র পিনাকল গ্লোবাল ফান্ড (পিজিএফ) নামে একটি কোম্পানি সৃষ্টি করে। সেই কথিত পিনাকলের ৮ কোটি ডলারের সঙ্গে এবি ব্যাংকের ২ কোটি ডলার মিলিয়ে ১০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করে তা দুবাইয়ে বিনিয়োগের একটি কাল্পনিক প্রস্তাব তৈরি করা হয়। আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও শামীম আহমেদের যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংকের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করে তা পাস করিয়ে নেওয়া হয় ২০১৩ সালে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে চেং বাও জেনারেল ট্রেডিং এলএলসি নামের এক কোম্পানির নামে পাঠানো ওই ২ কোটি ডলার আবুধাবির একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যায়। সেখান থেকে পরে তা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে অর্থপাচারের ওই ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়। মামলার দায়ের করার পর এম ওয়াহিদুল হকসহ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে দুদক। যদিও ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ছাড়া বাকি আসামিরা জামিনে আছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ মার্চ ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়