ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

কাদের ভাইকে যেমন দেখেছি

ডাবলু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ২৯ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাদের ভাইকে যেমন দেখেছি

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু, স্টকহোল্ম : সে অনেকদিন আগের কথা। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়ে একটি অংশ ছাত্রলীগ নামধারণ করে গঠন করে আরেকটি  কমিটি। এই কমিটি পরবর্তীতে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে  সমর্থন জানায়। মূল ছাত্রলীগ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মুজিববাদের স্লোগান দিয়ে শেখ শহিদুল ইসলাম ও এমএ রশিদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে।

 

মুজিববাদের আদর্শ হলো সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ছাত্রলীগের এই কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন ওবায়দুল কাদের। বাংলায় লেখার তার বেশ দক্ষতা ছিল। সম্ভবত এ কারণেই ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক পদটি পেয়েছিলেন তিনি।

 

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় অফিসের একটি রুমে বসে গভীর রাত পর্যন্ত পত্র-পত্রিকায় প্রেস রিলিজ লিখে পাঠাতেন। মধ্যরাতে অফিসের সব নেতা-কর্মী চলে গেলে তারপর যেতেন তিনি। এ সময় ঢাকা কলেজের ওপর পাশে চিটাগাং রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য কয়েকটি হোটেলে বসে কখনো কখনো রাতের খাবার খেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হওয়া সত্ত্বেও চলতেন সাধারণের মতো। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি তার আশপাশে কখনো স্থান পায়নি। কর্মীদের প্রতি সবসময়ই ছিল তার অত্যন্ত স্নেহ, মায়া-মমতা।

 

৩০ নাম্বার মিরপুর রোডের দোতলায় ছিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যালয় আর নিচের তলায় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের কার্যালয়। আমি তখন ছাত্রলীগ ঢাকা আইডিয়াল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আর মাদারীপুরের গোলাম কিবরিয়া ছিলেন সভাপতি। সাংগঠনিক কাজে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ অফিসে বলতে গেলে প্রতিদিন সন্ধ্যায়ই যেতে হতো। এখানেই প্রথম পরিচয় হয় ওবায়দুল কাদের ভাইয়ের সঙ্গে। দপ্তর সম্পাদক বলে মহানগর কিংবা কলেজের সভাগুলোতে তিনি একেবারে দাওয়াত পেতেন না বলা চলে। বিষয়টি নিয়ে তিনি মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মমতাজ হোসেন ভাই ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম ভাইয়ের সঙ্গে কয়েকবার দুঃখ প্রকাশও করেছেন। পরবর্তীতে চুয়াত্তর-পঁচাত্তর সময়ে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের বিভিন্ন কলেজ ও আঞ্চলিক শাখার সভাগুলোতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে অত্যন্ত আবেগ ও জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে সবাইকে জাগিয়ে তুলতেন  ওবায়দুল কাদের ভাই।

 

ওবায়দুল কাদের ভাইয়ের ভাষণ আর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর ভাষণ আমার কাছে একই রকম মনে হতো। বাংলায় দখল থাকার কারণে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করার মতো খুব সুন্দরভাবে বক্তব্য রাখতে পারতেন তিনি।

 

আমার এখনো মনে পড়ে শেখ শহিদুল ইসলাম ভাই, ইসমত কাদির গামা ভাই, রবিউল আলম মুক্তাদির চৌধুরী ভাই, তাজুল ইসলাম ভাই, শফিউল আলম প্রধান ভাই, ডাক্তার মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ভাই, ওবায়দুল কাদের ভাই, খ ম জাহাঙ্গীর ভাই, মমতাজ হোসেন ভাই, শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ভাই, শেখ কামাল ভাইসহ আরো কয়েকজন ছাত্রনেতা সিটি ছাত্রলীগের অধীনে আয়োজিত সভাগুলোতে আমন্ত্রিত হতেন। শেখ সেলিম ভাই কিংবা সৈয়দ আশরাফ ভাইকে কখনো কোথাও খুব একটা বেশি দেখা যেত না। তারা ছিলেন ছাত্রলীগের ডাকসাইটের নেতা। এ সময় ঢাকা শহর ছাত্রলীগের দেখাশুনা করতেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ভাই।

 

স্বাধীনতার পর দ্বিতীয় বারের মতো ঢাকার রমনার বটতলায় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি নির্বাচনকালে আমাকে সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ সময় কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র সৈয়দ নুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র শফিকুর রহমান। মহানগর ছাত্রলীগের এই নুতন কমিটি শেখ কামাল ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে প্রস্তাবিত হয়েছিল। কাদের ভাই তখন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। এই কমিটির সভাপতি ছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী ভাই ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শফিউল আলম প্রধান ভাই।

 

শেখ কামাল ভাই সিটি ছাত্রলীগের  সাংগঠনিক  কার্যকলাপ  চালানোর জন্য  দুটো  হোন্ডা দিয়েছিলেন যা ব্যবহার করে আমরা ঢাকা শহরের এক  মাথা  থেকে  আরেক  মাথায়  ছাত্রলীগের সভাগুলোতে যোগদান করতাম। কাদের  ভাই হোন্ডা চালাতে পারতেন না। তিনি আমাদের হোন্ডার পেছনে বসে বেশ কিছু সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন। ইতিমধ্যে কাদের ভাই সিটি  ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। এভাবেই নোয়াখালীর ছেলে ওবায়দুল কাদের ভাই ধীরে ধীরে ঢাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

