ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কলাবাগানে জোড়া খুন : তদন্তেই থমকে আছে বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪৩, ২৫ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কলাবাগানে জোড়া খুন : তদন্তেই থমকে আছে বিচার

মামুন খান : রাজধানীর কলাবাগানে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে খুনের মামলা তদন্তেই থমকে আছে।

২০১৬ সালের এই দিনে রাজধানীর ধানমন্ডিতে কলাবাগানের ৩৫ নম্বর বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন করা হয় জুলহাজ ও তনয়কে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত দুই বছরেও শেষ করতে পারেনি পুলিশ। দীর্ঘ দিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তে দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার।

মামলার বাদী ও নিহত জুলহাজ মান্নানের ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘ঘটনার পর দুই বছর পার হলে গেল। এতো দিনেও  মামলার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। মামলার বিচারকাজ সম্পাদন, আসামিদের ধরা বা আদৌ এটা সম্পর্কে কিছু করার আগ্রহ সরকার প্রথমদিন থেকেই দেখায়নি। দুই বছরেও বের করা যায়নি কারা খুন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বিচারকাজের কোনো অগ্রগতির ব্যাপারে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ, আইন সংস্থা কারো কোনো আগ্রহ কখনো প্রতীয়মান হয়নি। তারা মামলার বিষয়ে কখনো সিরিয়াস ছিল না এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। মামলাটির বিচার ব্যবস্থা চলে গেছে অন্য হিসেবে। প্রকাশক দীপন, ব্লগার অভিজিৎ বা কার মামলার বিচার হয়েছে। তাহলে আমার ভাই হত্যার বিচার হবে কিভাবে। এগুলো একই সুঁতোর ভিতর পড়েছে। তবে আমাদের এতটুকুই দাবি অনন্তকাল যেন বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। এখনো আম্মা জিজ্ঞাসা করেন তার ছেলে কোথায় ? আমরা বলি আছে, ভালো আছে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে এর মধ্যে মোটামুটি কারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের সনাক্ত করতে পেরেছি। মামলাটিতে তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। স্বীকারোক্তিতে কয়েকজনের সাংগঠনিক নাম এসেছে। আমরা তাদের খুঁজছি।’

কবে নাগাদ চার্জশিট দিতে পারবেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে কারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের সনাক্ত করতে পেরেছি। কয়েকজন পলাতক রয়েছে। যারা পলাতক রয়েছে তাদের বের করে আদালতে হাজির করাবো।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির কলাবাগানে বাসায় ফেরেন জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়। তারা বাসায় ফেরার ১০ মিনিট পর ৫/৬ জন লোক তাদের বাসায় যায়। তাদের বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ বছর, তাদের গায়ে একই রংঙের টিশার্ট ও পিঠে ব্যাগ ঝুলানো ছিলো। তারা দুটি খাকি রঙের কার্টন নিয়ে পার্সেল ডেলিভারির কথা বলে জুলহাজের বাসার বেল বাজায়। এরপর তারা ঘরে প্রবেশ করে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে ফাঁকা গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা বাসা থেকে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় কলাবাগান থানায় জুলহাসের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সি অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনায় ওইদিনই ওই থানার এসআই মোহাম্মদ শামীম বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে অস্ত্র মামলাটির তদন্ত করছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ সেন্টু মিয়া।

মামলা দুটির মধ্যে হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য রশীদ উন নবী ভূইয়া ওরফে টিপু, শরিফুল ইসলাম ওরফে কেরামত ওরফে সিয়াম/শিহাব, মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমন, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ও ইয়াছিন মিয়া ওরফে জাভেদ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। আর অস্ত্র মামলায় শরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তবে মামলাটিতে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, নিহত জুলহাজ বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনার প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন। হত্যাকা-ের আগে ‘রূপবান’ সম্পাদনার পাশাপাশি জুলহাজ কাজ করতেন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডিতে। আর নিহত তনয় নাট্য সংগঠন ‘লোক নাট্যদল’ এর শিশু সংগঠন পিপলস থিয়েটারে জড়িত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ এপ্রিল ২০১৮/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়