ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

কপোতাক্ষে জমা হচ্ছে শত শত টন পলি, শঙ্কায় বাসিন্দারা

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৯ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কপোতাক্ষে জমা হচ্ছে শত শত টন পলি, শঙ্কায় বাসিন্দারা

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : খননকৃত কপোতাক্ষ নদে ফের পলি জমতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে আবারও মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ছে ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদ।

কপোতাক্ষ অববাহিকায় অন্তত ২৫ লাখ জনগোষ্ঠীর বসবাস। অববাহিকার এসব বাসিন্দারা বলছেন, কপোতাক্ষ রক্ষায় টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট বা জোয়ারাধার) প্রকল্প চালু করেও এবার নদের মাঝ বরাবর ক্রসড্যাম না দেওয়ায় তালা উপজেলার পাখিমারা জোয়ারাধারে পলি অবক্ষেপণ হচ্ছেনা। একইভাবে কপোতাক্ষে জোয়ারে আসা পলি জমে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এখনই এই পলি জমা রোধ করতে না পারলে এখানকার টিআরএম প্রকল্প ভেস্তে যেতে পারে এমন আশঙ্কা তাদের।

বাসিন্দারা আরও জানান, এ ধরনের জটিলতার কারণে যশোরের বিল খুকশিয়া ও বিল কপালিয়ার জোয়ারাধার প্রকল্প লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। একই কারণে এলাকাবাসী কপোতাক্ষ অববাহিকায় আগের মতো ভয়াবহ জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় পানি কমিটি সোমবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে যে নিয়ম অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসের দিকে পলি আসার আগে নদীতে ক্রসড্যাম দিতে হয়। কয়েকমাস পর বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই তা অপসারণ করে নদী উন্মুক্ত করে দিতে হয়।

তারা জানান, এবার ৬৪ লাখ টাকার বরাদ্দ পেয়ে ক্রসড্যামের কাজ শুরু করলেও তা এখনও শেষ হয়নি। অথচ বর্ষা মৌসুম আগত প্রায়। ফলে কপোতাক্ষে পলি জমা হচ্ছে শত শত টন। অন্যদিকে এর সাথে সংযুক্ত পাখিমারা জোয়ারাধার প্রকল্পে পলি অবক্ষেপণ হতে পারছে না। ফলে সেখানে মাটি ভরাটও হ্রাস পেয়েছে। জোয়ারাধার প্রকল্পের আওতায় প্রায় আড়াই হাজার কৃষক পরিবার ক্ষতির মুখে পড়েছে। নদীতে ৮০ ভাগ পলিই আসে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে।

তারা আরও জানান, জোয়ারাধার বা টিআরএম এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, খননকৃত নদী যাতে ফের পলি পড়ে ভরাট না হয়। একই সাথে সাগর থেকে আসা পলি যাতে টিআরএম বিলে অবক্ষেপণ হয়ে বিলটি দ্রুত ভরাট হতে পারে।

তারা জানান, যথাসময়ে ক্রসড্যাম নির্মিত না হওয়ায় এরই মধ্যে খননকৃত নদের এক তৃতীয়াংশ পলি দ্বারা ভরাট হয়ে গেছে। নদের মুখে কাটপয়েন্টের উজানে ক্রসড্যাম নির্মাণ জরুরি ছিল।



সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন শেষে পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম, উপজেলা কমিটির সভাপতি ময়নুল ইসলাম, সেক্রেটারি মীর জিল্লুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আলাউদ্দিন জোয়ার্দার ও অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানিসম্পদ মন্ত্রী বরাবর এক সপ্তাহের মধ্যে ক্রসড্যাম সম্পন্ন করা সহ তিন দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ খনন এবং টিআরএম বাস্তবায়নে যেসব শর্ত ছিল তার মধ্যে প্রতিবছর শত ফুটেরও বেশি চওড়া ক্রসড্যাম দেওয়া ও তা যথাসময়ে অপসারণের বিষয় উল্লেখ ছিল। গত বছর এ কাজে বরাদ্দ ছিল ৮৬ লাখ টাকা। অথচ এবার কোনো কাজই দৃশ্যমান না হওয়ায় কপোতাক্ষ ফের মরণ দশার দিকে ঝুঁকে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কপোতাক্ষ সংযুক্ত পাখিমারা টিআরএম প্রকল্পে ক্রসড্যাম না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কেশবপুর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মো. সাঈদুর রহমান বলেন, ‘ক্রসড্যাম আমরা ফেব্রুয়ারিতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু কপোতাক্ষ খননের পর এর পানির ভলিউম এবং স্রোত ও জোয়ারভাটা বেড়ে গেছে। ফলে চাকলা ব্রিজের কাছে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পাখিমারা ক্রসড্যামও ধসে গেছে। বৃষ্টির কারণে নতুন করে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। ফের কাজ শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এই ক্রসড্যাম সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।’




রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/৯ এপ্রিল ২০১৯/শাহীন গোলদার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়