ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কমিটি নয়, অ্যাকশন দেখতে চাই : হাইকোর্ট

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ২৫ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কমিটি নয়, অ্যাকশন দেখতে চাই : হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক: সড়ক দূর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে কিন্তু  বিআরটিএ কিছু করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শুধু  কমিটি গঠনের দোহাই দিলে হবে না, অ্যাকশন নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন আদালত।

মঙ্গলবার গ্রিন লাইন বাসচাপায় পা হারানো রাসেলের ক্ষতিপূরণ মামলার শুনানির এক পর্যায়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। শুনানীতে রাসেলকে ক্ষতিপুরণ না দেয়ায় গ্রিনলাইন বাসের মালিকপক্ষের প্রতিও তীব্র ক্ষোভ জানান আাদালত।

শুনানির শুরুতে আদালত গ্রিনলাইনের আইনজীবী মো. ওজিউল্লাহর কাছে জানতে চান আপনারা কতো টাকা দিয়েছেন?

জবাবে আইনজীবী ওজিউল্লাহ বলেন, চিকিৎসা বাবদ  সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি।

আদালত বলেন, আপনারা অসহায় এ ছেলেটার একটা ব্যবস্থা করতে পারতেন। কোন না কোন  ভাবে সহযোগিতা করতে পারতেন।

আপনারা আপিল বিভাগে গেছেন, সেখানে নাকচ হয়েছে। এখন আমরা বিষয়টা শুনতে বাধ্য। যদি ২৫ লাখ টাকা চিকিৎসার জন্য এবং বাকী ২৫ লাখ তার জীবন নির্বাহের জন্য দিতেন, ভাল হতো। কিন্তু মানুষ হিসেবেও কিছু করেননি। আপনাদের আচরণ ছিল অশোভনীয়। এখন ক্ষতিপুরণের অর্থের পরিমান কমানোর কোনো সুযোগ নেই।

আদালত বলেন, আপনারা ক্ষতিপুরণ কমানো এবং কিস্তিতে দেয়ার সুযোগ চাইছেন। ছেলেটি তার ওপর ইচ্ছাকৃত গাড়ি  চাপানোতে পা হারিয়েছে। অথচ ছেলেটার একটু খোজ নিলেন না।

আদালত জানতে চান, আজকে কি কোনো টাকা দিয়েছেন?

আইনজীবী ওজিউল্লাহ নিরব থাকলে রিট আবেদনের আইনজীবী খন্দকার সামসুল হক রেজা দাঁড়িয়ে বলেন, তারা আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেনি। এমনকি কিভাবে ক্ষতিপুরণ দিবে তাও জানায়নি। অথচ প্রতিদিন তাদের আয় ১ কোটি টাকা।

এ সময় আদালত গ্রিন লাইনের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপানারাতো দেওলিয়া হয়ে যাননি। কিছু টাকা দিলে কি হতো ? ছেলেটার সামনে এখনো অনেক সময় পড়ে আছে। এ সময় বিআরটিএর পক্ষের আইনজীবী দাঁড়িয়ে আদালতে বলেন, বিআরটিএ ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর  থেকে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির কার্যক্রম এখনো চলছে।

আদালত বলেন, আমরা কমিটি নয় অ্যাকশন দেখতে চাই। সড়কে এখনো বিশৃঙ্খলা রয়েছে। এবারের  ঈদেও অন্তত ৪৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে,আহত হয়েছে ৭শ। আপনারা কিসের নিরাপত্তা দিচ্ছেন?

বিআরটিএর আইনজীবী আবারো বলেন, আমরা কমিটি করেছি।

আদালত বলেন, এটা গতানুগতিক। মানুষ মারা যাচ্ছে। বিআরটিএ কিছু করতে পারছে না।

পরে আদালত গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে  বলেন, যদি আপনারা আদেশ লঙ্ঘন করেন, তাহলে আমরাও অন্য ব্যবস্থা নেব। কোনো ভাবে ক্ষতিপুরণের পরিমান কমানোর সুযোগ নেই। যে লোক আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করার ফন্দিফিকির খোজে তাকে সরকার কিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় সেটা আমরা দেখবো। আপনারা ধর্মঘট করতে পারেন। আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা শপথ নিয়েছি, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো। আপনারা যথেষ্ট বেয়াদবি করেছেন, ম্যানেজারের আচরণ ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ।

এরপর আদালত প্রতিমাসে ৫ লাখ টাকা কিস্তি করে ক্ষতিপূরণের বাকী ৪৫ লাখ টাকা গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষকে বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে পরিশোধ করতে বলেন। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে প্রতিমাসের ১৫ তারিখে তা আদালতকে জানাতে বলা হয় আদেশে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জুন ২০১৯/মেহেদী/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়