 

’৭৫ জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠা হলে নুতন প্রতিষ্ঠিত জাতীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা নতুনভাবে শুরু হয়। ওবায়দুল কাদের ভাই এ সময় ছিলেন সক্রিয়। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে যারা সেদিন ঢাকায় গোপনে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যকলাপ চালিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যেও সক্রিয় ছিলেন ওবায়দুল কাদের ভাই। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গোপনে বিভিন্ন স্থানে সভা করে খন্দকার মোস্তাকের ডাকা প্রথম  সংসদ অধিবেশনে যোগদান না করার হুমকি চিঠি, ৪ নভেম্বরের মৌন মিছিলসহ সব কাজে জড়িত ছিলেন কাদের ভাই। তিনি কখনো কোনো সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে পিছপা হননি।

 

১৯৭৭ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ঢাকার সোবহানবাগ কলোনির ছাদের ওপর অনুষ্ঠিত গোপন সভায়ও তার উপস্থিতি ছিল। এ সভায় চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা এস এম ইউসুফ ভাই, রবিউল আলম মুক্তাদির চৌধুরী ভাই, মমতাজ হোসেন ভাই, মানিকগঞ্জের গোলাম মহিউদ্দিন ভাই, জগন্নাথ হলের দাদা মুকুল বোস, ইসমত কাদির গামা ভাই, শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ভাইসহ আরো কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও  ছাত্রলীগের মধ্যেও চলছিল দ্বন্দ্ব। এই গোপন সভার ব্যবস্থা আমি করলেও সেদিন তাদের কারো কাছেই প্রকাশ করিনি আমার বাংলাদেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা।

 

এভাবেই একদিন সংগ্রামী এসব ছাত্রনেতাকে ছেড়ে আমি বিদেশ চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। আর সেই  থেকে সবার সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

 

দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে ওবায়দুল কাদের ভাই তার দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতিফলন হিসেবে প্রথমবারের মতো মন্ত্রীপদ লাভ করেন। তিনি তার এই দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছেন বলে বলা হয়ে থাকে। ২০০৬ ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকারের আমলে সম্পূর্ণ বিনা কারণে তাকে গ্রেপ্তর করে নির্যাতন করা হয়েছিল। এ সময় কারাগারে বসে তিনি একটি বইও লিখেছিলেন যা পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়েছে। সেদিন কারাগারে নির্যাতিত হওয়া সত্বেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য না দেওয়া থেকে তিনি কৌশলে বিরত থাকার চেষ্টা করেন। যদিও তখন কিছু কিছু মিথ্যা কথা তার মুখ দিয়ে জোরপূর্বক বের করার চেষ্টা করেছে সামরিক বাহিনী। পরবর্তীতে  ফখরুদ্দিন আহমেদের অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্বে ২০০৮ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় বারের মতো জয়ী হয়ে যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রী পরিষদে তাকে নেওয়া হয়নি দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। ঠিক তার বেশ কিছুদিন পরে আমি ঢাকায় বেড়াতে যাই।

 

বন্ধু বিক্রম ত্রিপুরা (বর্তমানে সচিব) ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার রোডে ক্যাফে বেঙ্গল নামের একটি রেস্টুরেন্টে আমাদের কয়েকজনের মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। অনেকদিন পর এখানে রবিউল ভাই, ডাক্তার মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ভাই, মমতাজ ভাই ও কাদের ভাইসহ কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কিছু স্মৃতি স্মরণ করে সেদিন আমাদের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। এখানে একসঙ্গে বসে সন্ধ্যার খাবার  খেয়েছিলাম। পরে আমি খাবারের বিল দিতে গেলে কাদের ভাই আমাকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই বিল পরিশোধ করেছিলেন। কাদের ভাই সেদিন তার পুরানো স্টাইলে আমাকে বললেন, ডাবলু তুমি সুইডেনে থাকো, সুইডেনে গেলে আমাকে খাওয়াবে, এখন আমাকে বিল দিতে দেও। কাদের ভাইয়ের সুইডেনে আসা আর হয়নি, আমার তাকে বদলা খাওনোর সুযোগও হয়নি। বন্ধু বিক্রম ত্রিপুরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এটাই ছিল কাদের ভাইয়ের সঙ্গে আমার সামনা-সামনি শেষ দেখা।

 

এখানে আমি পরিষ্কারভাবে সবাইকে বলেছি, বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে এখন আর আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সুইডেনে আমি মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, আমি ঢাকা ছেড়ে আসার পর পরই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাদের ভাইকে মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব দেন। সংবাদটি আমার কাছে ছিল অত্যন্ত আনন্দজনক। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকন্যা সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে শুরুতেই সরকার গঠনে ওবায়দুল কাদের ভাইকে কেন মন্ত্রিত্বে নেওয়া হয়নি তার কারণ একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই বলতে পারবেন।

