ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কবি সুফিয়া কামালের ১০৭তম জন্মবার্ষিকী

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২০ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কবি সুফিয়া কামালের ১০৭তম জন্মবার্ষিকী

শাহ মতিন টিপু: বেগম সুফিয়া কামালের ১০৭তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯১১ সালের ২০ জুন তিনি বরিশালের শায়েস্তাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, লেখক ও নারী আন্দোলনের পথিকৃত।

তিনি লেখালেখির পাশাপাশি নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িক দেশগঠন ও বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

শৈশবেই তার লেখালেখি শুরু। সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশ পায় মাত্র পনের বছর বয়সে ১৯২৬ সালে। তার প্রথম গ্রন্থ ছোটগল্পের বই ‘কেয়ার কান্তা’ প্রকাশ পায় ১৯৩৭ সালে এবং প্রথম কবিতার বই ‘সাঝের মায়া’ প্রকাশ পায় ১৯৩৮ সালে। ‘সাঝের মায়া’ গ্রন্থের মুখবন্ধ লিখেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এ বইয়ের প্রশংসা করেন। লেখালেখির বিভিন্ন সময়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়’র সাহচার্য পান।

পিতা সৈয়দ আবদুল বারী ও মায়ের নাম সৈয়দা সাবেরা খাতুন। সেই আমলে মেয়েদের পড়ালেখা ও ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করার খুব একটা সুযোগ ছিল না। সুফিয়া কামাল তার মায়ের কাছে বাড়িতেই পড়াশোনা করে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। তার কর্ম জীবনের প্রথম দিকে দেশভাগ পর্যন্ত প্রায় তিন দশক কলকাতায় বসবাস করেন।

কর্মজীবনে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত কবি ‘কলকাতা কর্পোরেশন স্কুল’ এ শিক্ষকতা করেন। পরে ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এসেই নারী আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

বেগম সুফিয়া কামালের এরপরের জীবনও বর্ণাঢ্য। ১৯৫৬ সালে ‘কচিকাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬১ সালে ‘ছায়ানট’-এর সভাপতি, ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি, ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ গঠন এবং এই সময়ে অসহযোগ আন্দোলনে নারী সমাজের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদবিরোধী সংগ্রামে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর কবি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

বেগম সুফিয়া কামালের ১০৭তম জন্মবার্ষিকীতে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথকভাবে বাণী দিয়েছেন।

প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন বাংলাদেশের নারী সমাজের এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার জীবন ও আদর্শ এবং অমর সাহিত্যকর্ম নতুন প্রজন্মের প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।’

প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে কবি সুফিয়া কামালের ছিল দিপ্ত পদচারণা। তার সৃজনশীলতা অবিস্মরণীয়। শিশুতোষ রচনা ছাড়াও দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ সংস্কার এবং নারীমুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত করে।’

সাহিত্য ও নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জীবিতকালেই কবি সুফিয়া কামাল প্রায় ৫০টি পুরস্কার লাভ করেন। এ সবের মধ্যে রয়েছে, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২), লেনিন পদক (১৯৭০, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে), একুশে পদক (১৯৭৬), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫),স্বাধীনতা দিবস পদক। তিনি ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সরকারের ‘তমসা-ই-ইমতিয়াজ’ পুরস্কার প্রত্যাখান করেন।

কবির জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আগামী ২৭ জুন বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এতে ‘কবি সুফিয়া কামাল স্মারক বক্তৃতা’ রাখবেন বিশিস্ট সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ। নারী নির্যাতনবিরোধী কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখায় অনুষ্ঠানে তিনজনকে চলতি বছরের ‘কবি সুফিয়া কামাল সন্মাননা’ প্রদান করা হবে। ঢাকার সেগুন বাগিচায় কবি সুফিয়া কামাল ভবনে এই কর্মসূচি পালিত হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জুন ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়