ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কিভাবে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করবেন?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কিভাবে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করবেন?

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : ভালোবাসা দিবসে নতুন দম্পতিরা বেশি কিছু করার তাগিদে চাপ অনুভব করে। অন্যদিকে দশকের পর দশক একত্রে থাকা কোনো দম্পতি হয়তো এ দিবসটিকে পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারে। পাঁচ বছর কিংবা ১০ বছরের সম্পর্কে থাকা কেউ কোনো কার্ড অথবা স্বীকৃতি পেয়ে বিস্মিত হতে পারে। নতুন দম্পতিরা যে এ দিবসটিকে ঘিরে অতি উত্তেজিত থাকে সেটা সহজে অনুমেয়।

যারা অল্প সময় ধরে সম্পর্কে আছেন কিংবা যাদের সম্পর্কের সময়ের দৈর্ঘ্য উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পৌঁছেছে অথবা যারা খুব দীর্ঘসময় ধরে সম্পর্কে জড়িত তাদের ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবস কিভাবে উদযাপন করা উচিৎ?

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েসের অন্তর্গত স্কোকির থেরাপিস্ট লিন জাকেরি কিছু পরামর্শ দিয়েছেন যা সকল দম্পতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে, যেমন- সম্পর্কের উষ্ণতা রাখুন, প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু না পেয়ে হতাশ হবেন না কিংবা অস্বাভাবিক আচরণ করবেন না। সম্পর্কের সময়ের দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন, প্রত্যেক দম্পত্তির চিন্তা করা উচিৎ যে, ভালোবাসা দিবসটিকে কিভাবে ভিন্নভাবে উদযাপন করা যায়।

জাকেরি বলেন, ‘কোনো ব্যর্থতার জন্য আপনার সঙ্গীর দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়বেন না। যদি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় এমন কিছু না ঘটে তাহলে হতাশ না হয়ে কোমল ভাষায় সঙ্গীকে এ সম্পর্কে জানাতে পারেন।’

নতুন দম্পতি
প্রথমত, অতিরঞ্জিত উদযাপনের জন্য দুশ্চিন্তা করবেন না। নিয়ান্টিকের ম্যারেজ থেরাপিস্ট কেটি জিসকিন্ড বলেন, ‘নতুন দাম্পত্য সম্পর্কের মানে এই নয় যে আপনাকে প্রচুর খরচ করতে হবে না। যদি আপনি প্রচুর ব্যয় করেন, তাহলে আপনার সঙ্গীকে অভিভূত করতে পারেন।’

ভালোবাসা দিবসে নতুন দম্পতিদের একটি কমন প্রবণতা হলো হয়তো অতি কম করবে নয়তো অতি বেশি করবে। কেউ কেউ সর্বস্ব ব্যয় করে দিবসটিকে রাঙাতে চায়।

জাকেরি সতর্ক করেন, ‘যদি আপনি সম্পর্কের প্রথম বছরে অত্যধিক ব্যয় করেন, তাহলে একটা নজির রেখে দিচ্ছেন। এর ফলে দ্বিতীয় বছরে তেমনটা খরচ না করলে আপনার সঙ্গী নেতিবাচক অনুমান করতে পারেন। যেমন- আমরা কি আগের মতো ভালো সম্পর্কে নেই? সে কি আমাকে ছেড়ে অন্য কারো দিকে মনোযোগ দিয়েছে?’

অনেকে নিজেদের ইচ্ছে প্রকাশকে দমন করতে পারে, তারা সঙ্গীর কাছে তাদের প্রয়োজনকে প্রকাশ করে না। জাকেরি বলেন, ‘তারা এভাবে প্রকাশ করতে চায় না যে ‘তুমি আমাকে পছন্দ করার চেয়ে আমি তোমাকে বেশি পছন্দ করি’ অথবা ‘তোমার আমাকে প্রয়োজনের চেয়ে আমার তোমাকে বেশি প্রয়োজন’।

কিন্তু কিছু ছোট ইঙ্গিত দেওয়াতে কোনো ভুল নেই। প্রকৃতপক্ষে আপনি কি চাইছেন এটা আপনার সঙ্গী অনুমান করার চেয়ে এসব ইঙ্গিত দেওয়া ভালো, বিশেষ করে প্রাথমিক সম্পর্কে। যেমন- ফুল পাওয়াটা আপনার পছন্দ। অথবা কোনো সিম্পল ডিনারের কথা ভাবতে পারেন। কিন্তু ভালোবাসা দিবসে খরচ করতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। মূল বিষয় হলো, কিভাবে ভালোবাসাকে বিস্তৃত করা যায় সে প্রচেষ্টা করা। সঙ্গী ও সঙ্গিনী উভয়কে মাথায় রাখতে হবে যে অর্থ দিয়ে ভালোবাসাকে মাপা যায় না, কাজেই কিছু না পেলে হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই, অনেকের সামর্থ্য থাকে না বিধায় সঙ্গীর প্রত্যাশানুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে না- ভালোবাসাকে মূল্যায়ন করতে হবে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে।