 

২০১৪ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণ করে সরকার গঠনকালে এবার শুরুতেই ওবায়দুল কাদের ভাইকে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশে সবার কাছেই আজ সুপরিচিত মন্ত্রী তিনি। পত্র-পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রায়ই দেখা যায় তাকে রাস্তায়, বাসে এখানে সেখানে জনগণের মাঝে। সম্প্রতি তিনি বাসের সাধারণ যাত্রী হয়ে অফিসও করেছেন একদিন। অন্য মন্ত্রীদের বেলায় এ ধরনের উদহারণ দেখা গেছে বলে আমার জানা নেই। এভাবে মাঝে মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের মতো অন্য মন্ত্রীরা যাতায়াত করলে হয়তো ধীরে ধীরে সবাই এই পথে আসতে বাধ্য হবেন। প্রয়োজনে বাংলাদেশের মন্ত্রীরা সাধারণ বাসে, বাইসাইকেল কিংবা রিকশায়ও যাতায়াত করতে পারেন। ইউরোপের মন্ত্রী-এমপিরা যদি সাধারণ মানুষের মতো চলতে পারে তাহলে বাংলাদেশের মতো এত দরিদ্র দেশে এই বিলাসিতা থাকবে কেন? এমন উদাহরণ যদি বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপিরা দেখাতে পারেন তাহলে দেশের পরিবেশের জন্য হবে সবচেয়ে বেশি উপকার। অন্যদিকে মন্ত্রীর গাড়ির জন্য রাস্তা বন্ধ করে জনগণকে কষ্ট দেওয়ার প্রথাও উঠে যাবে।

 

সমালোচকরা ওবায়দুল কাদের ভাইকে নানা নামে সম্বোধন করে থাকেন। তিনি নাকি মিডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে চলাচল করেন। আমি তো বলব ঠিক তার উল্টো কথা। মিডিয়াই তাদের স্ব স্ব ইন্টারেস্টে নিউজ কাভার করার জন্য তার পেছনে ছোটাছুটি করে। কারণ বর্তমান মন্ত্রী পরিষদে যে কয়জন মন্ত্রী আছেন তাদের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের কাজে-কর্মে তিনি হলেন সবচেয়ে সক্রিয়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে কাজে-কর্মে অবহেলা ও  গরমিলের কারণে অনেককে তাদের চাকরি থেকে তিনি সাসপেন্ড করেছেন।  মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভাইয়ের এ ধরনের কার্যকলাপে তার পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু এখানে ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ের দোষ কোথায়? তিনি কি দুর্নীতিতে জড়িত? তিনি কি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন? কিংবা অন্য কিছু অন্যায় করেছেন যা জনগণ ও রাষ্ট্রের বিপক্ষে? যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে কেন আসবে তার বিরুদ্ধে এই  ভিত্তিহীন সমালোচনা?

 

সম্প্রতি হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সৈয়দ আশরাফ ভাইয়ের পরিবর্তে ওবায়দুল কাদের ভাইকে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি ও শুনেছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা আশরাফ ভাই ও কাদের ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ আশরাফ ভাইয়ের বিকল্প তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই পদে আসার সব ধরনের যোগ্যতা রাখেন। সৈয়দ আশরাফ ভাই বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে যেমন বিশ্বস্ত ও কাছের মানুষ বলে পরিচিত; ওবায়দুল কাদের ভাইও ঠিক তেমনি বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত।

 

আওয়ামী লীগের বর্তমান মন্ত্রী পরিষদে যে কয়েকজন জনপ্রিয় মন্ত্রী রয়েছেন তাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের ভাই হলেন একজন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হিসেবে কাদের ভাইয়ের রয়েছে সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে এক বিরাট অভিজ্ঞতা। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে বলতে হবে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ তার জন্যই এতদিন অপেক্ষায় ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত সঠিক ও সময়োপযোগী।

 

২০১৯ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার ওপর এখন এক বিরাট দায়িত্ব। এ দায়িত্ব যেভাবেই হোক তাকে সফল করে তুলতেই হবে। তিনি এখন এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। এ পরীক্ষার পাস-ফেল এখন তার নিজের হাতেই।

 

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন। অন্যদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে যারা দুর্নীতির মাধ্যমে দলকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করছে তাদের ব্যপারে দ্রুত অ্যাকশনে নামা। বিরোধী দলের দুর্বলতার সুযোগে এখন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী গ্রামে-গঞ্জে-শহরে হয়ে উঠেছেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। এদের অনেকের কারণে সরকারের ভালো দিকটা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে বলেই পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাই নিশ্চয়ই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করি।

 

লেখক : ইলেক্টেড কাউন্টি কাউন্সিলার, স্টকহোল্ম কাউন্টি কাউন্সিল। ইলেক্টেড প্রেসিডেন্ট, সুইডিশ লেফট পার্টি, স্টকহোল্ম হেসেলবি ভেলেংবি ব্রাঞ্চ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ অক্টোবর ২০১৬/ডাবলু/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়