ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এলো খুশির ঈদ

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ১৫ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এলো খুশির ঈদ

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন :

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ,
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনাদানা বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ …

জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের সূরে কণ্ঠ মিলিয়ে বছর ঘুরে মুসলিম উম্মাহর দূয়ারে আবারো এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় খুশির দিন। রাত পোহালেই ঈদের আনন্দ উৎসবে মেতে উঠবে সারাদেশ।

কবি নজরুলের ভাষায় ঈদের আনন্দ আজ সকলের মাঝে পড়ুক ছড়িয়ে। হিংসা-বিদ্বেষ, ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে জাত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মিলিত হই ঈদের এই সীমাহীন আনন্দ-উৎসবে।

ঈদ সবার জীবনেই কম-বেশি আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেয়।  শুক্রবার সন্ধ্যাকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ঈদের চাঁদ দেখার কথা নিশ্চিত করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। শনিবার সারাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদ উল ফিতর। আর তাতেই ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে ঈদ আনন্দ উদযাপনের বার্তা।

একদিন আগেই আজ শুক্রবার মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে ঈদ উল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। সৌদি আরবে সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কিছু জেলায়ও ঈদ উদযাপন করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তারা দেশটির সঙ্গে মিলিয়ে একদিন আগে রোজাও রাখেন।

ঈদুল ফিতর বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব। দিনটি মুসলমানদের জন্য বরকতময়ও। এই ঈদের প্রবক্তক হচ্ছেন মানবতার মুক্তির দূত হযরত মোহাম্মদ (সা.)। হিজরি দ্বিতীয় সন থেকে মুসলমানেরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করে আসছেন।

হাদিসে আছে মহানবী (সা.)বলেছেন, প্রত্যেক জাতিরই উৎসবের দিন আছে। আর আমাদের উৎসব হলো ঈদুল ফিতর।’

ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা গোসল শেষে পাক পবিত্র হয়ে সাধ্যমত নতুন ও পরিষ্কার জামা কাপড় পরিধান করে খুশবু আতর লাগিয়ে পবিত্রতার সঙ্গে পারলে একটু মিষ্টিমুখ করে সুন্দর, পরিবেশে ঈদের জামায়াতে শরিক হন। ঈদের জামাতে আখেরি মোনাজাতে আল্লাহর দরবারে পাপ মুক্তি চেয়ে এবং নিজের ও দেশের কল্যাণ কামনা করে প্রার্থনা করেন।

ঈদের নামাজের পর পরই শুরু হয় ঈদের সামাজিক ও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। পরিচিত অপরিচিত সবার সঙ্গেই কোলাকুলি,শুভেচ্ছা বিনিময়ের পালা। ধনী হোক গরিব, কালো হোক আর সুন্দর বুকে বুক মিলিয়ে আপন করে নেন একে অপরকে। পবিত্র ঈদ উল ফিতর যেন বৈষম্যহীন এক মিলনমেলা। ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে পরস্পর মিলনমেলার এক আবহ তৈরি হয়। এ সময় ধনী-গরিব কোন ব্যবধান থাকে না।

মূলতঃ  ঈদুল ফিতর ধনী গরিব ভেদাভেদ ভুলে একে অপরকে আপন করে নেবে। দাঁড় করাবে সবাইকে এক কাতারে। এই আনন্দ অনুভূতির কোনো শেষ নেই। ছোট বড় সালাম ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে পার করেন দিনটি। এসময় ভাবধর্মীয় গম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ঈদের দিনে সময়-সুযোগ করে আত্মীয়-বন্ধুদের বাড়িতে যাওয়ার ব্যাপার তো রয়েছেই।

ঈদুল ফিতরের মধ্যে ফিতর শব্দের এক অর্থ ভঙ্গ করা। ঈদুল ফিতরের অর্থ রোজার সমাপ্তি ঘটানোর আনন্দ। অর্থাৎ দীর্ঘ এক মাস তারাবির নামাজ, সাহরি, ইফতার, জাকাত-ফিতরা এবাদত বন্দেগীসহ সিয়াম সাধনার মধ্যদিয়ে পার করার পর মুসলিম উম্মাহ রোজা ভঙ্গ করে মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য উপহার স্বরূপ এই ঈদ উল ফিতর। এই আনন্দ কর্মশেষে সাফল্যের আনন্দ।

ঈদের আনন্দ সর্বজনীন আর তাই এই আনন্দ প্রাপ্তির আনন্দ। এই আনন্দ আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের সাফল্যের আনন্দ। আর এই আনন্দ রূপ নেয় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উৎসবে। ঈদুল ফিতর পরিণত হয়েছে সার্বজনীন উৎসবে।

এক মাস টানা সিয়াম সাধনা ঈদের অনাবিল আনন্দ বয়ে আনে এক অপার্থিব অনুভূতি। এ আনন্দ পরকালীন জীবনের জন্য শান্তি ও মুক্তি লাভের এক অনন্য আধ্যাত্মিক অনুভূতির। তাই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রমজান শেষে শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখামাত্রই খুশির জোয়ার বয়ে যায় প্রতিটি রোজাদারের দেহ মনে। এই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবার মধ্যে। প্রতিটি প্রাণে দোলা দেয় ঈদের আনন্দ।

বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে ইতিমধ্যে বাড়িঘরে পৌঁছে গেছেন দেশের অধিকাংশ মানুষ। তবে ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিজ নিজ কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সহকর্মীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন।

ঈদ উপলক্ষ্যে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত ব্যানার দিয়ে সজ্জিত করা হচ্ছে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক, মোড়সহ গুরত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো।

জাতীয় সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা, ঈদ ম্যাগাজিন। জাতীয় ঈদগাহে ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ ও শোলাকিয়ায় বরাবরের মতো ঈদের বৃহত্তর জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হবে বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ভবঘুরে কেন্দ্র ও এতিমখানায়। সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিওতে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। টিভি চ্যানেলগুলো ইতোমধ্যে পাঁচ থেকে সাত দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

ঈদ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট  প্রফেসর এ কিএম বদরুদ্দৌজা চৌধুরীসহ শীর্ষ রাজনীতিক দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহর সুখ শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুন ২০১৮/নঈমুদ্দীন/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়