পাঁচ বছরের বেশি সময় পার করা দম্পতি
পাঁচ বছরের চেয়ে বেশি সময় একসঙ্গে কাটানো দম্পতিদের অনেকে ভালোবাসা দিবসের ওপর আগ্রহ হারাতে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সঙ্গী বা সঙ্গিনীর মধ্যে যে কেউ দিবসটিকে উদযাপন করতে চায় কিনা তা নিয়ে কথা বলা। জাকেরি বলেন, ‘যদি দম্পতিদের কারো কাছে এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে অন্যেরও তা উদযাপন করা প্রয়োজন। আবেগে গদগদ হয়ে সঙ্গীকে বলতে পারেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি অথবা তোমার জন্য আমার জীবনটা অনেক সুন্দর হয়েছে।’

বছরের পর বছর একত্রে থাকার কারণে হয়তো এসব দম্পতির মাঝে ভালোবাসা দিবসের গুরুত্ব কমে গেছে, কিন্তু সঙ্গীর প্রতি নতুন করে আবেগী হওয়ার জন্য এ দিবসটি পারফেক্ট। ইতোমধ্যে হয়তো দম্পতিদের জীবন আরো ব্যস্ত হয়েছে, বাচ্চাকাচ্চা হয়েছে কিংবা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়- এসব কারণে একে অপরের সঙ্গে একঘেয়েমি দূর করার গুরুত্বও বেড়ে গেছে। জাকেরি বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস হচ্ছে একে অপরের কাছে নিজেকে চমৎকারভাবে উপস্থাপনের একটি সুযোগ, একজন আরেকজনকে বলতে পারে যে কেন তিনি তাকে পেয়ে আনন্দিত। এর চেয়ে বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই, কারণ উভয়েই জীবনের একই পৃষ্ঠায় থাকে।’

সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করুন যে তিনি কিভাবে দিবসটিকে উদযাপন করতে চায়। কোনো কোনো দম্পতি হয়তো ভিড় এড়াতে পরেরদিন ডিনার করে কিংবা অন্যকিছু করে- কিন্তু কেউ যদি দিবসটিকেই উদযাপন করতে চায়, তাহলে এমন কিছুর অনুসন্ধান করা ভালো যা দম্পতির উভয়কেই আনন্দ দেয়।

দুশ্চিন্তা করবেন না যে সরাসরি ও স্পষ্ট যোগাযোগ রোমান্স কিংবা সারপ্রাইজকে নষ্ট করবে। জাকেরি বলেন, ‘সঙ্গীকে আপনি কার্ড চান এটা বলার মানে এই নয় যে আপনি সারপ্রাইজ বা কৌতূহলকে ধ্বংস করছেন, কারণ তিনি যে কার্ডটি আপনাকে দেবেন তা চমৎকার হবে। সঙ্গীর কাছ থেকে ফুল চাইলেও ঠিক আছে, কারণ তিনি এটির টাইমিং দিয়ে আপনাকে চমকে দেবেন।’

যারা অবিবাহিত তাদের জন্য এনগেজমেন্ট কিংবা সম্পর্কের পরবর্তী ধাপ নিয়ে কথা বলার জন্য ভালোবাসা দিবস উপযুক্ত সময়।

১০ বছরের বেশি সময় পার করা দম্পতি
এ সময়টাতে ভালোবাসা দিবসের গুরুত্ব তলানিতে চলে যায় কিংবা দিবসটিকে উপেক্ষা করা হয়। এসব দম্পতিদের কেউই আসলে দিবসটিকে উদযাপন করতে চায় না, কিন্তু এটি উদযাপনের গুরুত্ব রয়েছে। নতুন দম্পতিদের মতো এখানেও চাবিকাঠি হচ্ছে, আকর্ষণ তৈরি করা।

যদি আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয় যে কি করা উচিৎ, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন। অতীতে আপনি কেমন অনুভব করেছেন? গত বছরগুলোতে উদযাপনের সময় যা করেছেন তাতে কেমন আনন্দ পেয়েছেন?

থেরাপিস্টরা বলেন যে সম্পর্কের হারিয়ে যাওয়া রঙ ফিরে পেতে যেকোনো সুযোগকে কাজে লাগানো উচিৎ। তাই ভালোবাসা দিবসে সঙ্গীকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়া যায় কিংবা সুখের মুহূর্তগুলো রোমন্থন করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের পাইকসভিলেতে অবস্থিত দ্য ম্যারেজ রিস্টোরেশন প্রজেক্টের স্বত্তাধিকারী রাব্বি শ্লোমো স্ল্যাটকিন একত্রে ভ্রমণ করতে কিংবা প্রিয় স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এমন স্থানে পুনরায় বেড়াতে পরামর্শ দিচ্ছেন। এসব দম্পতিরা ভালোবাসার দিবসের ঐতিহ্য অনুসারে বিভিন্ন ধরনের কার্ডও আদান-প্রদান করতে পারে।

তথ্যসূত্র : শিকাগো ট্রিবিউন

পড়ুন :
* ভ্যালেন্টাইন’স ডে সম্পর্কে পাঁচ তথ্য
* কেন ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন’স ডে?

* দেশে দেশে ভালোবাসা দিবসের প্রথা
* কিউপিড কেন ভালোবাসার প্রতীক?
* ভ্যালেনটাইন’স ডে নিয়ে মজার তথ্য
* ভিন্নভাবে করতে পারেন ভ্যালেন্টাইন’স ডে উদযাপন
* ভালোবাসা দিবসে কোন পোশাকের রঙের কী মানে




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়